Pegasus

Pegasus Spyware: ‘রাজ্যের আড়ি পাতার তদন্তের কী হবে’

পেগাসাস-কাণ্ডে মূল অভিযোগের তির যেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে, সেখানে জাতীয় স্তরে কি তদন্তের এক্তিয়ার আছে রাজ্যের গঠিত কমিশনের?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২১ ০৫:১৫
Share:

প্রতীকী চিত্র।

পেগাসাস-কাণ্ডে রাজ্য সরকারের গড়া তদন্ত কমিশনকে ‘রাজনৈতিক চমক’ আখ্যা দিয়ে তার বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলল বিজেপি। কমিশনের বিরোধিতা না করলেও বিরোধী বাম ও কংগ্রেসও তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তাদের প্রশ্ন, এ রাজ্যে শাসক পক্ষের বিরুদ্ধে যে আড়িপাতার অভিযোগ আছে, তার বিচারের কী হবে? আর পেগাসাস-কাণ্ডে মূল অভিযোগের তির যেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে, সেখানে জাতীয় স্তরে কি তদন্তের এক্তিয়ার আছে রাজ্যের গঠিত কমিশনের?

Advertisement

শাসক দল তৃণমূলের অবশ্য পাল্টা যুক্তি, পেগাসাস সফ্‌টঅয়্যার কাজে লাগিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা, আমলা, বিচারপতি, সাংবাদিকদের ফোনও যে হ্যাক করা হয়েছে, তার তথ্য উঠে এসেছে দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে। রাজ্যের ক্ষেত্রে বিরোধীদের শুধু অভিযোগ রয়েছে। তদন্তের ক্ষেত্রে তথ্য এবং অভিযোগ এক নয়।

সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এম বি লোকুর এবং কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যকে নিয়ে সোমবার কমিশন গড়ার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ দিন ওই তদন্ত কমিশন গড়ার বিষয়টিতে সিলমোহর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, ‘‘কমিশন এনকোয়্যারি অ্যাক্ট অনুযায়ী এই ধরনের কমিশন গড়া সংসদ বা বিধানসভার এক্তিয়ারভুক্ত। মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে কমিশন ঘোষণা করেছেন, সেটা অবৈধ। এটা একটা রাজনৈতিক গিমিক! এই নিয়ে টিভি চ্যানেল এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্ক হবে। তার বাইরে কিছু হবে না।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘তৃণমূল জমানায় এ রকম বহু কমিশন, কমিটি ইত্যাদি হয়েছে। কোনওটারই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসেনি।’’

Advertisement

রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যেরও প্রশ্ন, ‘‘এই ঘোষণা কতটা আইনসম্মত? গত ১০ বছরে বাংলার কোনও নগরপাল কি ইজরায়েল সফর করেছিলেন? তিনি বা কোনও আধিকারিক কি সেখান থেকে পেগাসাসকে চোরাপথে পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন? এসটিএফ বা সিআইডি-র কাছে কি এই ধরনের সফ্‌টঅয়্যার আছে, যা হোয়াটস্অ্যাপেও আড়ি পাততে সক্ষম?’’ শমীকবাবু উদাহরণ দেন, ‘‘মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে প্রকাশ্যে বলেছিলেন, তাঁর তিনটি ফোনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আড়ি পাতে। বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টেও অভিযোগ জানিয়েছিলেন তিনি। আমাদের দলের নেতা রাহুল সিংহও লিখিত অভিযোগ করেছিলেন যে, তাঁর ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে। এ রাজ্যের মন্ত্রী, সাংবাদিক, শাসক দলের নেতা হোয়াটস্অ্যাপে কথা বলেন রাজ্য সরকারের আড়ি পাতা থেকে বাঁচতে!’’

তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ ওঠা আর পেগাসাসে পাওয়া তথ্যপ্রমাণ এক নয়। অভিযোগ আর তথ্যের মধ্যে পার্থক্য আছে।’’ শুভেন্দুদের বক্তব্যের জবাবে তৃণমূল নেতা তাপস রায় বলেন, ‘‘সংবিধান, দেশের আইন-কানুন, স্পিকার বা মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত কোনও কিছু অপছন্দ হলেই তা বিজেপির কাছে অবৈধ হয়ে যায়!’’

কমিশনের কার্যকারিতা নিয়ে অবশ্য সিপিএম ও কংগ্রেসও প্রশ্ন তুলেছে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী হয়তো কেন্দ্রকে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার জন্য কমিশন করেছেন। পেগাসাস-কাণ্ডে যা হয়েছে, ভয়ঙ্কর। কিন্তু এ রাজ্যে আমার মতো বহু রাজনৈতিক নেতা, অফিসার, এমনকি মন্ত্রীদের ফোনেও আড়ি পাতা হচ্ছে অনেক দিন ধরে। রাজ্য ইজরায়েলেরই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে কি না, আমরা জানতে চেয়েছি। রাজ্যের এই আড়ি পাতার অভিযোগ কি কমিশনের বিচার্য হবে?’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল আমলে এর আগে ১৮টা কমিশন হয়েছে। কোনওটারই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসেনি। এই কমিশনের রিপোর্ট কি ৬ মাসে সামনে আসবে?’’ কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘কেন্দ্র পেগাসাস নিয়েএখনও কোনও পদক্ষেপ করেনি। এই অবস্থায় রাজ্য একটা কমিশন গড়ে বার্তা দিতেই পারে। কিন্তু জাতীয় স্তরে নেতা, আমলা-সহ অনেকের ফোন হ্যাক করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তদন্ত দরকার জাতীয় স্তরে। রাজ্যের এই কমিশন দিয়ে কত দূর কার্যকরী তদন্ত হবে, সেই প্রশ্ন আছেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement