বিপত্তি: রেলগেটের আগে এখান থেকেই সমস্যার শুরু। নিজস্ব চিত্র।
বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াল শিয়ালদহ থেকে নিউ আলিপুরদুয়ারগামী পদাতিক এক্সপ্রেস। একই সঙ্গে ফিরল দোমহানীতে বিকানের এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হওয়ার আতঙ্ক-স্মৃতিও।
বিকানের এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনের ট্রাকশন মোটরের যন্ত্রাংশ খুলে লাইনে ঘষা লাগার জেরে আগুনের ফুলকি বার হতে শুরু করেছিল ইঞ্জিনের তলা থেকে। সেটি প্রথম দেখেছিলেন ট্রেন রানিনগর স্টেশন ছাড়ার পরে রেলপথে প্রথম পড়া রেলগেটের কর্মী। ঘটনাচক্রে মঙ্গলবার পদাতিক এক্সপ্রেসের একটি কামরার নীচ থেকে গলগল করে ধোঁয়া বার হতে দেখেন সেই একই রেলগেটের দায়িত্বে থাকা কর্মী। রেলগেট থেকে খবর দেওয়া হয় ইঞ্জিনচালক এবং পরবর্তী স্টেশনে।
জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে ট্রেনের স্টপ ছিল। সেখানে পরীক্ষা করে দেখা যায়, একটি স্লিপার কোচের ‘ব্রেক বাইন্ডিং’ হয়ে গিয়েছে। এর ফলে চাকা ঠিকঠাক গড়াতে পারে না। তার ফলে ঘর্ষণে ধোঁয়া বার হতে থাকে। জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে ব্রেকটিকে ‘রিলিজ’ করে দেওয়া হয় এবং নিউ আলিপুরদুয়ার পর্যন্ত ধীর গতিতে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয় চালককে। রেল সূত্রের দাবি, তার পরে নির্বিঘ্নেই পদাতিক এক্সপ্রেস নিউ আলিপুরদুয়ার পৌঁছয়।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে বলেন, ‘‘পদাতিকের ব্রেকে সমস্যা হয়। ধোঁয়া বেরতে থাকে। রেলগেটের কর্মীরা তা দেখে খবর দেন। যদি ওঁরা না দেখতে পেতেন, কী যে ঘটে যেতে পারত, কেউ জানে না!’’ এই কৃতিত্ব রেলের গেটম্যানদেরই দিয়েছেন মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক। তিনি বলেন, ‘‘রেলগেটের কর্মীরা এখন এতটাই প্রশিক্ষিত এবং সজাগ যে, এ সব ত্রুটি ওঁরা নজরে রাখেন। ওঁদের প্রশংসিত করা হবে।’’
পদাতিক এক্সপ্রেসে এলএইচবি কোচ ব্যবহার করা হয়। আধুনিক এই কোচে কোথাও কোনও সমস্যা হলে ইঞ্জিনের চালকের কাছে সর্তকবার্তা পৌঁছে যায়। পদাতিক এক্সপ্রেসের স্লিপারের কামরায় সমস্যা শুরু হতেই সতর্কবার্তা যায় ইঞ্জিনচালকের কাছে। ততক্ষণে ধোঁয়া দেখে রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছেন ১৬ নম্বর গেটের রেলকর্মী। জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে এ দিন অন্তত ২৫ মিনিট পদাতিক এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে ছিল। জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যানেজার সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘রেলের বাস্তুকারেরা এসে পরীক্ষা করেন। ব্রেকে সমস্যা ছিল। সে সমস্যা মিটিয়ে ট্রেন ছাড়া হয়।’’
গত জানুয়ারি মাসে বিকানের এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে দোমহানীতে। সে দিনও দুর্ঘটনার বহু আগে থেকে ট্রেনের কামরার নীচে আগুনের ফুলকি দেখা গেলেও রেল সূত্রের দাবি, খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হয়নি। তার জেরেই বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে, প্রাণহানিও হয়। পদাতিক এক্সপ্রেস সে আশঙ্কা এড়াল মঙ্গলবার।