রাজঘাটে অভিষেকের ধর্না কর্মসূচি। —সংগৃহীত।
তাঁরা খাতায়কলমে বিজেপি বিধায়ক। বিধানসভার নথি অনুযায়ী তাঁরা এখনও পদ্মশিবিরেরই অংশ। কিন্তু তাঁরা সোমবার দিল্লির রাজঘাটে জোড়াফুলের সঙ্গে মিশে গেলেন। যোগ দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ধর্না কর্মসূচিতে। আওয়াজ তুললেন, ‘‘বাংলার মানুষের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা মানছি না! মানব না!’’
উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী, বাঁকুড়ার বিষ্ণপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ, আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল এবং উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস— এঁরা সকলেই ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে জিতেছিলেন বিজেপির টিকিটে। পরে তাঁরা তৃণমূলে যোগ দেন। কিন্তু নথিপত্রে এখনও তাঁরা পদ্মশিবিরেরই। তাঁরা যোগ দিয়েছেন দিল্লিতে পদ্ম-বিরোধী কর্মসূচিতে।
কেন? তাঁরা তো এখনও সরকারি ভাবে বিজেপির বিধায়ক। তাঁরা নরেন্দ্র মোদীর সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলছেন? পাল্টা যুক্তির কমতি নেই ‘বিজেপি’ বিধায়কদের। রায়গঞ্জের কৃষ্ণের বক্তব্য, ‘‘আমি তো কোনও কেন্দ্র-বিরোধী কর্মসূচিতে আসিনি! বাংলার মানুষের দাবিতে আন্দোলনে এসেছি। আমার রাজ্যের মানুষের পাওনার দাবিতে তো আসতেই পারি।’’ আলিপুরদুয়ারের সুমনের বক্তব্য, ‘‘এটা তো কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। বাংলার মানুষের প্রাপ্য দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন। আমার বিধানসভা এলাকার মানুষও তো বঞ্চিত! বিধায়ক হিসাবে এখানে যোগ দেওয়াটাই উচিত বলে মনে করেছি।’’ বাগদার বিশ্বজিৎ এবং বিষ্ণুপুরের তন্ময় ফোন ধরলেও ব্যস্ততার মাঝে কথা বলতে পারেননি। তবে তাঁরা জানিয়েছেন, দিল্লিতেই রয়েছেন।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পর বিজেপির টিকিটে জেতা বিধায়কদের মধ্যে প্রথম তৃণমূলে গিয়েছিলেন মুকুল রায়। যদিও সোমবার রায়সাহেবকে দেখা যায়নি দিল্লিতে। জানা গিয়েছে, তিনি বেশ অসুস্থ। মুকুলের পরে এক এক করে বাকিরা ফুলবদল করেছিলেন। মুকুলকে বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান নিয়োগ করা নিয়ে কম তোলপাড় হয়নি। হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দেন, মুকুল যে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, তেমন কোনও ‘প্রমাণ’ নেই। অতএব, তিনি বিজেপির-ই বিধায়ক। পরিষদীয় রাজনীতিতে সাধারণত বিরোধীদলের বিধায়কই পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত হন। ফলে ‘বিজেপির’ মুকুল ওই পদে থাকতেই পারেন। পরে অবশ্য মুকুল নিজেই ওই কমিটির চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তা মেনে স্পিকার কৃষ্ণ কল্যাণীকে সেই পদে নিয়োগ করেন। খাতায়কলমে তিনিও বিরোধী শিবিরেরই বিধায়ক। তাঁকেও সোমবার অভিষেকের কর্মসূচিতে দেখা গিয়েছে দিল্লিতে, বাংলার মানুষের দাবি আদায়ে আন্দোলনে।