পুর এলাকার ৭টি ওয়ার্ডে ট্যাপ কলের সংখ্যা ১৭৭টি। যদিও, সপ্তাহ খানেক ধরে একটি কল দিয়েও জল পড়ছে না বলে অভিযোগ। পুরসভার জল না পেয়ে তাই কুয়ো বা নলকূপের জল খেতে বাধ্য হচ্ছেন বাসিন্দারা। উত্তরবঙ্গ জুড়েই এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ চলতে থাকায় সেই জল খাওয়া কতটা নিরাপদ তা নিয়েও বাসিন্দাদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণ এনসেফ্যালাইটিস জলবাহিত বলে আতঙ্কে ভুগছেন বাসিন্দার।
শিলিগুড়ি পুরসভার ৩৯ থেকে ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে বেশিরভাগ এলাকায় রবিবারেও জল সরবরাহ বন্ধ ছিল বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের জল কিনে খেতে হয়েছে। অনেকের সেই সামর্থ্য না থাকায় তাঁরা বাধ্য হয়ে কুয়োর জলই খাচ্ছেন। শিলিগুড়ি পুরসভার ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের পরেশনগর সংলগ্ন এলাকায় সম্প্রতি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে এক জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রীতিকণা বিশ্বাস নিজেও জল কিনে খাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন। কেউ কেউ সাইকেল কিংবা বাইকে চেপে দূরের কোনও এলাকা থেকে জল আনছেন।
শিলিগুড়ি পুরসভার কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়া সমস্যা সমাধান বিষয়ে এদিনও নির্দিষ্ট আশ্বাস দিতে পারেননি। তিনি বলেন, “ইঞ্জিনিয়াররা দ্রুত পাম্প মেরামতির চেষ্টা করছেন।” পুরসভা এলাকায় বরো ভিত্তিক ব্লিচিং ছড়ানো হচ্ছে বলে তাঁর দাবি।
৪২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দিলীপ সিংহের দাবি, কুয়োর জলেই খাওয়া এবং রান্নার কাজ চালাচ্ছেন এলাকার বেশির ভাগ পরিবার। তাঁর কথায়, “আমার এলাকায় বেশিরভাগই নিম্নবিত্ত শ্রেণির বাস। ফলে তাঁদের পক্ষে জল কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। আর তাঁরা জল আনবেন কোথা থেকে? আশপাশের ওয়ার্ডগুলিতে জল মিলছে না।” জলসঙ্কট চলতে থাকায় বিরক্ত বাসিন্দারাও। মাস খানেক আগে থেকে জল সঙ্কট শুরু বলে বাসিন্দাদের দাবি। মধ্যে কিছুদিন সরবারহ হওয়ার পরে সপ্তাহখানেক ধরে ফের জলসঙ্কট শুরু হয়েছে। পুর এলাকার পাশাপাশি ৭টি ওয়ার্ডে কয়েক হাজার বাসিন্দার বসবাস। চেকপোস্ট এলাকার বাসিন্দা গীতা থাপা বলেন, “দুজন মহিলা থাকি। অন্য সময় বাড়ির সামনের কল থেকেই জল আনি। দূরে জল আনতে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই নলকূপের জলই খাচ্ছি। এর আগের বার নলকূপের জল খেয়ে মেয়ের ডায়েরিয়া হয়েছিল।” সকালে উঠেই তাঁকে কাজে বেরিয়ে যেতে হয় বলে জানিয়েছেন ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সঞ্জীব পাল। রাতে যখন ফিরে আসেন, তখন অন্য ওয়ার্ডেও জল মেলে না। সে কারণে কুয়োর জল খেয়ে তাকে কাটাতে হচ্ছে বলে দাবি করেছেন। এনসেফ্যালাইটিস সংক্রমণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “বিপদ হতে পারে জানি। কিন্তু আমরা নিরুপায়।” ৪১ নম্বর ওয়ার্ডেও গত দশ দিন ধরে জল সরবরাহ বিপর্যস্ত বলে বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন। আশরফনগরের বাসিন্দা ইকবাল হাফিজ বলেন, “এখন ঈদ চলছে। গত এক সপ্তাহ ধরে জল না থাকায় উত্সবের মরসুমেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।” এলাকার কাউন্সিলর অতুল দাস দাবি করেন, পুর কর্তৃপক্ষের জরুরি ভিত্তিতে সমস্যা মোকাবিলা প্রয়োজন ছিল।
জনপ্রতিনিধি থেকে বাসিন্দাদের ক্ষোভ, এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ চলতে থাকায় কুয়ো বা নলকূপের জল খাওয়ার আতঙ্ক চলতে থাকলেও কবে সেই সমস্যা মিটবে তার আশ্বাস এ দিনও দিতে পারেনি পুর কর্তৃপক্ষ। পাম্প মেরামত করতে ভিন রাজ্য থেকে বিশেষজ্ঞরা এসেছেন বলে পুর কর্তৃপক্ষ তিন দিন আগে জানিয়েছেন।