বিধানসভার অধিবেশনে নির্দিষ্ট দিনে হাজির হয়ে মুখ্যমন্ত্রী কেন বিধায়কদের প্রশ্নের জবাব দেবেন না, ফের সেই প্রশ্নে সরব বিরোধীরা। তাদের প্রশ্নের জবাব অবশ্য সরকার পক্ষ থেকে মেলেনি। পরিষদীয় মন্ত্রী বরং বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী সুযোগ পেলেই বিধানসভায় আসেন। কিন্তু তখন আবার অনেক ক্ষেত্রেই বিরোধীরা সভাকক্ষে থাকেন না!
বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে ৭ নভেম্বর, শুক্রবার। তার আগে সোমবার প্রথামাফিক সর্বদল বৈঠক ডেকেছিলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই কংগ্রেসের বিধায়ক মানস ভুঁইয়া মুখ্যমন্ত্রীর গরহাজিরার প্রসঙ্গ তোলেন। মানসবাবু বলেন, আগে জ্যোতি বসু বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মতো মুখ্যমন্ত্রীরা সপ্তাহে নির্ধারিত দিনে বিধানসভায় আসতেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নির্ধারিত দিন শুক্রবার নিয়মিত অধিবেশনে আসেন না। তাঁর অনুপস্থিতির জন্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব বহু দিন বাতিল হয়ে যায়। সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে এটা ভাল লক্ষণ নয়।
মানসবাবুকে সমর্থন করেন সিপিএমের আনিসুর রহমান-সহ বাম পরিষদীয় নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্যে আবার প্রবল আপত্তি জানান বৈঠকে হাজির মন্ত্রীরা। পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় আসেন, বক্তৃতাও করেন। কিন্তু বিরোধীরা সভায় থেকে ধৈর্য ধরে শোনেন না! কংগ্রেস এবং বাম নেতারা আবার পাল্টা বলেন, যখন খুশি এসে বক্তৃতা করার কথা তাঁরা বলছেন না! শুধু চাইছেন নির্দিষ্ট দিনে এসে বিধায়কদের প্রশ্নের উত্তর দিন মুখ্যমন্ত্রী।
দু’তরফের চাপানউতোরে এই বিতর্কের মীমাংসা হয়নি। বৈঠকের পরে স্পিকার বিমানবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী সভায় এসেছেন, উত্তর দিয়েছেন, তার রেকর্ড আছে। সব সময় মুখ্যমন্ত্রীই উত্তর দেবেন, তার মানে নেই। প্রতিমন্ত্রী বা পরিষদীয় সচিবেরাও কম যোগ্য নন। শুধু মুখ্যমন্ত্রীকে দেখার জন্য তাঁকে এসে বসে থাকতে হবে, এটা কোনও কাজের কথা নয়!”
বিজেপি-র নবনির্বাচিত বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যও এই বৈঠকে ছিলেন। দীর্ঘ দিন পরে বিধানসভার সর্বদল বৈঠকে বিজেপি-র প্রতিনিধিত্ব থাকল। বিজেপি বিধায়ককে এ দিন স্বাগতও জানিয়েছেন শাসক ও বিরোধী পক্ষের একাধিক নেতা। প্রথম বৈঠকেই অবশ্য শমীকবাবুর বিশেষ কিছু করণীয় ছিল না। তিনি বলেন, “একটি সর্বভারতীয় দলের একমাত্র বিধায়ক হিসাবে আমাকে কার্য উপদেষ্টা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার আর্জি জানিয়েছি স্পিকারের কাছে।”
কংগ্রেস এই বৈঠকে জানিয়েছে, সারদা-কাণ্ড থেকে বর্ধমান, ভাঙড়, বীরভূমঘটনায় সার্বিক ভাবে তারা এ বারের অধিবেশনে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনবে। স্পিকার পরে বলেছেন, “প্রয়োজনীয় সংখ্যা থাকলে কেউ অনাস্থা আনতেই পারে। তার পরে নিয়ম মেনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” বামেরা বৈঠকে দাবি তুলেছে বিধানসভার কার্যবিধির ১৮৫ নম্বর ধারায় বেসরকারি আলোচনার জন্য একটি দিন ধার্য করা হোক। এসইউসি বিধায়ক তরুণ নস্করও বৈঠকে জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক ঘটনাবলির উপরে তিনি একটি বেসরকারি প্রস্তাব আনতে চান। বাম সূত্রের বক্তব্য, অন্য বার এমন প্রস্তাব এলেই সরকার পক্ষ যে ভাবে আপত্তি করে, এ বার সেই তুলনায় তাদের সুর ছিল অনেকটাই নরম।
স্পিকার জানিয়েছেন, ২০ নভেম্বর পর্যন্ত অধিবেশনে প্রায় ১৫টি বিল আসতে পারে। তার মধ্যে ন্যাশনাল জুডিসিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্টস কমিশন বিলটি গত বছর লোকসভায় পাশ হওয়ার পরে সব রাজ্যের বিধানসভায় পাঠানো হয়েছে। বিধানসভাগুলির সংশোধনী-সহ সেই বিল আবার ফেরত পাঠাতে হবে লোকসভায়। নতুন বিলের মধ্যে বেসরকারি দু’টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির এবং একটি সংশোধনী বিল আছে। পুর নির্বাচন সংশোধনী বিলও একটি আসার কথা। তবে কোনও বিল এখনও বিধানসভায় আসেনি। বর্ধমান-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে নিরাপত্তার খাতিরে বিধায়কদের অতিথি-পাস দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ রাখার আর্জিও জানিয়েছেন স্পিকার।