পঞ্চায়েত নির্বাচনে হাড্ডাহাড়ি লড়াইয়ের ইঙ্গিত রয়েছে। —ফাইল চিত্র।
বিরোধীদের দাবি, রাজ্যে অন্তত চার থেকে পাঁচটি জেলা পরিষদে ‘হাড্ডাহাড্ডি’ লড়াই হবে। আর বিরোধীরা কিছু জায়গায় ‘অশান্তি’ করার চেষ্টা করবে জানিয়েও শাসক তৃণমূল মনে করছে, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের মতো এ বারেও সবক’টি জেলা পরিষদই তারা দখল করবে।
শাসক এবং বিরোধী পক্ষের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের ভিত্তিতে যা দেখা যাচ্ছে, তা হল— উত্তরবঙ্গে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এবং জলপাইগুড়িতে জেলা পরিষদে শাসক-বিরোধীর টক্কর হওয়ার সম্ভাবনা। আবার দক্ষিণবঙ্গে মুর্শিদাবাদ, পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং পুরুলিয়ায় বিরোধীরা শাসক শিবিরের সঙ্গে জেলা পরিষদে পাল্লা টানতে তৈরি। অধুনা রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি ২০১৮ সালে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে ৬,০০০-এর মতো আসনে জিতেছিল। এ বারে তাদের লক্ষ্য ত্রিস্তরে অন্তত ১৫,০০০ আসনে জয়। যার উপর ভিত্তি করে তারা আগামী বছরের লোকসভা ভোটের জন্য কৌশল তৈরি করতে পারবে। কিছু জেলা পরিষদ আসন পাওয়ার আশা করছে কংগ্রেস-বাম জোটও। তারা মনে করছে, মুর্শিদাবাদ এবং পুরুলিয়ায় তাদের ফল ভাল হবে।
এ বার রাজ্যের মোট ২২টি জেলায় পঞ্চায়েত নির্বাচন হলেও জেলা পরিষদ স্তরের ভোট হচ্ছে ২০টিতে। দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলায় পঞ্চায়েত ভোট হচ্ছে দু’টি স্তরে— গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে। কারণ, পাহাড়ে জেলা পরিষদের দায়িত্ব ও ক্ষমতা পালন করে ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ)। ওই ‘স্বশাসিত’ সংস্থার পৃথক নির্বাচন হয়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যের ২০টি জেলায় জেলা পরিষদের মোট আসনসংখ্যা ৯২৮। কিন্তু ভোট হচ্ছে ৯১২টিতে। কারণ, শাসক তৃণমূলের প্রার্থীরা ১৬টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছেন। কোচবিহারে ১টি, উত্তর দিনাজপুরে ৩টি, বীরভূমে ১টি, উত্তর ২৪ পরগনায় ৩টি এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায়র ৮টি আসনে ভোটের আগেই বিনা লড়াইয়ে জিতেছে তৃণমূল। বাকি ৯১২টি আসনের সবক’টিতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে তারা।
বিজেপি লড়ছে ৮৯৭টি জেলা পরিষদ আসনে। সিপিএম (৭৪৭), ফরওয়ার্ড ব্লক (৫৩)-সহ বিভিন্ন বাম দলের প্রার্থীরাও জেলা পরিষদ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে ৬৪৪টিতে। অর্থাৎ, সে অর্থে অধিকাংশ জেলা পরিষদ আসনেই বাম এবং কংগ্রেসের সমঝোতা হয়নি।
ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটে জেলা পরিষদের ভোটই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ‘রাজনৈতিক’। জেলার নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব অনেকাংশেই নির্ভর করে জেলা পরিষদ দখলের উপরেই। গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির ভোটে প্রতীকের থেকেও অনেক সময়ই ‘প্রার্থী’ বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। কিন্তু ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের উচ্চতম স্তরে তেমনটা প্রায় ঘটেই না। ফলে স্থানীয় ক্ষোভ বা ‘গোঁজ’ প্রার্থীর ‘ভূমিকা’র চেয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক পরিস্থিতিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদে মোট আসনসংখ্যা ছিল ৮২৫। তার মধ্যে ২০৩টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে নিয়েছিল শাসক দল। ভোটের আগেই বীরভূম, বাঁকুড়া এবং মুর্শিদাবাদের মতো জেলা পরিষদের দখল নিয়েছিল তারা। সার্বিক ভাবে তৃণমূল জিতেছিল ৭৯৪টি আসনে। বিরোধীদের মধ্যে বিজেপি ২২, কংগ্রেস ৬, বামেরা ১ এবং নির্দল প্রার্থীরা ২টি জেলা পরিষদ আসনে জিতেছিলেন।
বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, ২০১৮ সালে শাসক দলের ‘সন্ত্রাস’ করে বিপুল জয় পেয়েছিল। কিন্তু এ বার অধিকাংশ আসনে ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ হবে। তবে সেই সঙ্গে ভোটের দিন এবং গণনার সময়ের পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কার কথাও বলছেন তাঁরা।
গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
ক’টি জেলা পরিষদ পাওয়ার আশা করছেন বিরোধীরা?
