সেই হোটেলে থেকেই মালদহ ছাড়লেন মমতা

মালদহের যে হোটেল নিয়ে এত কাণ্ড, সেই হোটেল মালিককে নিজের হাতে আঁকা চারটি ছবির উপহার দিয়ে রবিবার দুপুরে হোটেল ছাড়লেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, হোটেল থেকে বার হওয়ার আগে হোটেল মালিক দিলীপ অগ্রবালকে মুখ্যমন্ত্রী বলে যান, চারটে ছবি তোমাকে দিয়ে গেলাম। এটা তোমার সম্পত্তি। এগুলিকে তুমি তোমার মতো করে রাখবে।

Advertisement

পীযূষ সাহা

মালদহ শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৪৪
Share:

মালদহ থেকে মুর্শিদাবাদের পথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবারে তোলা নিজস্ব চিত্র।

মালদহের যে হোটেল নিয়ে এত কাণ্ড, সেই হোটেল মালিককে নিজের হাতে আঁকা চারটি ছবির উপহার দিয়ে রবিবার দুপুরে হোটেল ছাড়লেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, হোটেল থেকে বার হওয়ার আগে হোটেল মালিক দিলীপ অগ্রবালকে মুখ্যমন্ত্রী বলে যান, “চারটে ছবি তোমাকে দিয়ে গেলাম। এটা তোমার সম্পত্তি। এগুলিকে তুমি তোমার মতো করে রাখবে। আর আগুন নিয়ে কোনও চিন্তা করবে না। তুমি তো কোনও দোষ করোনি।”

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর উপহারের পাশাপাশি তাঁর আশ্বাস পাওয়ার পর দিলীপবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে এসি মেশিনে আগুন লাগার পর আমি ভেঙে পড়ি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন তা ভাবতেই পারছি না। পাঁচ দিন খুব চাপে ছিলাম। আজকে অনেকটা হালকা লাগছে।” মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে হোটেল মালিক আশ্বস্ত হলেও হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা কিন্তু এখনও তোলেনি মালদহের দমকলের ওসি। জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “হোটেলে আগুন লাগার ঘটনার তদন্ত চলছে। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা তাঁদের রিপোর্ট দেয়নি। রিপোর্ট পেয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”


যে হোটেলে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে এসি বিভ্রাটের জেরে চক্রান্তের অভিযোগ উঠেছিল, সেই হোটেলের মালিককেই
নিজের আঁকা চারটি ছবি উপহার দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার মালদহে তোলা মনোজ মুখোপাধ্যায়ের ছবি।

Advertisement

গত ১৫ এপ্রিল থেকে এদিন দুপুর অবধি মুখ্যমন্ত্রী মালদহের নারায়ণপুরের ওই হোটেলে ছিলেন। হোটেলে থেকে মুখ্যমন্ত্রী মালদহ, দুই দিনাজপুর, মুশির্দাবাদ ও বীরভূমে ১২টি জনসভা করেছেন। ১৭ এপ্রিল মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে জনসভা সেরে হোটেলে ঢোকার পর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘরের এসি মেশিনে আগুন লাগে। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য জুড়ে হইচই শুরু হয়। তৃণমূল কংগ্রেস একাধিক নেতা হোটেলে আগুন লাগার পরই চক্রান্তের অভিযোগ তোলেন। তবে মুখ্যমন্ত্রী ওই হোটেল ছেড়ে অন্যত্র যাননি। তিন দিনে মুখ্যমন্ত্রী হোটেলের মালিককে দিয়ে ছবি আঁকার স্ট্যান্ড ও দলের কর্মীদের দিয়ে রঙ তুলি আনিয়ে জনসভা থেকে ফিরে এসে চারটি ছবি এঁকেছিলেন। হোটেলের ৩২টি ঘরের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর সফরের জন্য ১৮টি ঘর বুক করা হয়েছিল। দুটি ঘরে দুই জন বিদেশি পর্যটক ছিলেন। বাকি ঘরগুলি ফাঁকাই রাখা হয়।

হোটেল মালিক দিলীপবাবু বলেন, “কাল রাতে মুখ্যমন্ত্রী আমাকে ঘরে ডাকেন। তার পরে বলেন আমার জন্য চারটি ছবি এঁকেছেন। এর মধ্যে দুইটি গণেশের। কথা প্রসঙ্গে আমার জন্য তাঁকে কষ্ট পড়তে হল তা জানাই। তখন উনি বলেন, ‘তুমি তো আর ইলেকট্রিশিয়ান নও’ বলে ছবিগুলি দেন। চারটি ছবিও ঝোলানো হচ্ছে।”

পাঁচ দিন ধরে হোটেলের কর্মীদের সঙ্গে ছবি তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। হোটেল মালিক জানান, মুখ্যমন্ত্রী মালদহে ভারী শিল্প গড়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। নিজের ফোন থেকে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিয়েছেন। দার্জিলিঙের চা ও কমলা উৎসবের প্রসঙ্গে টেনে মালদহে আম উৎসব করা নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আগামী বছর থেকে তা হবে বলেও জানিয়েছেন। এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ১৫-২০ কাপ চা ও মাত্র দুইটি বিস্কুট খান মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে আইস ব্যাগে চারটি শশা কেটে নিয়ে রাইমা ও রিয়াকে নিয়ে মালদহ বিমান বন্দরে পৌঁছান। মালদহ ছাড়ার আগে দলের নেতানেত্রীদের তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, “আমি পাঁচ দিন মালদহে থেকে সব গুছিয়ে দিয়েছি। এখন তোরা ভাল ভাবে কাজ কর।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement