ভারী মাথার প্রশাসন এবং তার পিছনে সরকারি কোষাগার থেকে দেদার খরচ, সরকারের এই চেনা ছবিটা এ বার বদলাতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই ৬৩টি দফতরের মধ্যে ১১টিকে মিশিয়ে দিয়ে ৫২টি দফতর গঠন করলেন তিনি। শুক্রবার নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে। এখন রূপায়ণের পালা।
একাধিক প্রশাসনিক কর্তার মতে, ১১টি দফতরকে অন্য দফতরের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েই কাজ শেষ হল না। পরের ধাপে মিশে যাওয়া দফতরগুলির এক সঙ্গে কাজ করা, খরচের বহর কমানো, কর্মীদের প্রয়োজন মতো ব্যবহার করা, গাড়ি ও বাড়ি-সহ পরিকাঠামোগত খরচ কমাতে পারলে তবেই এর উদ্দেশ্য সফল হবে। আর সেটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘বাজেট তৈরি থেকে পরিচালন খরচ, সবেতেই একাধিক দফতর মিশে যাওয়ার প্রভাব পড়বে। তাতে সরকারের অনেক খরচ বাঁচবে।’’
নবান্নের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, আগামী বছর থেকে রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি টালমাটাল হতে চলেছে। বছরে গড়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা শুধু ঋণ শোধে চলে যাবে। তার উপর আছে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ছেঁটে ফেলার চাপ। আগামী দু-এক বছরের মধ্যে পুরোদমে চালু হয়ে যাবে পণ্য পরিষেবা কর (জিএসটি)। সব মিলিয়ে রাজ্যের কোষাগারে বিপুল চাপ বাড়তে চলেছে। তাই রাজ্যকে যেমন রাজস্ব সংগ্রহের নতুন রাস্তা খুঁজতে হবে, তেমনই খরচও কমাতে হবে। দফতর কমিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সেটাই করছেন।
নবান্নের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, রাজ্যে ৬৩টি দফতর মিলিয়ে ৪২ জন মন্ত্রী আছেন। মুখ্যমন্ত্রী মনে করলে এখনও আরও দু’জনকে মন্ত্রিসভায় নিতে পারেন। অতিরিক্ত মুখ্যসচিব এবং প্রধান সচিব পর্যায়ের অফিসার আছেন ৪৪টি দফতরে। বাকি দফতর চলছে সচিব পর্যায়ের অফিসারদের দিয়ে। কিন্তু অন্যান্য রাজ্যে দফতরের মূল দায়িত্ব থাকে প্রধান সচিব বা অতিরিক্ত মুখ্যসচিব পদমর্যাদার অফিসারদের উপর। এ রাজ্যে এত বেশি দফতর যে অত জন প্রধান সচিবই নেই। এ রাজ্যে অতিরিক্ত মুখ্যসচিব ও প্রধান সচিবের সংখ্যা সব মিলিয়ে ৫২ জন। এখন ৫২টি দফতর হলে সব দফতরেই প্রধান সচিবদের বসাতে পারবেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতে দক্ষতাও বাড়বে।
নয়া পরিকাঠামোয় দফতর কমানোর পাশাপাশি রাজ্যে দু’টি নয়া প্রশাসনিক রেঞ্জ তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। এত দিন তিনটি রেঞ্জ ছিল— প্রেসিডেন্সি, বর্ধমান ও জলপাইগুড়ি। নতুন হল মালদহ ও মেদিনীপুর। গত মাসেই দু’টি নতুন রেঞ্জ তৈরির প্রস্তাব পাশ করেছে মন্ত্রিসভা। নবান্নের খবর, ওই দুই নয়া রেঞ্জে সিনিয়র আমলাদের পাঠানো হতে পারে।
নবান্নের খবর, রদবদলের ফলে বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কারা ও উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের মন্ত্রী অবনীমোহন জোয়ারদারের দায়িত্ব কমেছে। তাঁদের এখনই কোনও বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। নবান্ন সূত্র জানাচ্ছে, খুব শীঘ্রই আমলা পর্যায়ে বেশ কিছু রদবদল হবে।
সচিব পর্যায়ে যেমন বদল হবে, তেমনই কয়েক জন জেলাশাসকও বদলি হবেন।