রাজ্যজুড়ে প্রবল সন্ত্রাসের শিকার হতে হচ্ছে বিরোধীদের। জেলায় জেলায় তৃণমূল হামলা চালাচ্ছে বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকদের উপর। অভিযোগ করলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সন্ত্রাস না থামলে সন্ত্রস্ত এলাকায় গিয়ে অবস্থানে বসবেন বাম নেতা-কর্মীরা। ঘোষণা সূর্যকান্তের।
ভোটের ফল প্রকাশ হতেই রাজ্যের বিভিন্ন অংশে শুরু হয়ে গিয়েছে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হামলার লক্ষ্য বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা। এবং প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে শাসক দলের দিকে। বিরোধীদের অভিযোগ, জল মেপে নেওয়ার পরেই বিভিন্ন এলাকায় একেবারে রণং দেহি মেজাজে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। আবার কোথাও কোথাও শাসক দলের উপরে বাম সমর্থকরা ঝাঁপিয়ে পড়ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনী ফল বেরনোর পরে অবশ্য তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবাইকে শান্ত থাকার পরামর্শই দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “এই জয় মানুষের জয়। ২০ তারিখ থেকেই সারা রাজ্য জুড়ে উৎসব হবে।” কিন্তু তৃণমূল নেত্রীর সেই আহ্বানে যে কোনও কাজ হয়নি, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি তারই প্রমাণ।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ বাঁশদ্রোণী থানার নারকেলবাগান এলাকায় শ্যামল লাহিড়ী নামে এক স্থানীয় সিপিএম নেতার বাড়িতে চড়াও হয় কিছু তৃণমূল কর্মী। নির্বিচারে চলে তাঁর বাড়ি ভাঙচুর। সেই সময় ওই সিপিএম কর্মীর বাড়ির সামনে দিয়ে মোটরবাইক চালিয়ে ওষুধ কিনতে যাচ্ছিলেন স্থানীয় সিপিএম নেতা যুধাজিৎ গোস্বামী। শাসক দলের কর্মীরা ওই বাড়িতে ভাঙচুর চালাচ্ছে দেখে তিনি বাইক থামিয়ে তৃণমূল কর্মীদের ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা পাল্টা চড়াও হয় যুধাজিৎবাবুর উপর। বেধড়ক মারধর করা হয় তাঁকে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর আঘাত রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই মুহূর্তে তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বাঁশদ্রোণী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে সিপিএম।
আরও একটি ঘটনায় বালির মোহনলাল বাহালওয়ালা রোডে এক সিপিএম কর্মীর বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগও উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শনিবার শাসক দলের কিছু কর্মী এক সিপিএম কর্মীর বাড়িতে ভাঙচুর চালায়।
শনিবার সিপিএমের রাজ্য দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে সূর্যকান্ত সন্ত্রাসের তীব্র নিন্দা করেন। তিনি বলেন, ‘‘অবিশ্বাস্য দ্রুততায় সন্ত্রাস হচ্ছে। কাউকে কিছু বুঝতে দেওয়া হচ্ছে। ভোটের ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই সংগঠিত ভাবে সর্বত্র আক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই আমাদের অনেক কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া।’’ সিপিএম রাজ্য সম্পাদক জানান, আক্রান্ত সমর্থকদের পাশে সাধ্যমতো দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে দল। কিন্তু সকলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। সূর্যবাবুর কথায়, ‘‘অনেকে ঘরছাড়া। কোথায় গিয়েছেন জানা নেই। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। অনেক এলাকায় আবার তৃণমূল অবরোধ করে দিচ্ছে বা রাস্তা কেটে দিয়ে এলাকাকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। ফলে আক্রান্ত এলাকায় পৌঁছনোও যাচ্ছে না।’’
পুলিশও তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হয়েছে বলে সূর্যবাবুর দাবি। তিনি বলেন, ‘‘যেখানে পুলিশ তৃণমূলের হামলা রোখার চেষ্টা করছে, সেখানে পুলিশের উপর হামলা হচ্ছে। থানা ভাঙচুর করে দেওয়া হচ্ছে।