অ্যানোফিলিসও নয় কিউলেক্সও নয়, সন্তানকে ডেঙ্গি দেয় একমাত্র এডিস

বিজ্ঞানীদের মতে, স্ত্রী এডিসই একমাত্র মশা যার শরীরে এক বার ডেঙ্গি ভাইরাস ঢুকলে সে সারা জীবন তা বহন তো করেই, উপরন্তু পরবর্তী প্রজন্মেও সেই ভাইরাস দিয়ে যায়।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:০১
Share:

প্রতীকী ছবি।

অ্যানোফিলিস বিপজ্জনক। কিউলেক্সও। তবে এডিসের মতো কেউ নয়।

Advertisement

কারণ, অ্যানোফিলিস বা কিউলেক্স জন্মসূত্রে বাচ্চার মধ্যে ম্যালেরিয়া বা ফাইলেরিয়া ছড়াতে পারে না। একমাত্র এডিসই ডেঙ্গি ভাইরাসের উত্তরাধিকার দিয়ে যায়। সেই কারণেও ডেঙ্গির এমন বাড়বাড়ন্ত। শুধু জলে নয়, শুকনো জায়গাতেও এডিসের ডিম এক থেকে তিন বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। তাই একই সঙ্গে জলে এবং ডাঙায় মশার আঁতুড়ঘর ধ্বংস করতে না পারলে ডেঙ্গির এই রমরমা চলতেই থাকবে বলে আশঙ্কা পতঙ্গবিদদের।

বিজ্ঞানীদের মতে, স্ত্রী এডিসই একমাত্র মশা যার শরীরে এক বার ডেঙ্গি ভাইরাস ঢুকলে সে সারা জীবন তা বহন তো করেই, উপরন্তু পরবর্তী প্রজন্মেও সেই ভাইরাস দিয়ে যায়। সাধারণত মানুষ থেকে মশা বা মশা থেকে মানুষ— ডেঙ্গি সংক্রমণের চক্র এটিই। মানুষকে এ ক্ষেত্রে ‘রিজার্ভার’ বা আধার এবং মশাকে ‘ট্রান্সমিটার’ বা বাহক বলা হয়। কিন্তু মা মশার শরীরে যদি এক বার ডেঙ্গি ভাইরাস প্রবেশ করে, তা হলে সেই ভাইরাস ডিম, লার্ভার মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে পরিণত মশার শরীরেও ঢুকে যায়। স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের মেডিক্যাল এন্টোমোলজির প্রাক্তন প্রধান হিরন্ময় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এডিস মশার আর ডেঙ্গি ভাইরাসের জন্য কোনও মানুষকে কামড়ানোর বা কোনও ‘আধার’-এর প্রয়োজন হয় না। জন্মমাত্রই সেই মশা ‘রিজার্ভার’-এ পরিণত হয়। পরবর্তী প্রজন্মে ডেঙ্গি ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার এই বৈশিষ্ট্যকে বলে ‘ট্রান্সওভারিয়াল ট্রান্সমিশন’। ম্যালেরিয়া ছড়ানোর ক্ষেত্রে অ্যানোফিলিস বা ফাইলেরিয়া ছড়ানোয় কিউলেক্স মশার এই ক্ষমতা নেই। তাই ডেঙ্গি এতটা বিপজ্জনক।’’

Advertisement

ট্রপিক্যালের প্রাক্তন অধিকর্তা, পতঙ্গবিদ অমিয়কুমার হাটিও বলছেন, ‘‘মা মশার থেকে ডেঙ্গি পেলে পরবর্তী প্রজন্ম জন্মের গোড়া থেকেই ডেঙ্গি ছড়াতে সক্ষম।’’

পতঙ্গবিদদের বড় অংশের মতে, ডেঙ্গি ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পরেই সংশ্লিষ্ট মশা কোনও মানুষকে কামড়ালে তাঁর ডেঙ্গি হবে না। কারণ, ডেঙ্গি ভাইরাস মশার শরীরের সমস্ত কোষে বৃদ্ধি পেতে গড়ে দশ দিন সময় নেয়। দশ দিন পরে ওই ভাইরাস মশার লালাগ্রন্থিতে জমা হয়। তার পর থেকে যত বার সংশ্লিষ্ট মশা মানুষকে কামড়াবে, তত বার সে ডেঙ্গি ছড়াতে পারবে। পতঙ্গবিদ গৌতম চন্দ্র জানাচ্ছেন, মশা এক বার পেট ভরে রক্ত খেলে ডিম পাড়া পর্যন্ত সে আর রক্ত খায় না। রক্ত খাওয়ার তিন-চার দিন পরে সে ডিম পাড়বে। ডিম পেড়ে পেট খালি হলে আবার মশাটি রক্ত খায়। গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘রক্ত খাওয়ার দু’টি কারণ। এক, পেট ভরানো। দুই, রক্তের প্রোটিনে ডিমকে পরিপক্ক করা। মা মশার শরীরে সেই ভাইরাস থাকলে ডিম পাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা ডিমে চলে যাবে।’’

কলকাতা পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস জানাচ্ছেন, এডিস মশা অ্যানোফিলিস ও কিউলেক্সের থেকে বেশি সহনশীল ও শক্তিশালী। তাদের ডিম এক থেকে তিন বছর জল ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘এডিস মশা একই সঙ্গে অনেকের রক্ত খায়। হয়তো যাঁকে কামড়াল, তিনি নড়াচড়া করলে পাশের জনকে কামড়াল। এই কারণে একই পরিবারে একাধিক জনের ডেঙ্গি হয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement