Partha Chatterjee

আবেদন জানিয়েও জেলের পুজোয় ঠাঁই হয়নি পার্থের, নতুন শাড়ি পরে অর্পিতা মাতলেন আয়োজনে

নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ষষ্ঠীতে জেলে দুর্গাপুজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। জেল-কর্তৃপক্ষ আবেদন খারিজ করে দেন।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২২ ০৭:২২
Share:

ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় সেলের ভিতরে লোহার খাটের উপরে বিমর্ষ পার্থ মাথা নিচু করে বসে ছিলেন। ফাইল ছবি।

লৌহকপাটের ভিতরে আর বাইরে নিয়মনীতির আকাশপাতাল তফাত। তাই শারদোৎসবে নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের পুজো মণ্ডপ জুড়ে থাকতেন যিনি, প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দিদশায় তাঁর ওয়ার্ডের ঠিক পিছনেই জেলের পুজোয় তাঁর উপস্থিত থাকার আবেদনটুকুও গ্রাহ্য হয় না।

Advertisement

স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় রবিবার, মহাষষ্ঠীতে জেলে দুর্গাপুজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু জেল-কর্তৃপক্ষ তাঁর সেই আবেদন খারিজ করে দেন। কারারক্ষীদের একাংশের কথায়, ষষ্ঠীর দুপুরে খারিজ হয়ে যায় পার্থের আবেদন আর বিকেলে খবর আসে, পার্থের পাড়ার পুজো এ বছর ‘বিশ্ব বাংলা’ পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। জেল সূত্রের খবর, ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় সেলের ভিতরে লোহার খাটের উপরে বিমর্ষ পার্থ মাথা নিচু করে বসে ছিলেন। পুরো মহাসপ্তমীই তাঁর আস্ত একটা মনখারাপের দিন। রাতেও খাবার খেয়ে শুয়ে পড়েন তাড়াতাড়ি।

আলিপুর জেলে পার্থের বান্ধবী এবং একই মামলায় অভিযুক্ত অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে ছবিটা বিপরীত। দিন তিনেক আগে এক আইনজীবী এবং এক আত্মীয় চারটি নতুন শাড়ি আর কিছু পোশাক দিয়ে গিয়েছেন তাঁকে। ওই শাড়ি পরেই পুজোর আয়োজনে মেতেছেন অর্পিতা। ষষ্ঠীর দুপুরে নতুন শাড়ি পরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরে সহ-বন্দিদের সঙ্গে পুজোর আয়োজনে হাত লাগান তিনি। অর্পিতার পাহারায় থাকা কারারক্ষীদের একাংশ জানান, দিন পনেরো ধরেই মনখারাপ বলে কান্নাকাটি করছিলেন ওই বন্দিনি। অর্পিতা জানিয়েছিলেন, বেলঘরিয়ায় পাড়ার পুজোর মা দুর্গা আর অসুস্থ মাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে তাঁর।

Advertisement

ষষ্ঠীতে অবশ্য অর্পিতার মুখের উপর থেকে মনখারাপের ধূসরতা অনেকটা মুছে গিয়েছে। ষষ্ঠীর পরে রবিবার সপ্তমীতেও নতুন শাড়ি পরে পুজোর আয়োজনে সহবন্দিদের সঙ্গে হাত লাগিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর ধরে পার্থের নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের পুজোর ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ ছিলেন অর্পিতা। যদিও এ বার নাকতলার পুজো নিয়ে বিশেষ উচ্চবাচ্য করতে শোনা যায়নি তাঁকে। সহবন্দিদের জানিয়েছেন, তাঁর পাড়ার পুজোর অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। এখন তাঁর অনুপস্থিতিতে কী ভাবে কী হচ্ছে, জানতে পারছেন না।

প্রেসিডেন্সি জেলের ‘পহেলা বাইশ’ ওয়ার্ডে রয়েছেন পার্থ। ওই ওয়ার্ডের পিছনেই ক্লাবঘরে দুর্গাপুজো করছেন জেল-কর্তৃপক্ষ। দণ্ডিত ও বিচারাধীন বন্দিদের একাংশ কয়েক এক মাস ধরে মণ্ডপ তৈরি করেছেন। ষষ্ঠীর দুপুর থেকেই জেলের মধ্যে দুর্গাপুজোর সাজো সাজো রব। দুপুরের পরেই যে কারাকর্তারা পুজোর উদ্বোধনে আসছেন, সেই বার্তা কানে গিয়েছিল পার্থের। তার পরেই সেই পুজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকতে চেয়ে আবেদন করেন তিনি।

জেল-কর্তৃপক্ষের একাংশ জানান, এমনিতেই পার্থের উপরে অধিকাংশ বন্দি ক্ষুব্ধ। তাঁকে দেখতে পেলে সহবন্দিরা কটূক্তিও করছেন বলে জেল সূত্রের খবর। সমাজের উঁচু তলার, প্রভাবশালী মানুষদের উপরে একটা সহজাত ক্ষোভ থাকে জেলবন্দিদের। পার্থকে হাতের সামনে পেয়ে তাই নানা ভাবে সেই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন তাঁরা। ইদানীং এটা যেন একটা ‘রুটিন’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আদালতের নির্দেশ, পার্থকে তাঁর সেলের বাইরে বার করলে অন্য বন্দিদের লক-আপের ভিতরে রাখতে হবে। জেলকর্তাদের বক্তব্য, জেলের পুজো মূলত বন্দিদের জন্যই। ফলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হোক বা পুজোর অন্য অনুষ্ঠান, কোনও সময়েই পার্থকে মণ্ডপে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে বিজয়া দশমীর আগে সুযোগ বুঝে কোনও এক সময় পার্থকে এক বার পুজো মণ্ডপে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলের কর্তারা।

কারারক্ষীদের একাংশের কথায়, দশ বছর ধরে পার্থ প্রভাবশালী মন্ত্রী ও দলীয় নেতা ছিলেন। জাঁকজমক করে নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের পুজো করতেন। আচমকা পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। সহজে সেই বদল মেনে নিতে পারছেন না পার্থ। গম্ভীর মুখে সেলের মধ্যে বসে আছেন। কানে আসছে ঢাকের আওয়াজ।

পাশেই ‘তেইশ-চুয়াল্লিশ’ ওয়ার্ড। সেখানে রয়েছেন এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে ধৃত কমিশনের প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সচিব অশোক সাহা, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় এবং উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্য। কর্তব্যরত কারারক্ষীরা বলেন, ‘‘সেলের লক-আপ খোলার পরে সকলে একসঙ্গে গল্পগুজব করেন ওঁরা। কিন্তু পার্থের সেলের ধারেকাছে যান না। অন্য বন্দিদের সঙ্গেও বিশেষ কথাবার্তা বলেন না। নিজেদের মধ্যেই থাকেন। সপ্তমীর সকাল থেকে ওঁদের সকলেই ছিলেন জেলের পুজো মণ্ডপে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement