মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
বালেশ্বরে রেল দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিজনদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য কলকাতায় সরকারি অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তুলল বিরোধীরা। নিহত ও আহতদের জন্য ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। দুর্ঘটনায় যাঁদের অঙ্গহানি হয়েছে বা কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের এক জনকে হোমগার্ডে চাকরি দেওয়া হবে। আহত না হলেও দুর্ঘটনার জেরে যাঁরা আতঙ্কে আছেন, তাঁদেরও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠান করে আজ, বুধবার এঁদের সকলকে চেক তুলে দেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। দুর্ঘটনার জেরে বিপন্ন পরিবারের মানুষজনকে নানা জায়গা থেকে কলকাতায় নিয়ে এসে এই সহায়তা দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য দাবি করছে, বিরোধীরা এই নিয়ে অহেতুক রাজনীতি করছে।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মঙ্গলবার বলেছেন, ‘‘দুর্ঘটনার পরে মৃত ও আহতদের পরিবার এখন বিধ্বস্ত। শ্রাদ্ধশান্তি-সহ আচার-অনুষ্ঠানের কাজ আছে অনেকের। এই সময়ে ক্ষতিপূরণের চেক দেওয়ার জন্য নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মৃত ও আহতদরে পরিবারকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী ওখানে ভাষণ দেবেন। জেলাশাসক, মহকুমা শাসকদের বলা হয়েছে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত পরিবারের লোকজনকে পাঠাতে হবে! স্থানীয় ভাবেই এটা করা যেত।’’ একই সুর শোনা গিয়েছে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের গলাতেও। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও বলেছেন, ‘‘আর্থিক সহায়তায় বিরোধিতার কিছু নেই। কিন্তু এটা কি কোনও সংবর্ধনার অনুষ্ঠান? সচেক সরাসরি অ্যাকাউন্টে দেওয়া যায়। বা তেমন হলে স্থানীয় স্তরে প্রশাসন ওই সহায়তার চেক দিয়ে দিতে পারে। দেখে মনে হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী এই দুর্ঘটনাকে উপলক্ষ করে কোনও সুযোগ ছাড়তে চান না!’’
রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘এতে অসুবিধার কী আছে? সরকার পাশে আছে, সেই বার্তা পৌঁছবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির কাছে। আসলে দুর্ঘটনার পর থেকে রাজ্য সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে ‘টিম মমতা’ যে ভাবে কাজ করেছে, তা সহ্য করতে না পেরে শকুনের রাজনীতি করতে চাইছে বিরোধীরা! মানুষ বিচার করবে।’’
এরই মধ্যে এক প্রস্ত বিতর্ক বেধেছে দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিজনের হাতে তৃণমূলের তরফে দু’হাজার টাকার নোটে নগদ সাহায্য তুলে দেওয়া নিয়ে। দল হিসেবে তৃণমূল দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারপিছু দু’লক্ষ টাকা করে অর্থ সাহায্য দিচ্ছে। রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা, প্রতিমন্ত্রী দিলীপ মণ্ডল, জয়নগরের তৃণমূল সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল, বাসন্তীর বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল ও ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক পরেশরাম দাস সোমবার বাসন্তীতে গিয়ে ছড়ানেখালি গ্রামের বাসিন্দা রেল দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারের হাতে দু’লক্ষ টাকা করে তুলে দেন। সেই টাকা দেওয়া হয়েছে দু’হাজার টাকার নোটে। বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয় তার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন তুলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী বলেন দু’হাজার টাকার নোট পাওয়া যায় না অথচ তৃণমূলের কাছে সেই নোটই রয়েছে এত! বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্তও এ দিন বলেছেন, ‘‘সমাজমাধ্যমে ভিডিয়ো পেয়েছি, রাজ্যের মন্ত্রী বলছেন এই টাকা দিদি (মুখ্যমন্ত্রী) পাঠিয়েছেন। সেখানে ২০০০ টাকার নোটে এই অর্থ মূল্য দেওয়া হয়েছে। এটাও কি কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়া?’’ এই ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। ছড়ানেখালি গ্রামের বাসিন্দারাও বলেছেন, দু’হাজারের নোট বাতিলের ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরে ওই টাকা ব্যবহার করা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা।
তৃণমূলের তরফে কুণাল অবশ্য বলেছেন, ‘‘এই দু’হাজারের নোট তো বিজেপি সরকারই বাজারে এনেছিল। এই নোট তো এখনও নিষিদ্ধ হয়নি! নগদ মানে বেআইনিও নয়। এই ধরনের অভিযোগ শুধু অর্থহীন নয়, মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা।’’