প্রধান বিরোধী দল বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘ও ভাবে আগাম কিছু বলা যায় না। ভোটের দিন তৃণমূল আর পুলিশের যৌথবাহিনী কী করবে, তার পরে গণনাকেন্দ্রে কী লুটতরাজ চালাবে, কেউ জানে না!’’ শমীকের দাবি, গত পঞ্চায়েত ভোটে তাঁরা পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদ জিতেছিলেন। কিন্তু গণনাকেন্দ্রে ‘কারচুপি’ করে তাঁদের হারানো হয়েছিল। ভোট এবং গণনা দুই পর্বই ‘নির্বিঘ্ন’ হলে বিজেপি ক’টা জেলা পরিষদ পাবে? শমীকের জবাব, ‘‘তৃণমূলের জমানায় এটা কখনওই ধরে নেওয়া যায় না যে, সব শান্তিতে হবে। বাংলায় রাজনীতিহীন রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতা করছে তৃণমূল। ফলে ওদের কাছে এ সব আশা করা বৃথা।’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও আগাম সংখ্যা বলার দিকে যেতে চাইছেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সুষ্ঠু ভাবে ভোট হলে তৃণমূল এবং বিজেপি— দু’দলের কপালেই দুঃখ আছে।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীর কথায়, “আমরা ১৯ শতাংশ আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছি। জেলা পরিষদের অধিকাংশ আসনেই আমাদের প্রার্থীরা লড়াইয়ে রয়েছেন। তুলনামূলক ভাবে পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতে আমরা কম প্রাথী দিয়েছি। পরিস্থিতির নিরিখে বলতে পারি, আমরা কয়েকটি জেলা পরিষদে জিততে পারি। তবে সংখ্যা বলা সম্ভব নয়।”
আগামী বছর লোকসভা নির্বাচন এবং গত বছর থেকে বাংলার রাজনীতিতে নিয়োগ দুর্নীতি— এই দুইয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে হচ্ছে এ বারের পঞ্চায়েত ভোট। অনেকের মতে, এই ভোটে কি বড় বিষয় হতে চলেছে দুর্নীতি। শুধু নিয়োগ দুর্নীতিই নয়, স্থানীয় স্তরে দুর্নীতিও। শাসক তৃণমূলকে সেই অভিযোগের মোকাবিলা করতে হবে বলেই অনেকে মনে করছেন। তবে অনেকের মতে, পঞ্চায়েতর মতো স্থানীয় স্তরের ভোটে পরিস্রুত পানীয় জল থেকে রাস্তা-বিদ্যুৎ-নিকাশির মতো স্থানীয় উন্নয়নমূলক বিষয় নিয়েই ভাবিত থাকেন ভোটাররা। শেষ পর্যন্ত তাঁরা স্থানীয় উন্নয়নের চেয়েও দুর্নীতিকে বেশি গুরুত্ব দেন কি না, সেটা ফলপ্রকাশের দিনই বোঝা যাবে।
জেলা পরিষদের সম্ভাব্য ফল সম্পর্কে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘বিরোধীরা কিছু জায়গায় অশান্তি করার চেষ্টা করবে। তবে আমরা চাই শান্তিপূর্ণ-অবাধ ভোট হোক। তা হলে বিরোধীদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। সবক’টি জেলা পরিষদেই জোড়া ফুল ফুটবে।’’ কুণালের বক্তব্য, ‘‘বাংলার সব পরিবার রাজ্য সরকারের একাধিক পরিষেবা পায়। ভোটে তারই প্রতিফলন ঘটবে। বিরোধী প্রার্থীদের বাড়ির লোকজন এসেও তৃণমূলকে ভোট দিয়ে যাবেন।’’
জেলা পরিষদের জেলাওয়াড়ি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখল আনন্দবাজার অনলাইন।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। —ফাইল চিত্র।
আলিপুরদুয়ার: ১৮ আসন
অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলা ভেঙে তৈরি এই জেলায় ২০১৮ সালে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছিল তৃণমূল। ১৮টি আসনের মধ্যে তারা জিতেছিল ১৭টিতে। বিজেপি পায় একটি। কিন্তু এক বছর পরেই জেলার একমাত্র লোকসভা আসনটিতে ৫৪ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হয় বিজেপি! তৃণমূল ভোট পায় ৩৭ শতাংশের সামান্য বেশি। ভোটের প্রবণতায় স্পষ্ট হয়েছিল, একদা চা বাগান অঞ্চলে বামেদের আদিবাসী সমর্থনভিত্তির বড় অংশ চলে গিয়েছে পদ্মে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে জেলার পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্রের সবক’টিতেই জিতেছিল বিজেপি। স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্র বলছে, এ বারও আলিপুরদুয়ারে রাজ্যের মধ্যে এই জেলাতেই সবচেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে পারে শাসক শিবির।
জলপাইগুড়ি: ২৪ আসন
রাজ্যে পালাবদলের পর ২০১৩ সালের প্রথম ভোটে একমাত্র অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের জয়ী হয় বামেরা। কিন্তু ২০১৮ সালে ‘শূন্য’ হয়ে যায় তারা। প্রায় ৫৫ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৯টি আসনের মধ্যে সবক’টি জেতে তৃণমূল। বিজেপি পায় প্রায় ৩১ শতাংশ ভোট। বামেরা ১২ শতাংশের কাছাকাছি। জলপাইগুড়ি জেলাতেও চা বাগানের আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক বিজেপিমুখী হতে শুরু করেছিল। জেলার একমাত্র লোকসভা আসনে বিজেপির ভোট ২০১৯ সালে ৫০ শতাংশ পেরিয়ে যায়। কিন্তু বিধানসভা ভোটে জেলার ৭টি আসনে তুল্যমূল্য লড়াইয়ে তিনটি তৃণমূল এবং চারটি বিজেপি জেতে। এ বারেও সেই কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহ বজায় থাকতে পারে।
কোচবিহার: ৩৪ আসন
রাজনৈতিক সংঘর্ষের কারণে কুখ্যাত এই জেলা। নিয়োগ দুর্নীতি বিতর্কে পদ হারিয়েছেন এই জেলার মন্ত্রী। কামতাপুর আন্দোলন ঘিরে টানাপড়েনও কোচবিহারের ভোট-রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক। ২০১৮ সালে ভোটের আগেই ৩৩টি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে একটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল তৃণমূল। এ বারও তাই হয়েছে। পাঁচ বছর আগে এক নির্দল জিতেছিলেন। বাকি ৩২টি গিয়েছিল রাজ্যের শাসক দলের ঝুলিতে। কিন্তু এ বার যে ৩৩টি আসনে ভোট, তার বড় অংশে বিজেপি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে বলে পূর্বাভাস। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট এবং ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের ফলও ‘ইঙ্গিতবাহী’। লোকসভায় ৪৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতেছিল বিজেপি। বিধানসভায় জেলার ন’টি আসনের মধ্যে সাতটি পেয়েছিল তারা। কিন্তু তার ছ’মাস পরেই উপনির্বাচনে দিনহাটা বিধানসভায় এক লক্ষেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে ছিনিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল। সেই প্রবণতা বজায় থাকলে শেষ হাসি হাসবে তৃণমূলই।
উত্তর দিনাজপুর: ২৬ আসন
বাম জমানায় ‘কংগ্রেসের ঘাঁটি’ বলে পরিচিত জেলায় ক্ষমতায় আসার পরেই শিকড় বিস্তৃত হয় তৃণমূলের। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে পাঁচটি আসন জিতেছিল তারা। বামেরা ১৩ এবং কংগ্রেস আটটিতে জিতেছিল। ২০১৮-য় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা তিনটি আসন-সহ মোট ২৪টি জেলা পরিষদ আসন জিতেছিল তৃণমূল। বাম এবং বিজেপি পেয়েছিল একটি করে জেলা পরিষদ আসন। প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির জেলায় কংগ্রেস শূন্যে নেমে গিয়েছিল। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বিহারের স্পর্শকাতর ‘সীমাঞ্চল’ এলাকাঘেঁষা এই জেলায় মেরুকরণের রাজনীতিতে ভর করে জয় পায় বিজেপি। কিন্তু সেই সমর্থন ধরে রাখা যায়নি। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে জেলার ন’টি কেন্দ্রের মধ্যে তৃণমূল সাত এবং বিজেপি দু’টিতে জয় পায়। সংখ্যালঘু সমর্থন এ বারও রাজ্যের শাসক দলকে এই জেলা পরিষদ দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে রেখেছে।
দক্ষিণ দিনাজপুর: ২১ আসন
২০১৬ সালে দেশের সবচেয়ে ‘পিছিয়ে পড়া’ জেলাগুলির মধ্যে ঠাঁই পেয়েছিল দক্ষিণ দিনাজপুর। দীর্ঘ দিন বামেদের দখলে থাকা জেলা পরিষদ ২০১৩ সালে ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। ২০১৮-য় শাসক দলের দাপটে বিরোধীশূন্য হয়ে যায় জেলা পরিষদ। সে সময় মোট ১৮টি আসনের সবক’টিই জিতেছিল তারা। পেয়েছিল প্রায় ৫২ শতাংশ ভোট। বামেরা প্রায় ২৬ শতাংশ এবং বিজেপি প্রায় ১৯ শতাংশ ভোট পায়। ২০১৯ সালে অবশ্য প্রায় ৪৫ শতাংশ ভোট পেয়ে জেলার একমাত্র লোকসভা আসনটিতে জেতে বিজেপি। ২০২১-এ জেলার ছ’টি বিধানসভা আসনে ফল হয়েছিল তিন-তিন। গত দু’বছরে তৃণমূল হারানো জমি আরও কিছুটা পুনরুদ্ধার করেছে বলেই মনে করছে শাসক শিবির।
মালদহ: ৪৩ আসন
বাম আমলেও বেশ কয়েক বার এই জেলা পরিষদ দখল করেছে তৎকালীন বিরোধী দল কংগ্রেস। তৃণমূল জমানায় প্রথম পঞ্চায়েত ভোটে ২০১৩ সালে ৩৮টি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে ১৫টিতে কংগ্রেস এবং ১৬টিতে বামেরা জেতে। তৃণমূল জেতে মাত্র ছ’টিতে। কিন্তু ২০১৮-য় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একটি-সহ তৃণমূল ৩০টিতে জেতে। বিজেপি ছ’টি এবং কংগ্রেস দু’টিতে। বামেরা শূন্য। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে জেলার দু’টি আসনের একটি জিতেছিল কংগ্রেস এবং একটি বিজেপি। কিন্তু বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস ‘শূন্য’ হয়ে যায়। ১২টি বিধানসভা আসনের মধ্যে তৃণমূল আটটি এবং বিজেপি চারটিতে জেতে। কিন্তু এ বার মালদহের দক্ষিণ অংশের কয়েকটি ব্লকে সংখ্যালঘু ভোট কংগ্রেসমুখী হতে পারে বলে তাদের দাবি। আবার উত্তর মালদহের বামনগোলা, হবিবপুর, গাজোলে শাসক দলকে লড়াই দিতে পারে বিজেপি। তবে আসন কমলেও সামগ্রিক ভাবে জেলা পরিষদ দখলে তৃণমূলের এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা।
মুর্শিদাবাদ: ৭৮
মালদহের মতোই বাম আমলে, ২০০৩ সালে এই জেলা পরিষদ দখলের নজির তৈরি করেছিল কংগ্রেস। ২০১৩ সালে তৃণমূলের শাসনেও বজায় ছিল সেই সাফল্য। লোকসভার কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীর জেলায় এখনও শাসক দলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ‘হাত’। রাজনৈতিক হিংসার জন্য কুখ্যাত এই জেলায় ২০১৮ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলা পরিষদ দখল করে তৃণমূল। তৎকালীন ৭০টি আসনের মধ্যে বিনাযুদ্ধে জিতেছিল ৪৮টিতে। ভোটের পর সেই সংখ্যা ৬৯-এ পৌঁছয়। কংগ্রেস পায় মাত্র একটি আসন! ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বহরমপুর কেন্দ্রে অধীর জিতলেও বাকি দু’টি জেতে তৃণমূল। বিধানসভায় ২২টি আসনের মধ্যে ২০টিতেই জেতে শাসক দল। বিজেপি জেতে দু’টিতে। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে সাগরদিঘি বিধানসভার উপনির্বাচনে শাসক দলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ফাটল স্পষ্ট হয়। যদিও জয়ী কংগ্রেস বিধায়ক তিন মাসের মাথায় তৃণমূলে যান। কিন্তু গত কয়েক মাসে এই জেলাতেই তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার প্রবণতা দেখা গিয়েছে সবচেয়ে বেশি। এত কিছুর পরেও অবশ্য জেলা পরিষদ দখলের লড়াইয়ে তৃণমূলই সামান্য এগিয়ে।
শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
নদিয়া: ৫২
সংখ্যালঘু ভোটের সৌজন্যেই গত দু’টি পঞ্চায়েত ভোটে এই জেলা পরিষদে বিপুল জয় পায় তৃণমূল। ২০১৮ সালে তারা প্রায় ৫৮ শতাংশ ভোট পেয়ে ৪৭টি আসনের ৪৫টি জিতেছিল। বিজেপি জিতেছিল দু’টিতে। যদিও ভোট-শতাংশের হিসাবে বামেরা ছিল দ্বিতীয় স্থানে। কিন্তু তার এক বছরের মধ্যেই নদিয়ার দু’টি লোকসভা আসনের একটি জেতে বিজেপি। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে জেলার ১৭টি বিধানসভা আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছিল ন’টিতে। সামগ্রিক ভাবে তৃণমূলের জেলা পরিষদ হারানোর আশঙ্কা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।
উত্তর ২৪ পরগনা: ৬৬
নদিয়ার মতোই এই জেলাতেও মতুয়া ভোটের গুরুত্ব প্রবল। গত লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটের মতো তা বিজেপির পক্ষে গেলে বেশ কিছু জেলা পরিষদ আসনে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলতে পারে তৃণমূলকে। অন্য দিকে, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কিছু আসনে আইএসএফের ফল নিয়েও কৌতূহল রয়েছে। ২০১৮ সালের ৫৭ আসনের জেলা পরিষদ বিরোধীশূন্য হয়েছিল। তিনটিতে তৃণমূল জেতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। প্রায় ৬৭ শতাংশ ভোট পায় তারা। বিজেপি প্রায় ১৮ এবং বামেরা প্রায় ১৪ শতাংশ ভোট রায়। যদিও এর পরে লোকসভা ভোটে জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে দু’টি পায় বিজেপি (পরে ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ তৃণমূলে যোগ দেন)। বিধানসভা ভোটে জেলার ৩৩টি আসনের মধ্যে ২৮টিতে তৃণমূল এবং পাঁচটিতে বিজেপি জয় পেয়েছিল। ‘ফল’-এর পাশাপাশি ‘শান্তিপূর্ণ এবং সুষ্ঠু ভোট’ও এই জেলার রাজনীতির অন্যতম আলোচ্য বিষয়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ৮৫
আসন সংখ্যার নিরিখে রাজ্যের বৃহত্তম এই জেলা ২০১৮ সালে বিরোধীশূন্য ছিল। সে বারের ৮১টি আসনের মধ্যে ভোটের আগেই ২৮টিতে জিতেছিল তৃণমূল। অবশিষ্ট আসনগুলিতে তারা পেয়েছিল ৬০ শতাংশেরও বেশি ভোট। বামেরা ২০ এবং বিজেপি ১৫ শতাংশ ভোট পায়। ২০০৮ সালের বাম আমলের শেষ পঞ্চায়েত ভোটেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের দখল নিয়েছিল তৃণমূল। ২০১৩ সালেও তাদেরই নিয়ন্ত্রণে ছিল জেলা পরিষদ। যদিও বামেরা সে বার ২৫টি আসনে জিতেছিল। এ বার ইতিমধ্যেই ‘বিনাযুদ্ধে’ আটটি আসন দখল করে ফেলে তৃণমূলের জেলা পরিষদ দখল শুধু সময়ের অপেক্ষা।
হুগলি: ৫৩
বাম জমানায় প্রতিটি পঞ্চায়েত ভোটে এই জেলার বিস্তীর্ণ অংশে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শাসকের জয়ই ছিল ‘নিয়ম’। ২০১১ রাজ্যে পালাবদলের পরেও তা বদলায়নি। ২০১৮-য় জেলা পরিষদের ৫০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতেই বিনা ভোটে জয় পায় তৃণমূল। ৬৪ শতাংশ ভোট পেয়ে বাকি ৩৭টিতে জিতে জেলা পরিষদ বিরোধীশূন্য করে তারা। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে জেলার তিনটি কেন্দ্রের মধ্যে বিজেপি একটি জিতেছিল। তবে ২০২১-এ জেলার ১৮টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১৪টিতে তৃণমূল এবং চারটিতে বিজেপি জেতে। নিয়োগ মামলায় বার বার খবরে আসা এই জেলায় ‘দুর্নীতি’ ভোটে প্রভাব ফেলে কি না, সেটাই দেখার।
হাওড়া: ৪২
রাজ্যের অনেক জেলার মতো হাওড়াতেও ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে বামেদের পিছনে ফেলে দ্বিতীয় হয় বিজেপি। প্রায় ৬৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জেলা পরিষদের ৪০টি আসনের মধ্যে ৩৯টি জিতেছিল তৃণমূল। বিজেপি প্রায় ১৯ শতাংশ এবং বামেরা ১০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে বিরোধীশূন্য হয়ে যায় হাওড়া জেলা। সেই প্রবণতা বদলের কোনও ইঙ্গিত মিলছে না।
পূর্ব মেদিনীপুর: ৭০
২০০৮ সালের বাম আমলের শেষ পঞ্চায়েত ভোটে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাশাপাশি এই জেলা পরিষদ দখল করেছিল তৃণমূল। সৌজন্যে নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলন। সেই থেকে ধারাবাহিক ভাবে শুভেন্দু অধিকারীর জেলা ছিল তৃণমূলের দখলে। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েতে বামেরা জেলা পরিষদে মাত্র ছ’টি আসনে জেতে। ২০১৮ সালে ৬০টি আসনের সবক’টিই তৃণমূল জেতে। সাতটি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ভোটের হিসাবে তৃণমূল ৬২ শতাংশ, বামেরা ১৮ শতাংশ এবং বিজেপি প্রায় ১৯ শতাংশ ভোট পায়। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে জেলার দু’টি আসনেই তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হন অধিকারী পরিবারের দুই সদস্য শিশির এবং দিব্যেন্দু। কিন্তু ২০২০-র ডিসেম্বরে শুভেন্দুর দলবদলের পরে জেলার রাজনৈতিক ছবি বদলে যায়। পঞ্চায়েতের তিন স্তরেই বেশ কিছু নির্বাচিত সদস্য যোগ দেন বিজেপিতে। তার প্রভাব দেখা গিয়েছিল ২০২১-এ। পূর্ব মেদিনীপুরের ১৬টি বিধানসভা আসনের মধ্যে তৃণমূল ন’টি এবং বিজেপি সাতটি জেতে। বেশ কয়েকটি আসনে সামান্য ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়। এই পঞ্চায়েত ভোটেও এখানে জেলা পরিষদে কঠিন লড়াইয়ের সম্ভাবনা।
পশ্চিম মেদিনীপুর: ৬০
