ফাইল চিত্র।
প্রথম দফাতেই বিরোধী শিবির ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিকে ভোটমুখী বলে চিহ্নিত করতে চেয়েছিল। বক্র প্রশ্ন তুলেছিল, তা হলে কি দু’বারের তৃণমূল সরকারের আমলে মানুষকে ঠিকঠাক পরিষেবা দেওয়া যায়নি?
সেই কটাক্ষ-তত্ত্ব অবশ্য খারিজ করে দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। রাজ্য প্রশাসনের অন্দরের মূল্যায়ন, চিরাচরিত নিয়মের বদলে সরকার পরিষেবা নিয়ে সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে পারলে তার কার্যকারিতা তুলনায় অনেক বেশি। কারণ, কোনও প্রকল্প ঘোষণার পরে যাঁরা নানা কারণে যথাসময়ে সেই সুযোগ-সুবিধা নিতে পারেন না বা পারছেন না, প্রশাসন সটান উপভোক্তার কাছে পৌঁছে গেলে প্রকল্পে তাঁদের অন্তর্ভুক্তি সহজ হয়। তাই ঘোষণা এবং তার বাস্তবায়নের মধ্যে দূরত্ব ঘোচাতেই দুয়ারে সরকার। দ্বিতীয় দফায় ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি শুরু করার আগে তাই প্রস্তুতিতে কোনও ফাঁক রাখতে চাইছে না রাজ্য।
সরকারি তথ্য বলছে, গত ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম দফার ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি চালু রাখার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত আবেদনের চাপে সেই সময়সীমা ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। অন্তত ২.৭৫ কোটি মানুষ (জনসংখ্যার প্রায় ২৫%) দুয়ারে সরকার কর্মসূচির সুবিধা পেতে বিভিন্ন শিবিরে যোগাযোগ করেন। ওই কর্মসূচিতে ১২টি প্রকল্পে আবেদন করেছিলেন অন্তত ১.৭৭ কোটি মানুষ। সরকারের দাবি, ১০০% আবেদনকারীকেই পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসাথীতে ৮৫.১৩ লক্ষ, জাতি শংসাপত্রে ২২.৪৪ লক্ষ, খাদ্যসাথীতে ২০.১৩ লক্ষ, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে ১২.১২ লক্ষ, কৃষকবন্ধুতে ১১.২৫ লক্ষ, বয়স্ক ও বিধবা পেনশনে ১৫ লক্ষ আবেদনকারী পরিষেবা পান। তা ছাড়াও ছিল শিক্ষাশ্রী, জয় জোহর, তফসিলি বন্ধু, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, ঐক্যশ্রী ইত্যাদি প্রকল্প। নবান্নের দাবি, ঘোষণা এবং বাস্তবায়নের মধ্যে ‘ফাঁক’ ভরাট করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেক প্রকল্পই চালু আছে। তাই সেগুলিতে ধারাবাহিক ভাবে আবেদন আসতেই থাকবে। একমাত্র স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প সব বঙ্গবাসীর জন্য চালু হওয়ায় তাতে আবেদনের সংখ্যা ছিল সর্বাধিক।
গত বারের দুয়ারে সরকারের শিবির থেকে বিভিন্ন পরিষেবা প্রদানে রাজ্য যে-সাফল্যের দাবি করেছিল, সেটা ধরে রাখাই এখন প্রশাসনের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, তৃতীয় তৃণমূল সরকারের আমলে প্রকল্পের বহর ও সংখ্যা দু’টিই বেড়ে গিয়েছে। গত বছর পরিবারের প্রধানত মহিলা প্রধানের নামে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেওয়ার উপরে জোর দেওয়া ছিল। এ বার যুক্ত হয়েছে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প, যেটা শুধু মহিলাদের জন্যই। সরকারের অনুমান, অন্তত ১.৬৩ কোটি উপভোক্তা লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে চাইবেন। ফলে আবেদন এবং তা যাচাইয়ের চাপ বাড়বে জেলা প্রশাসনের উপরে। তাই আগেভাগে আবেদনপত্র তৈরি করে জেলাগুলিকে সেই বিষয়ে অবহিত করানো হয়েছে। কোন কোন নথির ভিত্তিতে আবেদন মঞ্জুর হবে, তারও প্রচার চলছে সমান তালে। “আবেদনকারীদের যাতে হয়রান হতে না-হয়, সে-দিকে নজর রেখে কী ভাবে ন্যায্য উপায়ে আবেদন করা যায়, সেই পরামর্শ দিতে হবে,” বলেন এক জেলা-কর্তা।
দ্বিতীয় দফার ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে ১৬ অগস্ট থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পঞ্চায়েত এবং পুর ওয়ার্ডের ভিত্তিতে শিবির হবে। ৮-২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা পড়া আবেদনপত্রের যাচাই পর্ব সেরে ২৪-৩০ সেপ্টেম্বর পরিষেবা দেবে সরকার। দুয়ারে সরকারে এ বার থাকবে ছাত্রছাত্রীদের ঋণ কার্ড, আধার কার্ড সংযুক্তি, লক্ষ্মীর ভান্ডার, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আবেদনের সুযোগ। বাকিগুলি চালু প্রকল্প। এর মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের ঋণ কার্ড এবং লক্ষ্মীর ভান্ডার নতুন প্রকল্প।