মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।
ধর্ষণ মোকাবিলায় ফাঁসির মতো কড়া শাস্তির বিধান এনে নতুন আইন প্রণয়নের কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বিল পেশের লক্ষ্যে আজ, সোমবার শুরু হচ্ছে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন। কিন্তু ধর্ষণের মতো অপরাধের ক্ষেত্রে যেখানে দেশে একাধিক আইন রয়েছে, সেখানে রাজ্যের এমন আইন কার্যকরী হতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করল বিরোধীরা। প্রধান বিরোধী দল বিজেপিও রবিবার ধর্মতলার ধর্না-মঞ্চ থেকে এই প্রশ্ন তুলেছে।
ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে ফাঁসির পক্ষে সওয়াল করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে মেয়ো রোডের কর্মসূচি থেকে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশন ডেকে বিল পাশ করানো ও আইন করতে রাজ্যপালের কাছে পাঠানোর কথা বলেছিলেন। সেই বিলের জন্যই বসছে অধিবেশন। বিধানসভায় আজ, সোমবার কার্য উপদেষ্টা (বি এ) কমিটির বৈঠকে ঠিক হবে, কাল, মঙ্গলবার বিলটি নিয়ে কতক্ষণ আলোচনা হবে। যদিও খসড়া বিল এখনও পর্যন্ত বিধায়কদের হাতে এসে পৌঁছয়নি।
এই আবহে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রবিবার ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে বলেছেন, “কাল বিধানসভায় দেখা হবে। কী ভাষায় উত্তর দিতে হয়, বুঝিয়ে দেব আমরা!” আর জি কর-কাণ্ডে বিচারের দাবিতে ধর্মতলায় বিজেপির ধর্না-মঞ্চ থেকেও এই প্রসঙ্গ তুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। মৃত্যুদণ্ড সংক্রান্ত একটি আইন আনতে চেয়ে ১৯৫৭-য় তৎকালীন মহারাষ্ট্র সরকার ও কেন্দ্রের সংঘাতের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সুকান্ত বলেছেন, “দেশের সংবিধান বলছে, যখন একই বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য আইন আনে, তখন কেন্দ্রের আইনই থাকা উচিত। কিন্তু আপনার (মমতার) এই নাটুকেপনা বাংলার মানুষের সামনে তুলে ধরতে বিজেপি বিধায়কেরা বিলকে পূর্ণ সমর্থন জানাবেন।” তাঁর সংযোজন, “বিধানসভায় আমরা এটাও বলব যে, দফা এক, দাবি এক, মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ। আইন দেশে আছে। আইনের থেকেও জরুরি হল, সেটার প্রয়োগ করা হচ্ছে কি না।”
কার্যত একই সুরে মমতাকে তোপ দেগেছেন দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, “উনি কখনও ফাস্ট ট্র্যাক, কখনও ফাঁসির কথা বলেন। কিন্তু তথ্যপ্রমাণ দেন না। কাউকে গ্রেফতারও করেন না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার থাকলে, এই সব ঘটতেই থাকবে।” বিজেপির এ দিনের ধর্না-মঞ্চে সুকান্ত ছাড়াও ছিলেন অগ্নিমিত্রা পাল, জগন্নাথ সরকার, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়-সহ অন্যরা।
ফৌজদারি অপরাধে রাজ্যের পৃথক আইন করার এক্তিয়ার আছে বলে ফের মনে করিয়ে দিয়েও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর প্রশ্ন, ধর্ষণের মতো যে অপরাধের ক্ষেত্রে যেখানে দেশে একাধিক আইন এবং মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত নানা সাজার সংস্থান আছে, সেখানে রাজ্যের আইন কার্যকর হবে কী ভাবে? অধীরের দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী নাটক করছেন। গোড়া কেটে গাছের আগায় জল দিয়ে মানুষকে বোকা বানাতে চাইছেন! এক দিকে তথ্য-প্রমাণ লোপাট করা হচ্ছে, অন্য দিকে বলা হচ্ছে ফাঁসি চাই। আইনটা যখন বেআইনি ভাবে করার জন্য আটকে যাবে, তখন উনি বলবেন, আমাকে আইন করতে দিল না!” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীরও মতে, ‘‘নির্ভয়া-কাণ্ডের পরে আলাদা করে আইন করার দরকার আছে বলে মনে হয় না। আর মৃত্যুদণ্ডই শেষ কথা কেন হবে? ধর্ষণের অপরাধে ফাঁসি তো আগে হয়েছে। আসল কথা হল, প্রশাসন কী ভাবে তথ্য-প্রমাণ দিয়ে মামলা সাজাবে, তার উপরে আদালতের নির্দেশ নির্ভর করবে।’’
রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের বক্তব্য, নিভর্য়া-কাণ্ডের পরে বর্মা কমিশন এবং সংসদীয় কমিটি মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে সায় দেয়নি। সেই কমিটির ‘সর্বসম্মত’ রিপোর্টে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিদেরও সহমত ছিল। অথচ এখন তাঁরাই ‘ফাঁসি চাই’ বলে ধর্না, মিছিলে শামিল হচ্ছেন। দলের এক সাংসদের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘পরিস্থিতি এখন আলাদা। সিবিআই তদন্ত করছে। রাজ্যের বিল আসার আগে এই নিয়ে এখন মন্তব্য করা উচিত নয়।’’