পার্থ চট্টোপাধ্যায়: মঙ্গলবার জোকা ইএসআই হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করিয়ে বার করে আনা হচ্ছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। আচমকাই তাঁর গাড়ির দিকে ছুটে এল জুতো। রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর গায়ে জুতো লাগেনি। গাড়িতে লেগে পড়ে যায়। পার্থ বেঁচেছেন। তবে এর আগে অনেক রাজনীতিবিদের ভাগ্য এত সদয় ছিল না।
রাহুল গাঁধী: ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে উত্তরপ্রদেশে রোড শো করছিলেন রাহুল গাঁধী। তাঁকে লক্ষ্য করে জুতো ছোড়েন হরিওম মিশ্র নামে এক ব্যক্তি। তার আগের সপ্তাহে জম্মুর উরিতে জঙ্গি হামলায় শহিদ হয়েছিলেন ১৮ জওয়ান। হরি ওম মিশ্রের ক্ষোভ ছিল, শহিদদের শ্রদ্ধা নিবেদনের বদলে প্রচার করছেন রাহুল। ২০১২ সালে উত্তরাখণ্ডে এ রকমই জুতো-হামলার হাত থেকে অল্পের জন্য বেঁচেছিলেন রাহুল।
মনমোহন সিংহ: ২০০৯ সালের এপ্রিলে আমদাবাদে একটি প্রচারসভায় বক্তব্য রাখছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তাঁকে লক্ষ্য করে জুতো ছোড়েন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক ছাত্র। মঞ্চের সামনে এসে পড়ে জুতো। আটক করা হয় অভিযুক্তকে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা করে দেওয়ায় ছাড়া পেয়ে যান ওই ছাত্র।
পি চিদম্বরম: ২০০৯ সালে পি চিদম্বরমকে লক্ষ্য করে জুতো ছোড়েন সাংবাদিক জার্নাইল সিংহ। চিদম্বরম তখন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ১৯৮৪ সালে শিখ দাঙ্গায় অভিযুক্ত জগদীশ টাইটলারকে ক্লিনচিট দিয়েছিল সিবিআই। সেই ক্ষোভে চিদম্বরমকে নিশানা করেন জার্নাইল। তাঁকে আটক করা হলেও শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দেওয়া হয়।
লালকৃষ্ণ আডবাণী: ওই ২০০৯ সালে জুতো ধেয়ে এসেছিল লালকৃষ্ণ আডবাণীর দিকে। ওই বছর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। বিষয়টি মানতে পারেননি বিজেপি কর্মী পাওয়াস অগ্রবাল। বলেছিলেন, আডবাণী আসলে ‘ঝুটো লৌহমানব’। সেই ক্ষোভ থেকেই জুতো ছোড়েন।
ওমর আবদুল্লা: ২০১০ সালের ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। তাঁকে লক্ষ্য করে জুতো ছোড়েন এক পুলিশ কনস্টেবল। প্রশ্নের মুখে পড়ে নিরাপত্তা।
অরবিন্দ কেজরীবাল: ২০১৬ সালের ৯ এপ্রিল। দিল্লিতে দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য জোড়-বিজোড় প্রকল্প ঘোষণা করছিলেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। তাঁকে লক্ষ্য করে জুতো ছোড়েন বেদ প্রকাশ শর্মা। তিনি ছিলেন কেজরির দল আম আদমি পার্টির প্রাক্তন কর্মী। অভিযোগ করেন, এই প্রকল্প ঘোষণার পিছনে রয়েছে সিএনজি দুর্নীতি।
নবীন পট্টনায়েক: ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে উপনির্বাচনের প্রচার করছিলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। বরগাড় জেলার একটি গ্রামে। তাঁকে লক্ষ্য করে জুতো ছোড়েন কার্তিক মেহের। শুধু দেশের রাজনীতিবিদরাই নন, বিদেশে গণ্যমান্যদের অনেকেও এমন ভাবে হেনস্থা করা হয়েছে।
