প্রতীকী ছবি
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘লাল, নীল, সবুজ কার্ড’ বলে কটাক্ষ করলেও কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের আশা, আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’ প্রকল্পে যোগ দেবে।
খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রকের মতে, পশ্চিমবঙ্গের দিক থেকে প্রয়োজন শুধু নীতিগত সিদ্ধান্ত। ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’ প্রকল্পে যোগ দেওয়ার জন্য রেশন কার্ডের সঙ্গে আধারের সংযুক্তিকরণ, বায়োমেট্রিকের মাধ্যমে চিহ্নিত করার মতো কাজে পশ্চিমবঙ্গ অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। কেন্দ্রের হিসেব অনুযায়ী, এখনই পশ্চিমবঙ্গের ৯৬% রেশন দোকানে ই-পিওএস (ইলেকট্রনিক পয়েন্ট অব সেল) যন্ত্র বসে গিয়েছে। এই যন্ত্রে রেশন কার্ডের আসল মালিকই চাল-গম নিতে এসেছেন কি না, তা চিহ্নিত করা যায়। ৮০% রেশন কার্ডের সঙ্গে আধারের সংযুক্তিকরণও হয়ে গিয়েছে।
কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য সরকারের কর্তারাও একমত। প্রশাসনিক সূত্রের যুক্তি, মোদী সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’-এ যোগ দেওয়া পুরোটাই রাজ্য সরকারের শীর্ষ স্তরের নীতিগত সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। তবে প্রকল্প চালু করতে সমস্যা নেই।
প্রধানমন্ত্রী মোদী বুধবার ফের রাজ্যগুলিকে দ্রুত এই প্রকল্পে যোগ দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন। অতীতে এ নিয়ে রাজ্য সরকার সরাসরি তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার পরে মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি সরাসরি খারিজ করে দেননি। ১ জুন থেকে ২০টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ‘এক রেশন কার্ড’ প্রকল্পে যোগ দিয়েছে। কেন্দ্রের আশা, বাকি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল অগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবরে ধাপে ধাপে যোগ দেবে। পশ্চিমবঙ্গ ও অরুণাচল প্রদেশ ২০২১-এর ১ জানুয়ারি থেকে যোগ দেবে।
কী হবে এই কার্ডে? মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘মেদিনীপুরের মনোজ মাহাতো তাঁর পরিবারকে গ্রামে রেখে মুম্বইতে কাজ করতে গেলে, সেখানেই তাঁর ভাগের রেশন তুলে নিতে পারবেন।’’ খাদ্য সুরক্ষা আইনে প্রায় ৮০ কোটি মানুষকে মাসে মাথা পিছু ৫ কেজি চাল বা গম ভর্তুকি মূল্যে দেওয়া হয়। কিন্তু তা নির্দিষ্ট দোকান থেকেই তুলতে হয়। নয়া ব্যবস্থায় সেই বাধ্যবাধকতা থাকবে না। লকডাউনের আগেই এই ব্যবস্থা চালু হলে, পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেককেই গ্রামে ফিরতে হত না বলে ওই আমলার যুক্তি।
এপ্রিল থেকে তিন মাস মাথাপিছু পাঁচ কেজি করে চাল-গম বিনামূল্যে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তা আরও পাঁচ মাস বাড়ানো হয়েছে। কেন্দ্রের হিসেবে, পশ্চিমবঙ্গের জন্য প্রতি মাসে প্রায় ৩ লক্ষ টন চাল বরাদ্দ হয়েছে। এপ্রিলে ৯৫%, মে মাসে ৮২% বিলি হয়েছে। পরিবার-পিছু এক কেজি করে ডাল দিতে রাজ্যের জন্য মাসে প্রায় ১৪ হাজার টন ডাল বরাদ্দ হয়েছে। এপ্রিলে তার ৮৭% বিলি হয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত হিসেব মিলেছে।