মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে সর্বভারতীয় স্তরে বিরোধী ঐক্য ‘টর্নেডো’র চেহারা নেবে এবং তার জেরে বিজেপি কোণঠাসা হবে বলে মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেত্রীর দাবি, দেশে গণতন্ত্র ও অর্থনীতির যে হাল কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর সরকার করেছে, তার পরে আগামী লোকসভা ভোটে দু’শো আসন পাওয়াও বিজেপির পক্ষে কঠিন হবে।
লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিরোধী ঐক্যের সলতে পাকানোর কাজ শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। এখনও সেই প্রক্রিয়া চোখে পড়ার মতো গতি না পেলেও যোগাযোগ এবং সমন্বয়ের পালা চলছে বিরোধী দলগুলির মধ্যে। এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বুধবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, সময় এলে বিরোধী ঐক্য ‘টর্নেডো’ হয়ে উঠবে। মমতার কথায়, ‘‘সব বিরোধী একত্রিতই রয়েছে। আমরা একত্রিত ভারত চাই। প্রত্যেক দিন প্রত্যেকের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। নীরবতা অনেক সময় কাজ করে। সময় এলে টর্নেডো আসবে!’’ মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, সামনেই কর্নাটকে বিধানসভা নির্বাচন। জেডি (এস)-এর কুমারস্বামী ইতিমধ্যেই কলকাতায় এসে তার সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন, কর্নাটকে ভোটের প্রচারে আমন্ত্রণ পেলে তিনি সে রাজ্যে যাবেন।
বিরোধী ঐক্য এবং বিজেপির স্বৈরাচার নিয়ে কথা বলার সূত্রেই বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্রে (ইভিএম) কারচুপির অভিযোগের প্রসঙ্গ এনেছেন মমতা। তাঁর দাবি, আগামী লোকসভা ভোটে ভিভি প্যাট যন্ত্র বেশি করে ব্যবহার করার জন্য সব বিরোধী দল সরব হব। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা একসঙ্গে এর জন্য নির্বাচন কমিশনে যাব। এই ব্যাপারে সব বিরোধী একসঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।’’
মমতার দাবি, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি দু’শো আসনও পাবে না। সেই লক্ষ্যে বিরোধীদের কোমর বাঁধার বার্তাও দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘মিথ্যা কথা বেশি দিন চলে না। দেশে মূল্যবৃদ্ধি আকাশ ছুঁয়েছে। এনআরসি আবার নিয়ে এসেছে। পঞ্চাশটা নাকি রাজ্য বানাবে! জমিদারি? ওয়ান ম্যান-সুপারম্যান? আমরা ঝুঁকব না।’’
বিজেপি অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে কটাক্ষ করেছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এ দিন কৃষ্ণনগরে বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘরে বসে কি তন্ত্রসাধনা করছেন, না জ্যোতিষ সাধনা করছেন? গোটা দেশ সম্পর্কে তাঁর কোনও ধারণা আছে? দু-চারটে রাজ্য ছাড়া গত তিন মাসে গোটা ভারতবর্ষে কোথাও গিয়েছেন তিনি? গোটা দেশে কী পরিস্থিতি, যাঁর ধারণাই নেই, তিনি বলছেন বিজেপি সরকার গড়তে পারবে না!’’ সুকান্তের দাবি, ‘‘দেশের ৭৫% মানুষ নরেন্দ্র মোদীকে আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চাইছেন।’’
বিরোধী ঐক্যের প্রসঙ্গে তৃণমূল নেত্রীর অবস্থানকে কটাক্ষ করেছে সিপিএম। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘সারা দেশে বিরোধী দলগুলো নিজেদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে। বিজেপিও তাদের কত আসন হবে, তা নিয়ে শঙ্কায় আছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যা বলেন আর যা করেন, সব সময় মেলে না। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেননি। তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।’’