ফাইল চিত্র।
ভূপতিনগরকাণ্ডে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। সোমবার এই ঘটনা সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিতে ভূপতিনগর থানার ওসির উপর রেগে গিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। এ বার তদন্ত থেকেই তাঁকে দূরে থাকতে বলল আদালত। মঙ্গলবার বিচারপতি সেনগুপ্ত জানান, ভূপতিনগরের ২১ জন বিজেপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ৪০টি মামলার তদন্ত করতে পারবেন না ভূপতিনগর থানার ওসি। আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বহাল থাকবে এই নির্দেশ।
জানা গিয়েছিল, তপন মিদ্যা নামে পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরের এক বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে গত তিন বছরে ২৬টি ফৌজদারি মামলা রুজু করে পুলিশ। ১৫টি চার্জশিটও জমা করেছে তারা। কিন্তু সম্প্রতি ধৃতের আইনজীবীর অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর নেই। তা-ও একটি মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার পর একের পর এক মামলায় তাঁকে ‘শোন অ্যারেস্ট’ দেখানো হয়েছে। এ নিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই বিজেপি নেতা।
সোমবার সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতির ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছিল ভূপতিনগর থানার ওসিকে। তাঁর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল আদালত। মঙ্গলবার আবারও সেই মামলার শুনানি ছিল হাই কোর্টে। শুনানি শেষে বিচারপতি সেনগুপ্ত বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে হওয়া ৪০টি মামলায় ভূপতিনগর থানার ওসির তদন্তের উপর অন্তর্বর্তিকালীন স্থগিতাদেশ দিলেন।
বিচারপতি আরও বলেন, ‘‘এই ৪০টি মামলা ছাড়া বাকি মামলাগুলির তদন্ত করতে পারবেন ওসি। কিন্তু আদালতের অনুমতি ছাড়া কোনও চূড়ান্ত রিপোর্ট দিতে পারবেন না তিনি।’’ শুধু তা-ই নয়, মঙ্গলবার রাজ্যের কাছেও রিপোর্ট তলব করেছেন বিচারপতি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এই ৪০টি মামলার মধ্যে কতগুলি ক্ষেত্রে বিস্ফোরণের অভিযোগ আছে? সেগুলি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানানো হয়েছে কি? রিপোর্ট দিয়ে জানাক রাজ্য।’’
উল্লেখ্য, সোমবার এই মামলায় ভূপতিনগর থানার তরফে একটি রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, আদালত অভিযুক্তকে রক্ষাকবচ দিলে, তিনি আসন্ন নির্বাচন ‘বানচালের চেষ্টা’ করতে পারেন। এই রিপোর্ট নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি সেনগুপ্ত। বিচারপতি পুলিশের কাছে জানতে চান, আদতে তপন মিদ্যার বিরুদ্ধে কতগুলো মামলা রয়েছে? ঠিক কতগুলো মামলায় অভিযোগ রয়েছে, তা নিয়ে রিপোর্ট তলব করা হয়েছিল। সোমবারের রিপোর্ট নিয়ে ওসির কাছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব তলব করেছিল আদালত। সোমবারের ওই রিপোর্টের জন্য মঙ্গলবার আদালতে ভুল স্বীকার করলেন ভূপতিনগর থানার ওসি।
অন্য দিকে, ভূপতিনগরে আধিকারিকদের উপরে ‘হামলা’ চালানোর ঘটনায় মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। প্রসঙ্গত, পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে ২০২২ সালের একটি বিস্ফোরণ মামলার তদন্ত করছে এনআইএ। তারই তদন্তে শনিবার ওই এলাকায় যায় এনআইএর কর্তারা। স্থানীয় দুই তৃণমূল নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গাড়িতে তোলার পরেই এনআইএর গাড়িতে হামলা হয় বলে অভিযোগ। শনিবারই ভূপতিনগর থানায় হামলার লিখিত অভিযোগ দায়ের করে এনআইএ। তবে সেই ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হননি। তার মধ্যেই শনিবার রাতে ভূপতিনগর থানায় এনআইএ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেছে ধৃত এক তৃণমূল নেতার পরিবার। সেই আবহেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে এনআইএ।