‘একক’
রূপম ইসলাম মানেই খানিক আলাদা উন্মাদনা, অন্য রকম আবেগ। তাঁর গান, তাঁর কণ্ঠস্বর দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আট থেকে আশি মুগ্ধ করেছে সকলকে। সেই উত্তেজনার পারদ বজায় রেখে এ বারেও গত ৩১ মার্চ, রবিবার নজরুল মঞ্চে আয়োজিত হয়ে গেল রক্ সম্রাট রূপম ইসলামের ৫৩তম ‘একক’ অনুষ্ঠান। সারা বছরই তাঁর অনুরাগীরা মুখিয়ে থাকে এই বিশেষ দিনটির জন্য। এ বারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সময়ের অনেক আগে থেকেই নজরুল মঞ্চের সামনে ভিড় জমিয়েছিলেন অনুরাগীরা। সকলের মুখে ছিল একটাই নাম— ‘রূপম’।
রবিবারের সন্ধ্যায় নজরুল মঞ্চের দর্শক আসন ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। এর আগেও মোট ৫২টি একক অনুষ্ঠান করেছেন বাংলার এই রক-সম্রাটের। সবক’টিই ছিল হাউজ়ফুল! তাই এই ৫৩তম একক অনুষ্ঠানও নিয়েও বেশ আশাবাদী ছিলেন আয়োজক সংস্থা ‘এসপ্ল্যানেড’।
২৫টি গানের তালিকা নিয়ে সাজানো হয়েছিল এই একক অনুষ্ঠানটি। সঙ্গে ছিল বেশ কিছু অনুরোধের গানও। স্নিগ্ধতার আবেশ নিয়ে ‘পাশে যে বসে আছে’ গান দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন রূপম। তার পরে একে একে বিভিন্ন গানের মধ্যে দিয়ে তুলে ধরেন সমাজের বিভিন্ন দিক। সহজ সুরেলা ভাষায় বিদ্ধ করেছেন সিস্টেমকে। মঞ্চ থেকে অনুরাগীদের উদ্দেশ্যে বলছেন, “সামনেই ভোট, কিন্তু তাঁরা লাল, সবুজ, গেরুয়া, সাদা, নীল সবাইকে কালো পতাকা দেখাতে প্রস্তুত।”
রূপমের গানের মধ্যে দিয়ে উঠে এসেছে যাদবপুরের নির্যাতিতা থেকে সন্দেশখালি প্রসঙ্গ সব কিছুই। আবার কখনও তাঁর সঙ্গে সকলে মিলে গলা মিলিয়ে গর্জে উঠছেন ‘হোক কলরব’ মন্ত্রে। বরাবরই রূপমের ‘একক’ অনুষ্ঠানগুলি ‘ফসিল্স’-এর অন্য কনসার্টের থেকে ভীষণই আলাদা রকমের হয়। গিটার হাতে মঞ্চ জুড়ে শুধুই রূপম ইসলাম। গানের পাশাপাশি রূপম তাঁর অনুরাগীদের মুগ্ধ করেছেন বাদ্যযন্ত্র প্রদর্শনীতেও। কখনও গিটার, কখনও বা সুরেলা মাউথঅর্গ্যান আবার কখনও বেজে উঠেছে তাঁর নিপুণ হাতের সিন্থেসাইজ়ার। এক কথায়, ‘একক’-এর মঞ্চে দর্শক শুধু গায়ক রূপমকেই দেখেনি। দেখল গীতিকার রূপমকেও।
সারা বছর জুড়ে ‘ফসিল্স’-এর কনসার্ট অনেকগুলি হলেও এই একক অনুষ্ঠান বছরে একবার বা দু’বার হয়। তাই এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে সকলের উত্তেজনাও থাকে তুঙ্গে। গতকালের ‘একক’ অনুষ্ঠানটি দু’টি পর্বে সাজানো হয়েছিল। প্রথম পর্বে রূপম নিজের পছন্দসই বেশ কিছু গান গাইলেও দ্বিতীয় পর্বে ছিল শ্রোতাদের অনুরোধের গান। দর্শকদের অনুরোধে গাইলেন ‘হু অ্যাম আই’। তাঁর সঙ্গে গলা মেলালেন গোটা অডিটোরিয়াম।
প্রতি বারেই এই অনুষ্ঠান থেকে সংগৃহীত পুরো অর্থ দান করা হয় ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার তহবিলে। এই বারেও তার অন্যথা হবে না বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। আয়োজকরা আরও বলেছেন, “গোটা রাজ্যের সবক’টি জেলা থেকে অনুষ্ঠান দেখতে এসেছেন রূপমের ভক্তরা। বেশি দূর থেকে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের একটা বড় অংশই কলকাতায় পৌঁছে গিয়েছিলেন আগের রাতে।” দূর থেকে আসা শ্রোতাদের থাকার ব্যবস্থাও করছিলেন আয়োজকরাই।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে গাইলেন দর্শকদের বহু অনুরোধের গান, ‘ক্ষুধার্ত মাংসাশী।’ গানের মধ্যে দিয়ে উঠে এল যৌনতা, নির্যাতনের অন্ধকারাছন্ন দিকগুলি। আবার কখনও তিনি শাণিত ভাষায় ব্যঙ্গার্থক সুরে বলে উঠেছেন, ‘আমরা বাঙালী তো!’ অনুষ্ঠান শেষের আগে রূপমের কথায় দর্শকরা গাইলেন, ‘ফিরে চলো।’ অনুষ্ঠানের অতিথি আসনে উপস্থিত ছিলেন খ্যাতনামা চিত্র পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়।
অনুষ্ঠানের শেষে, ‘আমি যাই’ গানের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানলেন রক্ গুরু রূপম ইসলাম। তবে শেষের গান রূপমের একার ছিল না, শেষের গান ছিল সকলের। রূপম ইসলাম তাঁর সুরেলা জাদুতে বেঁধে ফেললেন গোটা অডিটোরিয়ামকে।
অনুষ্ঠানের ডিজিটাল মিডিয়া পার্টনার ছিল আনন্দবাজার অনলাইন।