ফাইল ছবি
কোথাও কর্তৃপক্ষের দৃঢ় সিদ্ধান্তে অফলাইনে অর্থাৎ ক্লাসঘরে বসেই পরীক্ষা শুরু আবার কোথাও অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে ছাত্রছাত্রীদের অনশন, ঘেরাও। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের সিমেস্টার পরীক্ষা নিয়ে বুধবার এমনই বিপরীত ছবি দেখা গেল বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে।
মঙ্গলবার ঘেরাও, উপাচার্যের দরজায় লাথি মেরে বিক্ষোভের পরে কর্তৃপক্ষের দৃঢ়তায় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ দিন অফলাইনে সিমেস্টার পরীক্ষা শুরু হয়েছে। মাত্র দু’জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। অন্য দিকে, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন পরীক্ষার দাবিতে পড়ুয়াদের বিক্ষোভ-অনশন চলছে। ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভের জেরে আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়েও এ দিন আসন্ন সিমেস্টার পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অনলাইনে পরীক্ষার দাবিতে রবীন্দ্রভারতীর পড়ুয়াদের একাংশ মঙ্গলবার বিটি রোড ক্যাম্পাসে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান। এক সময় মুহুর্মুহু লাথি মারা হতে থাকে উপাচার্যের ঘরের দরজায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ডাকতে বাধ্য হন উপাচার্য সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরী। তবে উপাচার্য জানিয়েছেন, ক্যাম্পাসে এ দিন আর কোনও গোলমাল হয়নি। অফলাইন পরীক্ষা হয়েছে শান্তিতে।
অফলাইন না অনলাইন, কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষা হবে, সেই বিষয়ে আলোচনার জন্য এ দিন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। রেজিস্ট্রার নুরুস সালেম জানান, কর্তৃপক্ষের তরফে অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা তা মানতে চাননি। ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য, তাঁদের পাঠ্যক্রমই শেষ হয়নি। যেটুকু ক্লাস হয়েছে, তা অনলাইনেই। তাই তাঁরা অনলাইনেই পরীক্ষা দেবেন।
এই দাবিতে পড়ুয়াদের একাংশ সোমবার থেকে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউ টাউন ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন। মঙ্গলবার তাঁদের অনশন শুরু হয়। পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাসে উপাচার্য আবু তাহের কামরুদ্দিন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আধিকারিককে মঙ্গলবার বেশি রাত পর্যন্ত ঘেরাও করেও রাখা হয়। একই ভাবে এ দিন উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে ঘেরাও করা হয় নিউ টাউন ক্যাম্পাসে। বেশি রাত পর্যন্ত ঘেরাও চলে। অনশনকারী কয়েক জন ছাত্রছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন।
অনলাইনে পড়াশোনা হয়েছে, তাই পরীক্ষাও অনলাইনে নিতে হবে বলে দাবি তুলেছেন কাটোয়া কলেজের পড়ুয়ারাও। এ দিন ওই কলেজের সামনে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। অধ্যক্ষকে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। পড়ুয়ারা বলেন, ‘‘করোনার কারণে প্রায় দু’বছর পঠনপাঠন বন্ধ ছিল। তখন অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে অফলাইনের পড়াশোনা আরম্ভ হলেও এখনও পর্যন্ত অনেক পাঠ্যক্রম শেষ হয়নি। অনলাইনে পরীক্ষা না-হলে আমরা আন্দোলনে নামব।’’ কলেজের অধ্যক্ষ নির্মলেন্দু সরকার বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের দাবি কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’’
অনলাইনে পরীক্ষার দাবিতে এ দিন হাবড়া শ্রীচৈতন্য কলেজে অধ্যক্ষের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা। ছাত্রছাত্রীদের দাবি, করোনা ও লকডাউন পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ ক্লাসই হয়েছে অনলাইনে। তাঁরা ঠিকঠাক পড়াশোনা করতে পারেননি। কলেজের পক্ষ থেকে ছাত্রছাত্রীদের মৌখিক আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এই আশ্বাস পেয়ে বিক্ষোভ তুলে নেন ছাত্রছাত্রীরা।
গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়ে এ দিন কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দিয়েছে টিএমসিপি। তাদেরও দাবি, পরীক্ষার্থীদের মুখ চেয়ে পরীক্ষা নিতে হবে অনলাইনে। যদিও কর্তৃপক্ষের কেউ কেউ বলছেন, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা যদি অফলাইনে হতে পারে, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর হতে অসুবিধা কোথায়! বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক বিশ্বরূপ সরকার বলেন, ‘‘আগামী সপ্তাহে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে।’’ রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদেরই একাংশ চাইছেন, পরীক্ষা নেওয়া হোক অনলাইনে।