ছবি সংগৃহীত।
ভাগীরথী তীরের শারদীয় উৎসব ইউনেস্কোর স্বীকৃতির অনেক আগে থেকেই বিশ্বজনীন। কুমোরটুলির প্রতিমা থেকে আস্ত মণ্ডপের পৃথিবী পরিক্রমার সঙ্গে সঙ্গে পুজোর আনুষঙ্গিক নানা ধরনের উপকরণ আদানপ্রদানে উৎসবের সেই ব্যাপ্তি কত বিশাল, সুন্দরবনে তৈরি বিভিন্ন সামগ্রীর নেদারল্যান্ডস সফর তার আভাস দিচ্ছে। নেদারল্যান্ডসের দুর্গোৎসবে এ বার মহাপুজোর ভোগ খাওয়া হবে সুন্দরবন থেকে যাওয়া কাগজের কাপ, বাটি আর প্লেটে।
নেদারল্যান্ডসের উত্তর ব্রাবান্ট প্রদেশের আইন্দহোভেন শারদোৎসবে ব্যবহার করা হবে সুন্দরবনের বাটি, কাপ, প্লেট। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মহিলাদের হাতে তৈরি প্রায় ৩৫০০টি প্লেট, কাপ ও বাটির সেট ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে সেখানে।
কলকাতার ‘হেরিটেজ’ বা ঐতিহ্য নিয়ে কর্মরত একটি সংস্থা উৎসবে এই দেওয়া-নেওয়ার মূল উদ্যোক্তা। ওই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সৌরভ মুখোপাধ্যায় জানান, ২০২১ সালের অগস্টে তাঁরা বাসন্তীর ঝড়খালি এবং গোসাবা ব্লকের বালি দ্বীপে কাগজের প্লেট, বাটি উৎপাদন ইউনিট চালু করেন। কলকাতা থেকে ‘রিসাইকেলড’ বা পুনর্ব্যবহার্য কাগজ নিয়ে গিয়ে শুরু হয় উৎপাদন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বন বিভাগের সহযোগিতায় ওই এলাকার চল্লিশ জন মহিলাকে নিয়ে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। এখন এই প্রকল্পের দু’টি ইউনিটে ১৪০ জনেরও বেশি মহিলা কাজ করছেন।
সৌরভ জানান, এই উদ্যোগের সুবাদে শুধু যে ওই মহিলাদের আয়ের পথ খুলে গিয়েছে, তা নয়, সেই সঙ্গে ম্যানগ্রোভ বদ্বীপের বাস্তুতন্ত্র বাঁচাতে কার্যকর ভূমিকা নিয়েছে এই প্রকল্প। থার্মোকল, প্লাস্টিকের ব্যবহারের বিরূপ প্রভাব কমছে। স্থানীয় হোটেল, হোমস্টে, পর্যটকবাহী জাহাজগুলিই এই প্রকল্পে উৎপাদিত জিনিসপত্রের মূল ক্রেতা। এ বার সেই প্রকল্পের কাগজের কাপ, প্লেট, বাটি পৌঁছে গেল নেদারল্যান্ডসের শারদীয় উৎসবেও।
ওই পুজোয় যাতে সুন্দরবনের মহিলাদের তৈরি কাগজের বাটি, প্লেট, কাপ যায়, সেই বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে তিন বাঙালির নেতৃত্বাধীন একটি সংগঠনও। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা ভারত ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের কাজ করে। সৌরভদের সংগঠনের সঙ্গে একযোগে সুন্দরবনের বেশ কিছু প্রকল্পে কাজ করে চলেছে তারা। ওই সংগঠনের সম্পাদিকা শতরূপা বসু রায় জানান, সৌরভদের সংগঠনের সঙ্গে সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ চারা রোপণ, পুকুর সংস্কার ও শুদ্ধকরণের মতো বেশ কিছু প্রকল্পে যুক্ত হয়েছেন তাঁরা। আইন্দহোভেনের পুজোয় যাতে সুন্দরবনের কাগজের কাপ, প্লেট, বাটির ভূমিকা থাকে, সেই উদ্যোগ শতরূপাদের সংগঠনেরই।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার মিলন মণ্ডল জানান, সুন্দরবনের বাসিন্দারা জঙ্গলে না-গিয়েই যাতে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন, সেই জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নেদারল্যান্ডস থেকে আসা কাপ-বাটি-প্লেটের বরাত গ্রামবাসীদের একেবারে অন্য রকম একটা উৎসাহ জোগাচ্ছে। সুন্দরবনেও কাপ, বাটি ও প্লেটের ব্যবহার প্লাস্টিক, থার্মোকল বর্জ্য কমাতে সাহায্য করবে। এটা সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রের পক্ষে খুব বড় আশীর্বাদ।