শুধু বেসরকারি হাসপাতাল নয়, এ বার প্রাইভেট ডাক্তারদের চেম্বারেও যদি একই পরীক্ষা ‘অপ্রয়োজনে’ বার বার করতে বলা হয়, কিংবা নির্দিষ্ট কোনও ল্যাবরেটরি থেকেই করতে চাপ দেওয়া হয়, তা হলে তার বিরুদ্ধেও নয়া কমিশনের দ্বারস্থ হতে পারবেন রোগীরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় নয়া ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট বিল পাশ করার পরের দিনই এই ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। তাঁরা জানিয়েছেন, যদি নিজস্ব চেম্বারে চিকিৎসক রোগীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বা অপ্রয়োজনে বিপুল টাকার ওষুধ কেনান, তা হলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা থাকছে।
মুখ্যমন্ত্রী শুক্রবার বিধানসভায় এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানাননি। শুধু জানিয়েছিলেন, একক ডাক্তারদের চেম্বারগুলি এ বার থেকে মেডিক্যাল কনসালট্যান্সি ক্লিনিক হিসেবে গণ্য হবে। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি এই চেম্বারগুলি নতুন বিলের আওতায় থাকছে? কারণ, ২০১০ সালের আইনে এই জায়গাতেই ধাক্কা খেয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। ডাক্তারদের চেম্বারে কিছু বিশেষ পরিকাঠামো তৈরি করতে বলা হয়েছিল, সে সময় যার বিরোধিতা করে চিকিৎসকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পরে আইএমএ-র দখল নিয়েছিলেন তৃণমূলপন্থী চিকিৎসকেরা। তাঁরাও এর বিরুদ্ধে সরব হন। বস্তুত, তাঁদের চাপেই ২০১৫ সালে ওই আইনের বিধি থেকে সিঙ্গল ডক্টরস চেম্বারগুলিকে বাদ দেওয়া হয়।
তা হলে কি এ বার বিরোধিতার পথ থেকে সরে এল আইএমএ? নাকি নিজেদের দলের চিকিৎসকদের বিরোধিতাকে আর আমল দিচ্ছে না তৃণমূল সরকার? স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী নিজে ২০১৭-র নতুন বিলটি তৈরির সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কোর কমিটিতে ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘এই কনসালট্যান্সি ক্লিনিকগুলির পরিকাঠামো নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। তবে সেখানকার ডাক্তাররা যদি অহেতুক পরীক্ষা করান বা ওষুধ কিনতে বাধ্য করেন, তবে এর বিরুদ্ধে রোগী কমিশনে অভিযোগ জানাতে পারবেন।’’ আর রাজ্য আইএমএ-র সম্পাদক তথা তৃণমূলের চিকিৎসক নেতা শান্তনু সেন বলেন, ‘‘আমাদের বিরোধিতাটা ছিল পরিকাঠামো সংক্রান্ত কড়াকড়ি নিয়ে। সেটা থেকে যখন সরকার সরে এসেছে, তখন আর কিছু বলার নেই।’’
আরও পড়ুন:অভিজ্ঞতা ভাল নয়, বলছেন অভিষেক
একাধিক চিকিৎসকের বক্তব্য, সরকার তাঁদের আইনের আওতায় আনছেন তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা ওষুধের ক্ষেত্রে ‘বাড়াবাড়ি’টা বিচার করবেন কে? রোগীর ধারণার ভিত্তিতেই তো অনেক অভিযোগের জন্ম হবে। তাতে স্বাভাবিক চিকিৎসার ছন্দটা নষ্ট হবে।
বিভ্রান্তি রয়েছে আর একটি বিষয়েও। এই ক্লিনিকগুলির এত দিন ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট অ্যাক্টে রেজিস্ট্রেশন দরকার হত না। ২০১৭ সালের নতুন বিল পাশ হওয়ায় এ বার কি নয়া আইনে সেগুলির রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে? যদি তা না হয়, তা হলে স্বাস্থ্যকর্তারা যা-ই বলুন, ক্লিনিকগুলির উপরে সরকারি নজরদারি থাকবে না। তাতে আইন ভাঙার যথেষ্ট সুযোগই এদের থাকবে।