পিছনের সিটে বসে বেল্ট? জানেনই না অধিকাংশ আরোহী

কেন্দ্রীয় মোটরযান বিধির ১৩৮ নম্বর ধারায় বলা আছে, গাড়ি চলার সময়ে চালক, তাঁর পাশের আসনে বসা আরোহী এবং সামনের দিকে মুখ করে পিছনের আসনে (ফ্রন্ট ফেসিং রিয়ার সিট) বসা আরোহীকেও সিট বেল্ট বাঁধতে হবে।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৫২
Share:

বে-হুঁশ: পিছনে বসে সিটবেল্ট বাঁধার বালাই নেই পুলিশের গাড়ির আরোহীরও। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

সিট বেল্ট না বাঁধলে জরিমানা ১০০ টাকা!

Advertisement

কেন্দ্রীয় মোটরযান বিধি (সেন্ট্রাল মোটর ভেহিক্‌লস রুল বা সিএমভিআর) অনুযায়ী এমন জরিমানা অনেককেই অনেক সময়ে দিতে হয়। কিন্তু সেই আইন কি শুধুমাত্র গাড়ির চালক ও তাঁর পাশে বসা আরোহীর জন্যই প্রযোজ্য? না কি গাড়ির পিছনের আসনে বসা আরোহীর ক্ষেত্রেও নিয়মটা একই?

কেন্দ্রীয় মোটরযান বিধির ১৩৮ নম্বর ধারায় বলা আছে, গাড়ি চলার সময়ে চালক, তাঁর পাশের আসনে বসা আরোহী এবং সামনের দিকে মুখ করে পিছনের আসনে (ফ্রন্ট ফেসিং রিয়ার সিট) বসা আরোহীকেও সিট বেল্ট বাঁধতে হবে। যদিও রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, আইনে পিছনের সিট বেল্টের বিষয়টি

Advertisement

থাকলেও তা এখনও প্রয়োগ করা হয় না। আর তাই চালক ও পাশের আরোহীর সিট বেল্ট না থাকলেই শুধু জরিমানা করে পুলিশ। পিছনের সিট বেল্ট বাঁধা হল কি না, তা দেখার বা জরিমানার চল নেই এ রাজ্যে।

কিন্তু শহর হোক বা শহরতলি, সাধারণ মানুষ কি আদৌ জানেন ‘সিএমভিআর’-এর এমন বিধি কিংবা পিছনের আসনের সিট বেল্টের প্রয়োজনীয়তা? সম্প্রতি নিউ টাউনে গাড়ি উল্টে তিন বন্ধুর মৃত্যুর ঘটনার পরে এই প্রশ্নই ফের উঠে এসেছে। কারণ, ওই দুর্ঘটনার পরে প্রাথমিক তদন্তে দেখা গিয়েছে, পিছনের আসনে বসা তিন জনের কারও সিট বেল্ট বাঁধা ছিল না।

এক পুলিশ আধিকারিকের সহাস্য মন্তব্য, ‘‘সামনের সিট বেল্ট না বেঁধে ধরা পড়লেই চেঁচামেচি জুড়ে দেন অনেকে। বিভিন্ন জায়গায় ফোন করতে শুরু করেন। অনেকে আবার অসুস্থতার অজুহাতও দেন। এই যেখানে অবস্থা, সেখানে পিছনের সিট বেল্ট বাঁধার কথা তো ভাবাই যায় না!’’ তবে পুলিশকর্তাদের অনেকেই মনে করেন, গাড়ির সামনের আসনই হোক বা পিছনের, নিজের সুরক্ষার জন্যই সিট বেল্ট বাঁধাটা জরুরি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) তাদের করা একটি সমীক্ষার রিপোর্টে জানিয়েছিল, এ দেশে গাড়ির চালক ও আরোহীদের ৭৫ শতাংশই কোনও রকম সিট বেল্ট পরেন না। আর পিছনের সিট বেল্ট পরেন না ৯৬ শতাংশ মানুষ!

রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘আরোহীর নিজের সুরক্ষার জন্যই সিট বেল্ট বাঁধতে বলা হয়। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই এ বিষয়ে সচেতন নন। শুধু জরিমানা করে এটা বন্ধ করা যাবে না। এর জন্য নিজেদেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।’’ আবার কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্র্যাফিক) অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, ‘‘এখানে শুধু চালক ও সামনের সিটে বসা যাত্রীদের ক্ষেত্রেই সিট বেল্ট আছে কি না, দেখা হয়। তবে পিছনের সিট বেল্ট আরোহীর নিজের সুরক্ষার জন্যই বাঁধা উচিত। অনেক সময়ে আমরা সেটাও পরীক্ষা করে দেখে লোকজনকে সচেতন করার চেষ্টা করি।’’

গাড়ি প্রস্তুতকারী বিভিন্ন সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৪ সাল নাগাদ প্রতিটি গাড়িতে পিছনের আসনেও বেল্টের ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক হয়। সেই মতো গাড়িতে সামনের মতো পিছনেও বেল্টের ব্যবস্থা রাখতে শুরু করে গাড়ি সংস্থাগুলি। কোনও ভাবে গাড়িতে ধাক্কা লাগলে তার অভিঘাতে যাতে আরোহী ছিটকে গিয়ে বড়সড় চোট না পান, তার জন্যই এই সিট বেল্টের ব্যবস্থা। হলুদ ট্যাক্সি বা পুরনো গাড়িতে পিছনে সিট বেল্ট না থাকলেও নতুন সব গাড়িতেই এই ব্যবস্থা রয়েছে।

যদিও আরোহীদের একাংশ জানাচ্ছেন, চালকদের একটা বড় অংশই বহু সময়ে সিট বেল্টটিকে পুলিশের হাত থেকে বাঁচার রক্ষাকবচ হিসেবে ওড়নার মতো বুকের উপরে ফেলে রাখেন। অনেক অ্যাপ-ক্যাবে আবার পিছনের আসনে সিট বেল্ট খুঁজেই পাওয়া যায় না। কোথাও আবার সিট বেল্ট আকারে অনেক ছোট হয়। যা অনেক সময়ে ঠিক মতো বাঁধা যায় না।

পুলিশ আধিকারিকদের একাংশের কথায়, ‘‘অনেক ছোট গাড়ি কিংবা অ্যাপ-ক্যাবের পিছনে দু’টি সিট বেল্ট থাকলেও তাতে বসেন তিন জন। সে ক্ষেত্রে মাঝের জন কী ভাবে বেল্ট বাঁধবেন?’’ রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক কর্তার মতে, পিছনের আসনে দু’জনের বেশি যাত্রীর বসার সুযোগ থাকলেও বেল্ট দু’টি থাকে। সেটাও প্রস্তুতকারী সংস্থার দেখা উচিত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement