স্বামী বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তৃতার উদ্যাপনে নজরুল মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার।—নিজস্ব চিত্র।
অনেকটাই এক বছর আগের বক্তৃতার ‘অ্যাকশন রিপ্লে’। তবু স্বামী বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তৃতার উদ্যাপন-মঞ্চে ফের তাঁকে ঢাল করেই সমালোচকদের জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রামকৃষ্ণ মিশনের ইনস্টিটিউট অব কালচার আয়োজিত অনুষ্ঠানটিতে নিজেই আসতে আগ্রহী ছিলেন তিনি। সেই মতো তড়িঘড়ি বৃহত্তর পরিসরে নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠানটি সরিয়ে নিয়ে যান মিশন কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেই অনুষ্ঠানের মঞ্চ মমতার কাছে কার্যত সমালোচকদের জবাব দেওয়ার মঞ্চই হয়ে উঠল।
শিকাগোর ধর্ম মহাসভা অবধি পৌঁছতে সহায়সম্বলহীন সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের বিপুল বাধা লঙ্ঘনের কথা তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, “স্বামীজিকেও অনেক সমালোচনা, অনেক বিতর্ক, অনেক কষ্ট, বুকে ব্যথা সহ্য করে লক্ষ্যে পৌঁছতে হয়েছিল। তিনি আত্মশক্তিতে বলীয়ান বলেই তা পেরেছিলেন!” এই প্রসঙ্গের সূত্র ধরেই তিনি বলতে থাকেন, “আয়নায় আগে নিজের মুখটা দেখতে হবে। কে কী বলল, সমালোচনা করল হার্ডলি ম্যাটার্স। নিজের কাজে ভরসা রাখ, বিশ্বাস রাখ, নিজে এগিয়ে যাও, কেউ কিছু করতে পারবে না।”
সারদা-তদন্তে ইতিমধ্যে এ রাজ্যে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রী ও তাঁদের ঘনিষ্ঠদের ধরপাকড় ও জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে সিবিআই। এর পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়ে কাজ করছে বলে সরব তৃণমূল নেতৃত্ব। এ দিন স্বামী বিবেকানন্দ-বিষয়ক অনুষ্ঠানটিতে মমতার বক্তব্য তারই প্রাসঙ্গিক প্রতিক্রিয়া বলে অনেকে মনে করছেন।
গত বছর বিবেকানন্দের সার্ধশতবর্ষের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে উত্তর কলকাতায় স্বামীজির পৈতৃক বাড়ি ও বেলুড় মঠেও অবশ্য একই সুরে কথা বলেছিলেন তিনি। সে বার কিছুটা ঘুরিয়ে বলেন, মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে বিবেকানন্দকেও সংবাদমাধ্যমের সমালোচনার সামনে পড়তে হয়েছিল।
মমতার এ দিনের বক্তব্যে অবশ্য কিছুটা আত্মসমালোচনার সুরও শোনা গিয়েছে। বিবেকানন্দের ‘জ্ঞানযোগ’ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলতে থাকেন, “গরুকে কখনও মিথ্যে বলতে শোনা যায় না! তবু সে গরু, মানুষ নয়... হাজার বার ব্যর্থ হলে আর একবার চেষ্টা কর!” মুখ্যমন্ত্রীর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ।
কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি দফতরের আর্থিক আনুকূল্যে রামকৃষ্ণ-সারদা-বিবেকানন্দের ছবি ও বাণীতে মোড়া একটি ভ্যান ‘বিবেকানন্দ চেতনা রথ’-এর এ দিন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মমতা।
স্বামীজির অনুষ্ঠানটিতে আসার তাগিদের জন্য রাজ্যের ‘একাই একশো দিদি’ মমতাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইনস্টিটিউট অব কালচার-এর সম্পাদক স্বামী সুপর্ণানন্দও। মঞ্চে বসে বক্তৃতা শোনার ফাঁকে তাঁকে খসখস করে ডটপেনে দুর্গার মুখ, গ্রাম্যবধূ, কাশফুলের ছবি এঁকে, দু’-চার ছত্র কবিতা লিখে উপহার দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।