বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ চাননি। কিন্তু রাজধর্ম পালনের যুক্তিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বিশ্ব বঙ্গ সম্মেলনে যোগ দিতে কলকাতা যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।
মমতার অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিক কোনও অনুমতি প্রধানমন্ত্রীর থেকে নেননি জেটলি। তবে তাঁর সফরসূচি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে রেখেছেন। মোদীর তরফে এখনও কোনও আপত্তির কথা জানানো হয়নি।
বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য জেটলির এই সফরের কথা জেনে খুবই ক্ষুব্ধ। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ অমিত শাহের কাছে অনুরোধ জানান, জেটলি যাতে কলকাতায় না যান। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের বক্তব্য, অরুণ জেটলিকে তাঁরা শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু যখন গোটা রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছেন, তখন এই সম্মেলনে এসে মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের দাবিতে সায় দেওয়াটা ঠিক হবে না। রাজ্য নেতৃত্বের দাবি মেনে, অমিত শাহের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে জেটলি শেষ পর্যন্ত কলকাতা সফর বাতিল করবেন, এমন কোনও ইঙ্গিত অবশ্য এখনও মেলেনি।
অমিত শাহ, সিদ্ধার্থনাথ সিংহ ও কৈলাস বিজয়বর্গীয়দের বক্তব্য— রাজ্যে একের পর এক ঘটনায় বিজেপি ও সঙ্ঘকে কোণঠাসা করতে নেমেছে মমতা প্রশাসন। যেমন, সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় রোজ ভ্যালি কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়ার পরে তৃণমূলের কর্মীরা কলকাতায় বিজেপির সদর দফতরে হামলা চালায়। কলকাতায় আরএসএস নেতা মোহন ভাগবতের সভা যাতে না হয়, তার জন্যও সচেষ্ট হয়েছিল প্রশাসন। শেষে আদালতের নির্দেশে ব্রিগেডে সেই সভা হচ্ছে। আসানসোলে বাবুল সুপ্রিয়র সাংসদ মেলাতেও বাদ সেধেছিলেন সেখানকার তৃণমূল পুরপ্রধান। এ ক্ষেত্রেও আদালতের নির্দেশে অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছে পুরসভা। বিধায়ক মহুয়া মৈত্রের এফআইআর-এর ভিত্তিতে কলকাতা পুলিশ বাবুলের নামে সমন জারি করে। বাবুল বৃহস্পতিবার হাজির হতে পারবেন না জানানোয় পুলিশ চার্জশিট দিতে চলেছে। শ্রীনু নায়ডুর খুনে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের নাম জড়িয়ে তাঁকে গ্রেফতার করার চক্রান্ত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন বাংলার নেতারা। তাঁদের কথায়— এমন সংঘাতের পরিস্থিতিতে জেটলির সফর ঠিক হবে না।
আবার মমতা সম্পর্কে মনোভাবের বিষয়ে বিজেপির মধ্যেই বিতর্ক রয়েছে। অমিত-সিদ্ধার্থনাথদের যুক্তি, মমতা এখন মোদী-বিরোধী মঞ্চ
গঠনে সক্রিয়। রাহুল গাঁধীর হাত ধরে এগোচ্ছে তৃণমূল। বাজেট অধিবেশনেও তাদের অবস্থান বদলানোর সম্ভাবনা নেই। এই মুহূর্তে জেটলিকে কলকাতায় পাঠিয়ে মমতা সম্পর্কে বিজেপির অবস্থান লঘু করার অর্থ হল, পশ্চিমবঙ্গে দলের সম্ভাবনাকে নষ্ট করে করা। আবার অরুণ জেটলিদের বক্তব্য, শাসক দলের দায়িত্ব সব সময়েই অনেক বেশি। জিএসটি পাশ করাতে হবে। এই কারণে মমতার সঙ্গে আলোচনার দরজাটা খুলে রাখা জরুরি। জেটলি মনে করেন, সিবিআই বা ইডি-র তদন্তের সঙ্গে কেন্দ্র-রাজ্য প্রশাসনিক সম্পর্কের যোগা থাকাটা উচিত নয়। আবার রাজনীতির মাঠে বিজেপি-তৃণমূল সংঘাতের প্রভাবও কেন্দ্র-রাজ্যের সম্পর্কে পড়া উচিত নয়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতর থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে, অরুণ জেটলিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বেশ কয়েক মাস আগে। অর্থাৎ কেন্দ্র নোট বদলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই। এর পর রাজ্য সরকার আর নতুন করে কোনও আবেদন-নিবেদন করেনি। অন্য কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকেও এ বার আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কিন্তু জেটলি এলে তাঁকে রাজনৈতিক সৌজন্য দেখাতে প্রস্তুত মমতার সরকার। রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের সময়েও অমিত শাহ ও সিদ্ধার্থনাথ সিংহ যখন মমতাকে দুর্নীতির দায়ে বিঁধছেন, অরুণ কিন্তু কলকাতায় গিয়ে অন্য সুরে কথা বলেন। সে দিনও ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন অমিত-সিদ্ধার্থরা। আজ আবার একই ভাবে তাঁরা ক্ষুব্ধ।
দেখার শুধু একটাই। মমতা নিয়ে এই বিবাদে প্রধানমন্ত্রী মোদী শেষ পর্যন্ত কী অবস্থান নেন!