ফাইল চিত্র।
অতিমারির প্রকোপ তখন তুঙ্গে এবং তার মোকাবিলায় বিধিনিষেধও তখন কঠোর ভাবে বলবৎ থাকায় যানবাহন চলাচল আর আমজনতার গতায়াত যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রিত। তা সত্ত্বেও আগের দু’বছরের তুলনায় ২০২১ সালে রাজ্যে পথ-দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে পথ-দুর্ঘটনায় প্রাণহানিও।
কেন এমনটা হল এবং দুর্ঘটনা বৃদ্ধির পিছনে কী কী কারণ রয়েছে, তা নিয়ে পর্যালোচনা শুরু করেছে রাজ্য যান-পুলিশ। উদ্দেশ্য, পথ-দুর্ঘটনা এবং তাতে মৃত্যুর সংখ্যা কমানো। একই সঙ্গে দুর্ঘটনা রোধে কী কী ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানো প্রয়োজন, তার রিপোর্ট তৈরি করার জন্যও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে জেলাগুলিকে। সেই সব রিপোর্ট পাঠাতে হবে ‘ডিস্ট্রিক্ট রোড সেফটি কমিটি’ বা জেলা পথ নিরাপত্তা কমিটিগুলির কাছে।
পুলিশি সূত্রের খবর, ২০২১ সালে রাজ্যে পথ-দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ৫৬০৭ জনের। ২০১৯ এবং ২০২০ সালে ওই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৫৫০০ এবং ৪৯২৭। গত বছর সারা রাজ্যে মোট দুর্ঘটনা ঘটেছে ১০,২২৬টি। ২০১৯ এবং ২০২০ সালে ওই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১০,১৫৮ এবং ৯১৮০।
রাজ্য ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, এই বৃদ্ধি নিয়ে পুলিশকর্তারা উদ্বিগ্ন। কী কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং কোন কোন এলাকায় দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি, তা যাচাইয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশি সূত্রের খবর, সব জেলায় দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বার করার কাজ এখনও শেষ হয়নি। যে-সব জেলায় সেই কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে, সেখানকার রিপোর্ট দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
পর্যালোচনার রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছর সব চেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলায়— ৮৮৫টি। তার মধ্যে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ২৮০টি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর। সেখানে ৭৪৪টি পথ-দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৪৫৯ জনের। তবে ওই সময় পর্বে পথ-দুর্ঘটনায় সব চেয়ে বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরে। সেখানে ৭৩০টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ৪৮৩ জনের।
ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, পর্যালোচনা করতে গিয়ে মাথায় রাখা হচ্ছে, কোন কোন এলাকায় সব চেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনাপ্রবণ সেই সব রাস্তার পাশে যদি হাটবাজার, বাসস্ট্যান্ডের মতো জনবহুল এলাকা থাকে, পথ-দুর্ঘটনার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে প্রচার চালাতে বলা হয়েছে। ওই সব এলাকায় রোড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কোনও সমস্যা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অর্থাৎ দুর্ঘটনাস্থলে যদি রাস্তার বাঁক থাকে কিংবা কোথাও সিগন্যাল বসানোর প্রয়োজন থাকে, দ্রুত সেই কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজ্য সড়ক এবং অন্যান্য ছোট রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটছে বেশি।
রাজ্য যান-পুলিশের এক কর্তা জানান, পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন জেলায় মোটরবাইক ও চার চাকার গাড়ির দুর্ঘটনা বেড়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে জাতীয় সড়ক ১১৬বি এবং চার নম্বর রাজ্য সড়কে। সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।