ফাইল ছবি
দেশে করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্টের তিন গুণ গতিতে ছড়াচ্ছে ওমিক্রন। আজ সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে এই হুঁশিয়ারি দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ। ভারতে ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা আজই দু’শো পেরিয়েছে। বড়দিন ও নববর্ষের জমায়েত থেকে সংক্রমণ এড়াতে ইতিমধ্যেই কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে কর্নাটক। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে গোটা বড়দিনের ছুটিতেই নৈশ কার্ফু শিথিল করেছে রাজ্য সরকার। ফলে ওই সময়ে পার্ক স্ট্রিট-সহ মহানগরীর রাস্তার ভিড়ে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা পুরোমাত্রায় রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব আজ রাজ্যগুলিকে ওমিক্রন প্রতিরোধে ‘ওয়ার রুম’ খোলার পরামর্শ দিয়ে জানিয়েছেন, ওমিক্রনের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ডেল্টা ভেরিয়েন্টও সক্রিয় রয়েছে। তাই ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি আঁচ করে তথ্য বিশ্লেষণ এবং তার ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুবিধার্থে এ ক্ষেত্রে দু’টি মাত্রা বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্র। প্রথমত, এক সপ্তাহে নমুনা পজ়িটিভ হওয়ার হার ১০% বা তার বেশি হওয়া। দ্বিতীয়ত, আইসিইউ বা অক্সিজেন-যুক্ত শয্যার ৪০% অথবা তার বেশি ভর্তি হয়ে যাওয়া। কোনও জেলায় এই দু’টির মধ্যে কোনও একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেই কন্টেনমেন্ট-সহ অন্যান্য কড়াকড়ি বলবৎ করতে বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব।
সেই সঙ্গে রয়েছে নৈশ কার্ফু বলবৎ করা, বড় জমায়েত এড়ানো, অফিস এবং গণ-পরিবহণে ভিড় নিয়ন্ত্রণ, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা, ওমিক্রন রুখতে ‘ক্লাস্টার’ ধরে পরীক্ষা, কোভিড পজ়িটিভদের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন তাঁদের খুঁজে বার করা, ইত্যাদি পরামর্শ। স্বাস্থ্য পরিকাঠামো জোরদার করতে রাজ্যগুলিকে আপৎকালীন তহবিল কাজে লাগাতেও বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব। বস্তুত, আসন্ন বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষের উৎসবে রাশ টানার কথা আজই ঘোষণা করেছে কর্নাটক সরকার। ওই সময়ে নৈশ কার্ফু জারি করা হয়েছে। তবে রেস্তরাঁ ও ক্লাবগুলি শুধুমাত্র টিকাকরণ সম্পূর্ণ হওয়া ব্যক্তিদের ৫০% উপস্থিতিতে বড়দিন-নববর্ষের অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারবে। ডিজে বাজানো যাবে না।
অনেকের বক্তব্য, কর্নাটক ব্যবস্থা নিলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত নৈশ কার্ফু শিথিল করে রেখেছে। গত কালই পার্ক স্ট্রিটে বড়দিন উৎসবের উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বছরও পার্ক স্ট্রিটে লাগামছাড়া মাস্কহীন ভিড় দেখা গিয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছে, ওমিক্রন সংক্রমণের আবহেও কি সেই উচ্ছৃঙ্খল ভিড়ই আরও এক বার দেখতে চলেছে কলকাতা? বস্তুত, রাজ্যগুলিকে পাঠানো চিঠিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব স্পষ্টই বলেছেন, ডেল্টা ভেরিয়েন্টের চেয়ে ওমিক্রনের সংক্রমণ ক্ষমতা তিন গুণ বেশি বলে এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে দেখা গিয়েছে।
আজ কেন্দ্র জানিয়েছিল, সারা দেশে পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১২টি রাজ্যে ওমিক্রন আক্রান্তের মোট সংখ্যা হয়েছে ২০০। দিল্লি এবং মহারাষ্ট্র তখন যুগ্ম ভাবে এই তালিকার শীর্ষে ছিল (৫৪)। সন্ধ্যায় মহারাষ্ট্রে আরও ১১ জনের নমুনায় ওমিক্রন মেলায় ওই রাজ্যে ‘উদ্বেগজনক’ স্ট্রেনটিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬৫।
এ দিকে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন বিএসপি সাংসদ দানিশ আলি। সোমবার পর্যন্ত লোকসভায় উপস্থিত ছিলেন তিনি। বিরোধী শিবিরের নেতা-সাংসদদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে গল্প করতে দেখা গিয়েছে দানিশকে। তাঁর সংক্রমণের খবরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বিরোধী শিবিরে।