বিশ্বরূপ মাহাতো এবং মাসুদুল রহমান
ছত্তীসগঢ়ে সহকর্মীর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছেন ইন্দো টিবেটান বর্ডার পুলিশের (আইটিবিপি) পাঁচ জওয়ান। পরে আত্মঘাতী হয়েছেন আক্রমণকারী জওয়ানও। বুধবার প্রতিবেশী রাজ্যের সেই হিংসাত্মক ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গের নামও। নারায়ণপুরের কাদেনারে আধাসেনা ক্যাম্পের ওই ঘটনায় ঘাতক এবং নিহত, দুই তালিকার সঙ্গেই যোগ রয়েছে এ রাজ্যের।
২০১৪ সালে ইন্দো টিবেটান বর্ডার পুলিশে চাকরি পেয়েছিলেন পুরুলিয়ার পুয়ারার ছেলে বিশ্বরূপ মাহাতো। আধাসেনার চাকরি, ফলে বিপদ হানা দিতে পারে যখন তখন। এ নিয়ে বিশ্বরূপের বাড়িতে আশঙ্কা কম ছিল না। ছেলে কাদেনারের এই ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার পর থেকে পরিবারের অনেকেই সিঁদুরে মেঘ দেখছিলেন। মাওবাদী অধ্যুষিত বস্তারের কাছাকাছি ছত্তীসগঢ়েরই নারায়ণপুর জেলা। যখন তখন হামলা হতে পারে ছেলের উপর, এই ভয় চোরাগোপ্তা হানা দিত বিশ্বরূপের পরিবারেও। এ দিন সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। তবে বিপদটা ঘনিয়ে এল নিজেদের দিক থেকেই। এ দিন সহকর্মীর গুলিতেই ঝাঁঝরা হয়ে যেতে হল বিশ্বরূপ মাহাতোকে। সকালে সহকর্মী মাসুদুল রহমানের সঙ্গে বচসা বাধে। আর তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই প্রাণ দিয়ে তার মূল্য চোকাতে হয় বিশ্বরূপ-সহ চার জনকে।
মঙ্গলবার রাতেও ছোট ছেলে বিশ্বরূপের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন তাঁর মা ভাগ্য মাহাতো। তখনও পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু, পর দিন সকালেই যেন সব হিসেব উল্টেপাল্টে গেল। সকালে কাদেনার ক্যাম্পে গুলি চলার খবরটা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানতে পারে বিশ্বরূপের পরিবার। আর তখন থেকেই খোঁচা দিচ্ছিল আশঙ্কাটা। ছেলেকে ফোনে বার বার চেষ্টা করেও পাচ্ছিলেন না বিশ্বরূপের বাবা ভীম, দাদা সুবোধ এবং অন্যান্যরা। কিছু ক্ষণের মধ্যেই অবশ্য সব স্পষ্ট হয়ে যায় দিনের আলোর মতো। আড়ষা থানার পুলিশ অফিসারেরা তাঁদের বাড়িতে এসে সরকারি ভাবে জানিয়ে দেন, আধাসেনার ক্যাম্পে গুলিবর্ষণে মৃত্যু হয়েছে বিশ্বরূপ মাহাতোরও। মুহূর্তেই স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা পরিবার। ছেলের এমন পরিণতি আশা করেনি বিশ্বরূপের পরিবার।
আরও পড়ুন: ছত্তীসগঢ়ে ৫ সহকর্মীকে গুলি করে মেরে আত্মঘাতী আইটিবিপি-র বাঙালি জওয়ান, নিহতদের মধ্যেও ২ জন বাঙালি
আরও পড়ুন: শুরুর আগেই ধরপাকড়, তবু হিন্দু জাগরণ মঞ্চের মিছিল আটকাতে পারল না পুলিশ, ধুন্ধুমার মধ্য কলকাতায়
নিহতদের তালিকায় রয়েছেন আর এক বাঙালিও। তিনি বর্ধমানের বাসিন্দা সুরজিৎ সরকার। বিশ্বরূপের মতো মাসুদুলের রাইফেলের বুলেট ফুঁড়ে দিয়েছে সুরজিৎকেও। এ দিনের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তাঁরও। স্বজন হারানোর সেই খবর পৌঁছেছে সুরজিতের বাড়িতেও। দুই নিহতের সঙ্গে সঙ্গে ঘাতক মাসুদুল রহমানও এ রাজ্যেরই বাসিন্দা। সহকর্মীদের খুন করে শেষ পর্যন্ত আত্মঘাতী হয়েছেন নদিয়ার বাসিন্দা মাসুদুল। আধাসেনা ক্যাম্পের সহকর্মীদের বন্ধুত্বের ছবিটা কী ভাবে হানাহানিতে বদলে গেল তার উত্তরই হাতড়াচ্ছেন নিহতদের আত্মীয়েরা।