অর্পিতা মুখোপাধ্যায় এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র ।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের সম্পর্ক ছিল ‘কাকা-ভাইঝি’র মতো। দু’জনের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্কও ছিল। মঙ্গলবার আদালতে এমনটাই জানালেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থের আইনজীবী।
মঙ্গলবার পার্থের জামিনের মামলার শুনানি ছিল কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে। শুনানি চলাকালীন পার্থের আইনজীবী আদালতে জানান, এমনটা নয় যে অর্পিতাকে চিনতেন না তাঁর মক্কেল। ব্যবসায়িক সূত্রেই তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। কিন্তু এর বাইরে অর্পিতা কী করেন, তা তাঁর মক্কেলের জানা ছিল না। অর্পিতার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল বলেই যে পার্থ তাঁর কাছ থেকে সুবিধাভোগ করেছেন, তেমনটাও জোর করে বলা যায় না বলে আদালতে ওই আইনজীবী দাবি করেছেন।
পার্থের আইনজীবী আদালতে এ-ও জানিয়েছেন, অর্পিতার বাড়ি এবং অন্যান্য সংস্থা থেকে যে সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তা নিজের বলে দাবি করেননি তাঁর মক্কেল। ভবিষ্যতেও করবেন না। ‘অপা’ নামে যে দু’টি সম্পত্তি নিয়ে এত অভিযোগ, তা-ও পার্থ শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার আগে কেনা বলেই আদালতে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী।
এর পর পার্থ এবং অর্পিতার সম্পর্ক স্পষ্ট করতে বলেন বিচারপতি ঘোষ। পার্থের আইনজীবী জানান, দু’জনের মধ্যে কাকা-ভাইঝির সম্পর্ক ছিল। অর্পিতার জীবন বিমার কাগজপত্রেও তেমনটা লেখা রয়েছে বলে পার্থের আইনজীবী আদালতে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, অর্পিতার কাছ থেকে বিমা সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি নথি উদ্ধার হয়েছে। সেই নথিতে অর্পিতার ‘নমিনি’ হিসাবে পার্থের নাম রয়েছে। সম্পর্কের জায়গায় পার্থকে ‘কাকু’ হিসাবে দেখানো হয়েছে।
পার্থের আইনজীবীর দাবি, তাঁর মক্কেলের বিপক্ষে যাওয়ার মতো সে ভাবে কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি ইডি। আদালতে আইনজীবী জানিয়েছেন, পার্থের বয়স ৭২ বছর। গত এক বছর সাত মাস ধরে তিনি জেলে। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে তেমন কোনও প্রমাণ নেই। পার্থের আইনজীবী এ-ও দাবি করেন, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর বাড়ি থেকে কয়েকটি সংস্থার নাম পাওয়া গেলেও কোনও টাকা বা সোনা পাওয়া যায়নি। অর্পিতার বাড়ি থেকে পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু গ্রেফতারের কারণে ইডি অসত্য অভিযোগ করছে বলেও তিনি দাবি করেছেন। বুধবার আবার এই মামলার শুনানি রয়েছে।
শিক্ষায় নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে গত বছরের ২২ জুলাই দক্ষিণ কলকাতার নাকতলায় পার্থের বাড়িতে অভিযান চালায় ইডি। দীর্ঘ তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। পার্থের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত অর্পিতার টালিগঞ্জ ও বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে নগদ প্রায় ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা। গ্রেফতার করা হয় অর্পিতাকেও। রাজ্যে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি নগদ টাকা উদ্ধারের ঘটনা শোরগোল ফেলে দিয়েছিল। পার্থ এবং অর্পিতার সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। তবে পার্থের আইনজীবী বুধবার আদালতে জানালেন, ব্যবসায়িক সম্পর্কই ছিল দু’জনের মধ্যে।