হিলারি ক্লিন্টন: ২০১৪ সালের ১০ এপ্রিল লাস ভেগাসে বক্তব্য রাখছিলেন প্রাক্তন ইউএস সেক্রেটারি হিলারি ক্লিন্টন। তাঁর দিকে উড়ে আসে একটি জুতো। এতটাই আচমকা যে, বক্তৃতা থামিয়ে বিল ক্লিন্টন-পত্নী জিজ্ঞেস করেন, ‘‘কী ছিল এটা? বাদুড়!’’ জুতো ছোড়ার অবশ্য কোনও কারণ বলেননি অভিযুক্ত অ্যালিসন আর্নস্ট।
জর্জ বুশ: ২০০৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাগদাদ গিয়েছিলেন জর্জ বুশ। তার ৩৭ দিন পরেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে তাঁর মেয়াদ শেষ হবে। বুশকে লক্ষ্য করে নিজের দু’টি জুতো ছোড়েন এক ইরাকি সাংবাদিক। বিদায় সম্ভাষণ করে বলেন, ‘কুকুর’। বুশ অবশ্য প্রশাসকের মতোই দক্ষ হাতে সামলেছিলেন সেই অতর্কিত আক্রমণ। বলেছিলেন, ‘‘একটাই তথ্য দিতে পারব, জুতোর সাইজ হল ১০।’’ ইরাকের যুদ্ধের জন্য সে দেশের বাসিন্দারা বার বার দায়ী করেছেন বুশকে। তাদের দাবি, ওই যুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ।
ওয়েন জিয়াবাও: ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য রাখছিলেন চিনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওয়েন জিয়াবাও। তাঁকে লক্ষ্য করে বাঁ পায়ের জুতো ছোড়েন ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র মার্টিন জাহ্নকে। চিৎকার করে বলেন, ‘‘এই একনায়ককে কী ভাবে এখানে বক্তব্য রাখার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হল? এ সব মিথ্যে আপনারা শুনছেন কী ভাবে? যদিও জিয়াবাও যে মঞ্চে দাঁড়িয়েছিলেন, তার ধারেকাছেও আসেনি মার্টিনের জুতো।
অস্ট্রেলিয়ার প্রেসিডেন্ট জন হাওয়ার্ড: ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়ার একটি টকশোয়ে বক্তব্য রাখছিলেন জন হাওয়ার্ড। তাঁকে লক্ষ্য করে জুতো ছোড়েন জনৈক পিটার গ্রে। ইরাকের যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিলেন তিনি। ইরাকে আমেরিকার আগ্রাসনকে সমর্থনের জন্য হাওয়ার্ডের দিকে জুতো ছোড়েন পিটার।
পারভেজ মুশারফ: চার বছর স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকার পর ২০১৩ সালে পাকিস্তানে ফিরেছিলেন সে দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ। রাজনৈতিক অধিকার বুঝে নেওয়ার জন্য ২৯ মার্চ করাচির আদালতে যাচ্ছিলেন তিনি। সে সময় মুশারফের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন ২০ জন আইনজীবী। তাঁদের মধ্যেই এক জন আইনজীবী মুশারফকে লক্ষ্য করে জুতো ছোড়েন। বলেন, ‘‘উনি এক জন একনায়ক। ওঁর ফাঁসি হওয়া উচিত।’’
মা ইং-জিও: ২০১৩ সালের ১৯ অক্টোবর একটি ক্রীড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন তাইওয়ানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মা ইং-জিও। তাঁকে লক্ষ্য করে জুতো ছোড়েন এক বিক্ষোভকারী। তার আগে বহু দিন ধরেই জিওর শাসন নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছিল সাধারণ মানুষের। নিজের শাসনকালে বার বার জুতো-হামলার শিকার হয়েছিলেন জিও। তাঁর নিরাপত্তার জন্য ১৪৯টি জুতো ধরার জাল কিনেছিল পুলিশ। খরচ পড়েছিল ১৬ হাজার ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১২ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা।