চোপড়ার স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক মহম্মদ মোফতাজুল ইসলাম। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
ট্যাব-কাণ্ডে আরও এক গ্রেফতার। এ বার রাজ্য পুলিশের জালে ধরা পড়লেন এই ঘটনার অন্যতম মূল মাথা উত্তর দিনাজপুরের স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক মহম্মদ মোফতাজুল ইসলাম ওরফে জুয়েল। বুধবার দুপুরে ইসলামপুর থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের মাঝিয়ালি হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ তিনি। ট্যাব-দুর্নীতির সঙ্গে তাঁর সরাসরি যোগ রয়েছে বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। দীর্ঘ দিন ধরে তাঁর খোঁজ চলছিল। কলকাতা পুলিশ, রাজ্য পুলিশ, সিআইডি, সকলে তাঁকে খুঁজছিল।
রাজ্য সরকারি স্কুলগুলির একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের পড়াশোনার সুবিধার্থে ট্যাব কেনার জন্য সরকার ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্প চালু করেছিল। এই প্রকল্পের অধীনে এককালীন ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয় পড়ুয়াদের। সেখানেই দুর্নীতি ধরা পড়ে। অভিযোগ, এ বছর অনেক ছাত্রছাত্রী ট্যাব কেনার টাকা পাননি। বরং তা ঢুকেছে অন্য অ্যাকাউন্টে। কলকাতা থেকে শুরু করে জেলার একাধিক স্কুলে ট্যাবের টাকা পাননি পড়ুয়ারা। পুলিশ এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে বড়সড় চক্রের হদিস পায়। মূলত উত্তর দিনাজপুর থেকেই এই ট্যাব দুর্নীতির কলকাঠি নাড়া হয়েছিল বলে খবর মেলে। এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন স্কুলশিক্ষকেরা স্বয়ং। ট্যাব-কাণ্ডে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বার ধরা পড়লেন ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক মোফতাজুল।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের শেষের দিকে, ট্যাবের টাকার দুর্নীতি নিয়ে চারদিকে যখন আলোচনা চলছে, তখন নেপাল সীমান্তে চলে গিয়েছিলেন মোফতাজুল। সেখানে বেশ কিছু দিন তিনি গা-ঢাকা দিয়ে ছিলেন। পরে ফিরে আসেন ইসলামপুরে। গোপন সূত্রে খবর, পেয়ে বুধবার সেখানে হানা দেয় তদন্তকারী দল। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানতে পেরেছে, গত প্রায় ১০ বছর ধরে মাঝিয়ালি হাই স্কুলে চাকরি করছেন মোফতাজুল। ২০২২ সালে ওই স্কুলের প্রধানশিক্ষক অবসর নিলে অন্তর্বর্তিকালীন দায়িত্ব পান তিনি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসাবে স্কুলের পোর্টাল তিনিই সামলাতেন। সেখান থেকে কোনও গোলমাল করেছেন কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারীদের দাবি, ট্যাবের টাকা নয়ছয়ের অন্যতম মূলচক্রী এই মোফতাজুল। নিজের স্কুল দিয়ে শুরু করে ক্রমে তিনি বিভিন্ন রাজ্যে নিজের জাল বিস্তার করেন। ছোট ছোট দল গঠন করেন। প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কী ভাবে ট্যাবের টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে পাঠানো যায়, তার পরিকল্পনা করতেন অভিযুক্ত। কলকাতা এবং জেলার যতগুলি স্কুলে ট্যাব দুর্নীতির হদিস মিলেছে, ততগুলিতেই মোফতাজুলের নাম ছিল অভিযুক্তের তালিকায়।