২০১৮ সালে প্রায় ৬৫ শতাংশ ভোট পেয়ে ৫১টি আসনের জেলা পরিষদ বিরোধীশূন্য করে দিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু পরের বছর ফাটল ধরে জনসমর্থনে। ঘাটাল লোকসভা দখলে রাখলেও মেদিনীপুর হারে তৃণমূল। বিধানসভা ভোটে অবশ্য জেলার ১৫টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে জিতেছিল তৃণমূল। বাকি দু’টিতে বিজেপি জিতলেও কোনওটিই পুরোপুরি ‘গ্রামীণ’ কেন্দ্র ছিল না। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী জেলা পরিষদ দখল নিয়ে শাসকের চিন্তা থাকার কথা নয়। তবে পড়শি জেলা ঝাড়গ্রামের কুড়মি আন্দোলনের ‘আঁচ’ এবং আদিবাসী ভোটের সমীকরণ চিন্তায় রাখতে পারে শাসক দলকে।
ঝাড়গ্রাম: ১৯
পশ্চিম মেদিনীপুর ভেঙে তৈরি এই আদিবাসী অধ্যুষিত জেলায় ২০১৮ সালে প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে জেলা পরিষদের ১৬টি আসনের ১৩টি জিতেছিল তৃণমূল। বিজেপি ৪০ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পায়। জেতে তিনটি আসনে। পরের বছরেই লোকসভা ভোটে ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে জয়ী হয় বিজেপি। যদিও বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে ‘নিশ্চিহ্ন’ করে জেলার চারটি আসনই জেতে তৃণমূল। বিজেপির আশা, এ বার ‘তফসিলি জনজাতি’ মর্যাদার দাবিতে কুড়মিদের আন্দোলন এবং আদিবাসী গোষ্ঠীগুলির পাল্টা প্রচারের টানাপড়েন অনেক হিসাব উল্টে দিতে পারে।
পুরুলিয়া: ৪৫
ঝাড়গ্রামের মতো না-হলেও পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের কয়েকটি ব্লকে কুড়মি আন্দোলনের প্রভাব রয়েছে। বেশ কিছু আসনে বিজেপি বা বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা। ২০১৮ সালে জেলার ৩৮টি জেলা পরিষদের আসনের মধ্যে ২৬টি জিতেছিল তৃণমূল। পেয়েছিল ৪২ শতাংশের সামান্য বেশি ভোট। বিজেপি প্রায় ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ন’টি এবং কংগ্রেস প্রায় ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনটি আসন জিতেছিল। বামেরা কোনও আসনে না জিতলেও প্রায় ১৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। আবার লোকসভা ভোটে জেলার একমাত্র আসনটি বিজেপি জিতেছিল। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটেও তারা সাফল্যের সেই ধারা ধরে রেখেছিল। ন’টি বিধানসভা আসনের মধ্যে বিজেপি ছ’টি এবং তৃণমূল তিনটি আসন জেতে। যদিও গত দু’বছরে রাজ্যের অনেক জেলার মতোই পুরুলিয়াতেও ‘গেরুয়া হাওয়া’ স্তিমিত হয়ে পড়েছে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি।
বাঁকুড়া: ৫৬
একদা বামেদের ‘শক্ত ঘাঁটি’ বলে পরিচিত এই জেলা রাজ্যে ক্ষমতা বদলের পরে তৃণমূলের ‘দুর্গ’ হয়ে ওঠে। ২০১৮-য় ৪৬টি জেলা পরিষদ আসনের ৩১টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতে তারা। বাকিগুলি জেতে প্রায় ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়ে। বিজেপি প্রায় ২৬ শতাংশ এবং বামেরা প্রায় ১৭ শতাংশ ভোট পায়। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে জেলার দু’টি কেন্দ্রের দু’টিই জেতে বিজেপি। বিধানসভায় জেলার ১২টি আসনের আটটিই জেতে তারা। তৃণমূল পায় চারটি। সেই হিসাবে জেলা পরিষদ দখলের লড়াইয়ে থাকার কথা বিজেপির। সব আসনে প্রার্থীও দিয়েছে তারা। কিন্তু বুথের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত ক’জন পোলিং এজেন্ট বসানো যাবে, তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে বিজেপির একাংশে।
পূর্ব বর্ধমান: ৬৬
মূলত অবিভক্ত বর্ধমানের গ্রামীণ অংশ নিয়ে গড়ে ওঠা এই জেলায় বামেদের প্রভাব রাজ্যে পালাবদলের পর থেকেই দ্রুত কমতে শুরু করেছিল। ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদে তারা পায় সাড়ে ৫ শতাংশের সামান্য বেশি ভোট। বিজেপি ভোট পায় ১৫ শতাংশের কিছু বেশি। তৎকালীন ৫৮টি আসনের জেলা পরিষদকে বিরোধীশূন্য করে দিয়েছিল তৃণমূল। ১৭টিতে জয় পায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ভোট পায় প্রায় ৭৬ শতাংশ। এক বছর পর লোকসভা ভোটে দুর্গাপুর-বর্ধমান লোকসভা কেন্দ্রটি পায় বিজেপি। কিন্তু ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে আবার ‘বিরোধীশূন্য’ হয় পূর্ব বর্ধমান। ১৬টি কেন্দ্রের সবক’টিই জেতে তৃণমূল। একদা ‘লালদুর্গ’-এ পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীরা শেষ পর্যন্ত ক’টি আসনে জিততে পারবে।
পশ্চিম বর্ধমান: ১৮
অবিভক্ত বর্ধমানের শিল্পক্ষেত্র এবং শহরাঞ্চলের বড় অংশ রয়েছে ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া এই জেলায়। গ্রামাঞ্চলেও বহু অবাঙালি ভোটদাতা। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে দার্জিলিং ছাড়া একমাত্র এই জেলার আসানসোল আসনে জিতেছিল বিজেপি। যদিও ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে ‘বিরোধীশূন্য’ হয় এই জেলা। ৮৫ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে ১৭টি জেলা পরিষদ আসনই জেতে তৃণমূল। একটি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে অবশ্য আসানসোল থেকে আবার জেতে বিজেপি। কিন্তু দু’বছর পরের বিধানসভা ভোটে জেলার ন’টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ছ’টি জেতে। বিজেপি জেতে তিনটিতে। জেলা পরিষদে বিরোধীরা কয়েকটি আসনে জিতলেও সামগ্রিক দখল তৃণমূলের হাতেই থাকবে।
বীরভূম: ৫২
হিংসা এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের নজিরে ২০১৮ সালে মুর্শিদাবাদকেও টেক্কা দিয়েছিল অনুব্রত মণ্ডলের জেলা। ৪২টি জেলা পরিষদ আসনের সবগুলিই বিনা ভোটে জিতেছিল তৃণমূল। পঞ্চায়েতের অন্য দুই স্তরেও দেখা গিয়েছিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের ‘মিছিল’। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে জেলা পরিষদের সাতটি আসনে সে ভাবেই জয় পেয়েছিল তৃণমূল। সামগ্রিক ভাবে তারা ২৬টি আসনে জিতেছিল। বামেরা ১৪টি এবং কংগ্রেস দু’টি আসনে জেতে। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে জেলার দু’টি কেন্দ্রে তৃণমূল জিতলেও ১১টি বিধানসভার মধ্যে পাঁচটিতে এগিয়ে ছিল বিজেপি। কিন্তু ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে বিজেপি পায় মাত্র একটি আসন। তৃণমূল জেতে বাকি ১০টিতে। এ বার অনুব্রত জেলবন্দি। শেষ পর্যন্ত জেলা পরিষদ দখল করলেও ‘গোষ্ঠীবাজি’র কারণে কয়েকটি আসন তৃণমূলের হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
(তথ্য সহায়তা: অমিত রায়, শোভন চক্রবর্তী)