West Bengal Panchayat Election 2023

‘রাতে দেহ নিয়ে লুকিয়েছিলাম আমবাগানে’ ।। ভাঙড়ের ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চান নওশাদ সিদ্দিকি

মঙ্গলবার রাতে গুলি, বোমায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল ভাঙড়। মুহুর্মুহু গুলি আর বোমায় রণক্ষেত্রের চোহারা নেয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই এলাকা। সেই সময়েই গুলিবিদ্ধ হন আইএসএফ কর্মী রেজাউল গাজি।

Advertisement

সারমিন বেগম

ভাঙড়  শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৩ ১৮:৩২
Share:

ভাঙড়ে নিহত আইএসএফ কর্মী রেজাউল গাজির দাদা জাইরুল গাজি (সামনের সারিতে মাঝখানে)। নিজস্ব চিত্র।

ভাঙড়ের গন্ডগোলে মঙ্গলবার রাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে আইএসএফ কর্মী রেজাউল গাজির। দেহ বাড়িতেই রয়েছে। পুলিশ নিতে এলে রেজাউলের পরিবার দেহ তাদের হাতে তুলে দিতে অস্বীকার করে। পরিবারের দাবি, ‘ভাইজান’ (নওশাদ সিদ্দিকি) এসে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবেন। যদিও নওশাদ নিজে রেজাউলের বাড়িতে আসেননি। আইএসএফের দু’জন প্রতিনিধিকে রেজাউলের বাড়িতে পাঠান। শুধু তাই-ই নয়, রেজাউলের বাবার সঙ্গে নওশাদ নিজে ফোনে কথাও বলেন। পাশাপাশি, ভাঙড়ে ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন ভাঙড়ের বিধায়ক। রাজ্যপালের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ‘ভাইজানের’ সঙ্গে কথা বলার পর, পরিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেজাউলের দেহ পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। আইএসএফের এক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, রেজাউলের বাবা-মা কথা দিয়েছেন, ন্যায়বিচারের জন্য তাঁরা পুত্রের দেহ পুলিশের হাতে তুলে দেবেন। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ অ্যাম্বুল্যান্স আসে দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য। সাড়ে ৬টা নাগাদ রেজাউলের দেহ নিয়ে যায়।

Advertisement

মঙ্গলবার রাতে গুলি, বোমায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল ভাঙড়। মুহুর্মুহু গুলি আর বোমায় রণক্ষেত্রের চোহারা নেয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই এলাকা। রাত তখন ১১টা। আইএসএফ প্রার্থী জিতে যাওয়ায় কাঁঠালিয়া থেকে মিছিল বার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আইএসএফ কর্মীরা। সেখানে জমায়েতও হয়েছিলেন তাঁরা। সেই মিছিলে যোগ দিতে ভোগালিয়া গ্রাম থেকে গিয়েছিলেন আএইএসএফ সমর্থক জাইরুল গাজি, তাঁর ভাই রেজাউল এবং আরও কয়েক জন। এক বছরেরও কিছু বেশি সময় বিয়ে হয়েছে রেজাউলের। তাঁর চার মাসের এক কন্যাসন্তান আছে। রেজাউল ব্যাগ তৈরির কাজ করতেন। গত রাতে কাঁঠালিয়ায় হঠাৎই গোলমাল শুরু হওয়ায় যে যে দিকে পেরেছেন পালিয়েছিলেন। জাইরুল জানান, ওই গোলাগুলির মাঝে হঠাৎই একটা চিৎকার শুনতে পান তিনি। পিছনে ফিরে দেখেন ভাই মাটিতে পড়ে আছেন। তখন আতঙ্কে সবাই লুকোনোর চেষ্টা করছিলেন। তাঁর কথায়, “আমরাও নিজেদের বাঁচাতে সরে আসি। ভাইকে পড়ে থাকতে দেখলাম। কিন্তু উপায় ছিল না ওকে তুলে আনার। মুহূর্তেই চারদিক ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। আমরা পাঁচ জন ছিলাম শুধু।”

জাইরুল আরও জানিয়েছেন, কোনও রকমে ভাইকে উদ্ধার করে সরিয়ে নিয়ে আসেন তিনি। কিন্তু তত ক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়। জাইরুল বলেন, “আমরা পাঁচ জন মিলে একটা আমবাগানে আশ্রয় নিয়েছিলাম। সেখান থেকে বাড়িতে ফোন করে ভাইয়ের মৃত্যুর খবর জানাই।” কিন্তু ওই ভাবেই আমবাগানে ভাইয়ের দেহ সমেত কয়েক ঘণ্টা লুকিয়ে ছিলেন প্রাণভয়ে। জাইরুলের দাবি, ফোন করে অ্যাম্বুল্যান্স ডাকা হয়। কিন্তু কেউ আসতে চায়নি। কী ভাবে ভাইয়ের দেহ নিয়ে যাওয়া হবে তা নিয়ে একের পর এক জায়গায় ফোন করতে থাকেন। শেষমেশ ফোনের চার্জও চলে যায়। জাইরুল বলেন, “এর পর একটি বাইকে করে রেজাউলের দেহ বাড়িতে নিয়ে আসেন।” মঙ্গলবার রাত থেকেই ভোগালি গ্রামের বাড়িতে রয়েছে রেজাউলের দেহ। পরিবারের বিশ্বাস, এর সুবিচার করবেন বিধায়ক নওশাদ। তাঁর ভরসাতেই তাকিয়ে ছিল গোটা পরিবার। রেজাউল বলেন, “বাড়িতে ২০০ পুলিশ এসেছিল। দেহ নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা দিইনি। ভাইজানের অপেক্ষায় ছিলাম। ভাইজান তাঁর সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। সেই মতো সব হচ্ছে।”

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement