বুধবার নবান্নে হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী এবং শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: সংগৃহীত।
নবান্নে প্রায় ‘গেরিলা হানা’ দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাতের কারণে ব্যস্ত ছিলেন তখনই নবান্নে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। বুধবার তিনি কোথায় কখন কী করবেন, তা বিধানসভা থেকে রওনা হওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত জানতে দেননি কোনও সতীর্থকে। এমনই নাটকীয় কায়দায় নিজের ‘নবান্ন অভিযান’-এর ছক সাজিয়েছিলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক।
মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি সফরে যাওয়ার কথা ঘোষণা করার পরেই বিরোধী দলনেতা জানিয়েছিলেন, বিজেপি পরিষদীয় দলও নবান্নে গিয়ে রাজ্য সরকারের বঞ্চনার বিরুদ্ধে স্মারকলিপি দেবে। কিন্তু সেই ঘোষণার পর থেকে কিন্তু এ বিষয়ে আর কোনও উচ্চবাচ্য করেননি তিনি। শুধুমাত্র যে স্মারকলিপি নবান্নে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর কাছে দেওয়া হবে, তা তারিখহীন ভাবে তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। দিন কয়েক আগে সেই চিঠি তৈরি হয়ে যায় বিরোধী দলনেতা বিধানসভার দফতরে। বুধবার সকাল সকাল বিধানসভায় বেশ কয়েকজন বিজেপি বিধায়ককে হাজির হতেও সোমবারই নির্দেশ দিয়েছিলেন শুভেন্দু। সেই মতো একে একে কুমারগ্রামের বিধায়ক মনোজ ওঁরাও, রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বিধায়ক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়, রানাঘাট উত্তর-পূর্বের বিধায়ক বিধায়ক অসীম বিশ্বাস, কুলটির বিধায়ক অজয় পোদ্দাররা হাজির হন বিধানসভায়। কী কারণে তাঁদের ডাকা হয়েছে, তা নিয়ে তখনও ঘুণাক্ষরে টের পাননি গেরুয়া শিবিরের বিধায়কেরা।
একটু পরে আসেন বিরোধী দলনেতা। এসেই নির্দেশ দেন নবান্নে মুখ্যসচিবের দফতরে ফোন করে জানানো হোক বিরোধী দলনেতা দেখা করতে চান। সঙ্গে সঙ্গেই যোগাযোগ করা হয় নবান্নে। বিরোধী দলনেতার অফিস সূত্রে খবর, মুখ্যসচিবের দফতরের এক আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানানো হয়, মুখ্যসচিবের সঙ্গে দেখা করতে চান বিরোধী দলনেতা। মুখ্যসচিবকে তা জানানো হোক। মুখ্যসচিবের দফতর থেকে জানানো হয়, ৫ মিনিটের মধ্যে জবাব দেওয়া হবে। প্রায় মিনিট ২০ অপেক্ষার পর নবান্ন থেকে কোনও জবাব না পেয়ে আবার মুখ্যসচিবের দফতরে যোগাযোগ শুরু করে বিরোধী দলনেতার দফতর। তবে সদুত্তর না পেয়ে মুখ্যসচিবের দফতরকে জানিয়ে দেওয়া হয় শুভেন্দু যাচ্ছেন।
মুখ্যসচিবের দফতরে আর না ফোন করার নির্দেশ দেন বিরোধী দলনেতা। তারপর শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ, কালচিনির বিধায়ক বিশাল লামা ও শালতোড়ার বিধায়ক চন্দনা বাউড়িকে তাঁর সঙ্গে নবান্নের যাওয়ার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে বলেন নন্দীগ্রাম বিধায়ক। অন্য বিধায়করাও বিরোধী দলনেতার কাছে নবান্নে অভিযানে সঙ্গী হওয়ার আবেদন জানান। কিন্তু শুভেন্দু জানিয়ে দেন, যে হেতু নবান্নের সামনে সবসময় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে, তাই চারজনের বেশি বিধায়কের যাওয়া সম্ভব নয়। তবে উপস্থিত বিধায়কদের বিধানসভায় থাকার নির্দেশ দিয়েই বাকি তিন বিধায়ককে নিয়ে নবান্নের পথে রওনা হন বিরোধী দলনেতা।
তাঁকে নবান্নের সামনে দেখেই তৎপরতা বাড়ে পুলিশ প্রশাসনে। ভিআইপি গেট দিয়ে ঢুকেই তিনি সতীর্থ বিধায়কদের নিয়ে সরাসরি নবান্নে প্রবেশ করে যান। পুলিশ প্রশাসন কিছু বোঝার আগেই বিরোধী দলনেতা পৌঁছে যান মুখ্যসচিবের দফতরে। সেখানে যাওয়ার খবর জানানো হয়, মুখ্যসচিবকে। বিরোধী দলনেতা ও তাঁর সঙ্গী বিধায়কদের বসানো হয় অতিথিদের বসার ঘরে। পরে তাঁদের ডেকে কথা বলেন মুখ্যসচিব। কার্যত ‘গেরিলা হানা’ দিয়ে নবান্ন অভিযান সম্পন্ন করেন তিনি। কারণ এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী স্পেন সফরে থাকাকালীনও মুখ্যসচিবের সঙ্গে সাক্ষাতের আবেদন করেছিলেন বিরোধী দলনেতা। কিন্তু সেবার তাঁকে সময় দেওয়া হয়নি বলেই অভিযোগ করেছিলেন তিনি। তাই এ বার আগের থেকে অনেক বেশি সাবধানী ছিলেন শুভেন্দু। নিজের এ হেন ‘গেরিলা’ কর্মসূচির খবর কাকপক্ষীকেও টের পেতে দেননি নন্দীগ্রাম বিধায়ক।
পরে বিধানসভায় ফিরে এসে শঙ্কর-বিশাল-চন্দনাকে নবান্ন অভিযানে নিয়ে যাওয়ার কারণও সতীর্থদের কাছে ব্যাখ্যা করেন শুভেন্দু। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের কাছেও বিরোধী দলনেতার এমন আচমকা কর্মসূচির আগাম কোনও খবর ছিল না বলেই জানা গিয়েছে। তবে এমন অতর্কিত হানা দিয়ে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ দফতরে হানা দিতে পেরে যে তিনি তৃপ্ত, তা ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপির ‘জঙ্গি’ মুখ।