পার্থকে বলতে শোনা যায় কুড়মি সমস্যার কথা। এমনকি, মমতার আন্দোলনে তাঁর সঙ্গী হওয়ার পুরনো কথাও। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
কুড়মি সমস্যার সমাধান হবে কী ভাবে— রাজ্যকে তা নিয়ে পরামর্শ দিলেন জেলবন্দি প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সতর্ক করেছেন তিনি। পার্থ বলেছেন, ‘‘কুড়মিদের উপর দমন-পীড়নের নীতি নেওয়া সম্ভবত ঠিক হবে না।’’ পার্থের মতে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান হতে পারে।
তৃণমূলে থাকাকালীন দীর্ঘ দিন ঝাড়গ্রামের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন পার্থ। কুড়মিরা এই ঝাড়গ্রামেরই জনজাতি। সম্ভবত সেই সূত্রেই তাঁর অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান সরকারের কাজে লাগতে পারে বলে মনে করেছেন পার্থ। কারণ মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, ‘‘কুড়মিদের সঙ্গে জঙ্গলমহলে একটা আলাপ-আলোচনা করুন। দমন-পীড়ন নীতি অবলম্বন করা বোধ হয় ঠিক হবে না।’’
শুক্রবারই ঝাড়গ্রামে অভিষেকের কনভয়ের একটি গাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে কুড়মিদের বিরুদ্ধে। সেই হামলায় আক্রান্ত হন রাজ্যের মন্ত্রী তথা আদিবাসী নেত্রী বিরবাহা হাঁসদা। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে কুড়মিদের ক্লিনচিট দিলেও পরে কুড়মি নেতা রাজেশ মাহাতো-সহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়। পেশায় স্কুলশিক্ষক রাজেশকে পূর্ব মেদিনীপুরের স্কুল থেকে কোচবিহারে বদলির নির্দেশ আসে পশ্চিমবঙ্গ সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে। পরে রাজেশ-সহ ৮ জনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। এর পরই রাজ্য সরকারের সঙ্গে কুড়মিদের রাজনৈতিক টানাপড়েন শুরু হয়েছে।
রাজেশদের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে কুড়মি সমাজের একাংশ। আবার অভিষেকের কনভয়ের গাড়িতে হামলার ঘটনায় রাজ্য সরকার যে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল, তারও বিরোধিতা করেছেন, রাজেশ-সহ অন্য কুড়মি নেতাদের একাংশ। তাঁরা পাল্টা সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে কুড়মিদের নিয়ে এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় সরকার অস্বস্তিতে পড়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক কারবারিরা। এই পরিস্থিতিতেই এল কুড়মি সমস্যার সমাধানে পার্থের ‘টোটকা’।
শনিবার আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে হাজির করানো হয়েছিল পার্থকে। আদালত থেকে বেরোনোর সময় সাংবাদিকেরা ঘিরে ধরেন তাঁকে। প্রাক্তন মন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে প্রশ্ন করেন। কারণ, তার আগেই আদালত কক্ষে বিচারককে নিজের অসুস্থতার কথা জানিয়েছিলেন পার্থ। কিন্তু সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পার্থ আর অসুস্থতার কথা বলেননি। বদলে পার্থকে বলতে শোনা যায় কুড়মি সমস্যার কথা। এমনকি, মমতার আন্দোলনে তাঁর সঙ্গী হওয়ার পুরনো কথাও। পার্থ বলেন, ‘‘যে হেতু আমি আন্দোলনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় ২০০১ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ছিলাম, এমনকি, ২০২২ এর ২১ জুলাইও সঞ্চালনা করেছিলাম... ।’’ তার পরই অবশ্য পার্থ জানিয়েছেন, কুড়মি সমস্যার সমাধান নিয়ে তিনি মমতা এবং অভিষেক উভয়ের প্রতিই আস্থাশীল। পার্থ বলেন, ‘‘আমি তাঁর (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এর আগেই নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী এবং আমার প্রিয় নেত্রী বলে সম্বোধন করেন পার্থ) প্রতি আস্থাশীল, অভিষেকের প্রতি আস্থাশীল যে, দমন-পীড়ন নীতির বদলে আলাপ-আলোচনার মধ্যে দিয়েই যেন তাঁরা এই সমস্যার সমাধান করবেন।’’
জেলবন্দি হওয়ার পর যখনই দল প্রসঙ্গে কথা উঠেছে, তখনই দলের পক্ষে কথা বলেছেন পার্থ। মঙ্গলবার তার অন্যথা হয়নি। তবে এই প্রথম গ্রেফতার হওয়ার পর সরাসরি মমতা এবং অভিষেককে যেচে পরামর্শ দিলেন পার্থ। তবে পরামর্শের পাশাপাশি মঙ্গলবার মমতার কাছে একটি অনুরোধও পেশ করেছেন পার্থ। তৃণমূলের প্রাক্তন মহাসচিব বলেছেন, ‘‘আমি বলতে চাই যে আমার মাননীয় নেত্রী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তিনি অন্তত কারারক্ষীদের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অন্তর্গত করুন। এই বিষয়টি বিরোধী দলনেতা হিসাবে আমি বিধানসভায় তুলেছিলাম। আমি চাই আমার প্রিয় নেত্রী কারারক্ষীদের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অন্তর্ভুক্ত করুন।’’
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা না পাওয়ার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়েছিল পার্থকে। জবাবে পার্থ বলেন, ‘‘প্রদীপের তলায় অন্ধকার।’’ কিন্তু এই সরকারে কি তাঁর আস্থা আছে এ প্রশ্নের জবাবে দু’বার পার্থকে বলতে শোনা যায়, ‘‘হ্যাঁ হ্যাঁ, এই সরকারে আমার আস্থা আছে।’’