State News

বহিরাগতদের ‘তাণ্ডব’, ভন্ডুল ছাত্রীদের পুজো

মহকুমাশাসকের (দুর্গাপুর) কাছে  প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ, মঙ্গলবার কিছু লোক ওই তিন ছাত্রীর বাড়ি গিয়ে ‘হুমকি’ দেয়, ‘পুজো করলে ফল ভাল হবে না’।

Advertisement

অর্পিতা মজুমদার ও সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২০ ০৫:০৩
Share:

ব্যতিক্রম: সরস্বতী পুজোয় পুরোহিতের ভূমিকায় রোহিলা হেমব্রম। পাশে প্রধান শিক্ষক। মালদহের দাল্লা চন্দ্রমোহন হাইস্কুলে। ছবি: জয়ন্ত সেন

মেয়েরা চেয়েছিলেন, পুরোহিত হয়ে পুজো করবেন সরস্বতীর। দ্বাদশ শ্রেণির তিন ছাত্রী সেই অনুমতিও পান স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। নেন প্রস্তুতি। কিন্তু বহিরাগতদের ‘গুন্ডামি’র জেরে তাঁরা পুজো করতে পারেননি। বুধবার এমনই অভিযোগ করলেন পশ্চিম বর্ধমানের জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক জইনুল হক।

Advertisement

মহকুমাশাসকের (দুর্গাপুর) কাছে প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ, মঙ্গলবার কিছু লোক ওই তিন ছাত্রীর বাড়ি গিয়ে ‘হুমকি’ দেয়, ‘পুজো করলে ফল ভাল হবে না’। তাই স্কুলের তরফে এক পুরোহিতকে এনে এ দিন পুজো শুরু করা হয়। কিন্তু আচমকা ৩০-৪০ জন বহিরাগত স্কুলের ভিতরে ঢুকে তাদের সঙ্গে থাকা পুরোহিতকে দিয়ে নতুন করে পুজো করায়। তখনই শিক্ষিকাদের ‘কটূক্তি’ করা হয়। প্রধান শিক্ষককে ‘জোর করা হয়’ স্কুল ছাড়তে।

এই ঘটনা যখন ঘটছে, তখন স্কুলের দরজার সামনে ছিল পুলিশের গাড়ি। কিন্তু সে গাড়িতে থাকা পুলিশকর্মী বা এনটিএসপিএস থানার কাছে সাহায্য চেয়ে মেলেনি বলেও অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুলিশের সামনেই বহিরাগতেরা যা করল, তার পরে আমি এবং আমার সহকর্মীরা নিরাপদ বোধ করছি না।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: নাগরিকত্ব আইন নিয়ে প্রতিবাদ সরস্বতীর মণ্ডপে

জেমুয়ায় পুলিশ ছিল কেন? পুলিশ সূত্রের দাবি, স্কুলের ছাত্রীরা পৌরোহিত্য করবে, এ কথা জানাজানি হতে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে তার বিরোধিতায় ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য় একটি ‘‌পোস্ট’ ছড়ায়। তাতে ‘বৈদিক শাস্ত্রে মহিলাদের পৌরোহিত্যে বাধা নেই’ জানিয়েও বলা হয়েছিল, ‘...হয়তো অনেকেই মহিলা অধিকার নিয়ে কথা বলবেন। কিন্তু মনে রাখবেন অনেক সময় অধিকারের থেকে পরম্পরা, ঐতিহ্য বড় ব্যাপার হয়ে দেখা দেয়’।

থানার দাবি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার্থে পুলিশ গ্রামে গিয়েছিল। তা হলে স্কুলে এমন হল কেন? আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুকেশকুমার জৈন বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষক ওঁর কথা বলছেন। আমরা খতিয়ে দেখব।’’

অশান্তি করল কারা? স্থানীয় সূত্রের দাবি, ঘটনাচক্রে, ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য় যাঁরা ওই ‘বার্তা’ ‘শেয়ার’ করছিলেন তাঁদের একাংশ এবং এ দিন যাঁরা স্কুলে গিয়েছিলেন তাঁদের অনেকে এলাকায় বিজেপির কর্মী-সমর্থক বলে পরিচিত। দুর্গাপুরের বিজেপি নেতা অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, তাঁদের কেউ ওই স্কুলে যাননি। তবে তাঁর সংযোজন, ‘‘পরম্পরা ভাঙার চেষ্টা কেন, সেটা ভাবা দরকার।’’ জেমুয়ার বাসিন্দা তথা অভিভাবক শ্যামল দাস, অমর দাসদের দাবি, ‘‘পড়াশোনায় ত্রুটি ঢাকতে পরম্পরা ভাঙার চেষ্টা হচ্ছিল।’’ যদিও অভিযোগ মানেননি প্রধান শিক্ষক। মন্তব্য করেননি পুজো করতে চাওয়া ছাত্রীরা বা তাঁদের পরিবার।

তবে এ প্রসঙ্গে শাস্ত্র বিশেষজ্ঞ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এঁরা পৌরুষেয়তায় বিশ্বাসী। এ সব অতি-হিন্দুদের কাণ্ড। সরস্বতী পুজো সবাই করতে পারেন।’’ দুর্গাপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মধুমিতা জাজোদিয়ার প্রশ্ন, ‘‘সরস্বতী পুজোর দিনে যদি প্রধান শিক্ষককে স্কুল থেকে বার করে দেওয়া হয়ে থাকে, তা হলে সেটা কোন শিক্ষার পরিচয়!’’ মহকুমাশাসক অনির্বাণ কোলে বলেন, ‘‘স্কুলে পুজোর বিষয়ে স্কুলই সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে এলাকায় কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না, সেটা প্রশাসন দেখবে।’’

তবে রাজ্যের অন্যত্র এ দিন সরস্বতী পুজোয় মেয়েরা পুরোহিত হয়েছেন। মালদহের হবিবপুরে দাল্লা চন্দ্রমোহন বিদ্যামন্দিরে পুজো করেছেন একাদশ শ্রেণির আদিবাসী ছাত্রী রোহিলা হেমব্রম। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির নয়াপুট সুধীরকুমার হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী শ্রেয়া দাস, পুরুলিয়ার নিতুড়িয়ার বিন্দুইডি প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ঝিলিক বন্দ্যোপাধ্যায়। পুজো শেষে রোহিলা বলেন, ‘‘নিয়ম মেনে সরস্বতী পুজো করতে পেরেছি। এটা আমার পরম পাওয়া।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement