ফাইল চিত্র
সাসপেন্ডের চিঠি পাঠানো হল বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেনকে। একই সঙ্গে শুক্রবার সন্ধ্যায় সাসপেন্ড করা হয় বিশ্বভারতী প্রাক্তন কর্মসচিব সৌগত চট্টোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন ফিনান্স অফিসার শমিত রায়কে। অর্থাৎ, বর্তমান কর্তৃপক্ষ বিশবিদ্যায়ের প্রাক্তন কর্তৃপক্ষকেই একপ্রকার ছেঁটে ফেলল। শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় অফিস থেকে চিঠি পৌঁছে দেওয়া হয় তাঁদের কাছে।
বুধবারের বিশ্বভারতীর কর্মসমিতির বৈঠকে এই তিন প্রাক্তন আধিকারিকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের দু’দিন পরেই সাসপেন্ড করা হল তিন আধিকারিককে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্বভারতীর বিভিন্ন ভবনগুলির অধিকর্তাদের মধ্যে বয়ঃজ্যেষ্ঠ হওয়ার নীতিতে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে কর্মভার গ্রহণ করেন সবুজকলি সেন। ওই মাসেই কর্মসমিতির একটি বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বিকৃত করার অভিযোগ ওঠে এই তিন আধিকারিকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ নিষ্পত্তির উদ্দেশে কর্মসমিতির সদস্য দুলালচন্দ্র ঘোষের নেতৃত্বে এক সদস্যের কমিটি গঠন করে বিশ্বভারতী। সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই সাসপেন্ড করা হল তিন আধিকারিককে।
অভিযুক্তদের বক্তব্য, কমিটির তরফ থেকে তাঁদের শো-কজ করা হলে, অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে তাঁরা বেশ কিছু নথি দেখতে চান। কিন্তু, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কোনও নথি তাঁদের পাঠাননি। আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগ না দিয়েই কর্তৃপক্ষ একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও তাঁদের অভিযোগ। প্রাক্তন কর্মসচিব সৌগত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিশ্বভারতীর সঙ্গে সব রকম সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত। আমরাও চাই বিষয়টির সুষ্ঠু নিষ্পত্তি হোক। বিশ্বভারতী নিশ্চয়ই তার বক্তব্য বলবে। একই সঙ্গে যেন আমাদের বক্তব্যও বলার সুযোগ দেওয়া হয়। আশা করি, আমাদের বিষয়ে যে তদন্তই হোক, তা উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে ঠিক সিদ্ধান্তেই পৌঁছবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়েরই একটি সূত্রের খবর, ২০১৮ সালের ৫ মার্চ তৎকালীন কর্মসচিবের উদ্দেশে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের পাঠানো একটি চিঠিতে বলা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকের নির্দেশ অনুসারে অধিকর্তা হিসেবে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও সবুজকলি সেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে কর্মসমিতির গৃহীত সিদ্ধান্ত বিকৃত করার প্রয়োজন হল কেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে বিশ্বভারতীর নানা মহল থেকে। যদিও বিশ্বভারতীর কর্মসমিতির রাষ্ট্রপতি মনোনীত সদস্য সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে এটি একটি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। যাতে ভবিষ্যতে অন্য কেউ এই ধরনের কাজ করার সাহস না করেন।”
বিশ্বভারতীর ইতিহাসে এই ঘটনা নজিরবিহীন। রাজ্যের একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এক দিন আগেই উৎকর্ষের তালিকায় ১৩ ধাপ অবনমন ঘটেছিল বিশ্বভারতীর। প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সহ তিন জনকে সাসপেন্ড করার বিষয়টিও হল। এই নিয়ে সবুজকলি সেন কোনও বক্তব্য দিতে চাননি।