মমতার সঙ্গে সাবিত্রী-কৃষ্ণেন্দু। মালদহে।
রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণের দাবি জানাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার সময় চেয়েছিল রায়গঞ্জ এইমস রূপায়ণ নাগরিক মঞ্চ। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সাক্ষাতের অনুমতি না দেওয়ায় মঞ্চের সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সোমবার মঞ্চের একটি প্রতিনিধি দল রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় সার্কিট হাউসে গিয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা বিধায়ক অমল আচার্যের হাতে ওই স্মারকলিপি তুলে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করে। অমলবাবুর দাবি, তিনি ওই স্মারকলিপি মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “সময়ের অভাবের কারণে মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি ছাড়া কারও সঙ্গে দেখা করেননি।” তবে রায়গঞ্জে জমি অধিগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তে রাজ্য সরকার যে এখনও অনড় তা এদিন মুখ্যমন্ত্রীর ইঙ্গিতেই স্পষ্ট হয়েছে। রায়গঞ্জ থেকে গঙ্গারামপুর যাওয়ার সময়ে এক প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, “রাজ্যের অন্য কোথাও তো এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল হচ্ছেই। তাই এই নিয়ে আমি আর কিছু বলব না।”
মঞ্চের তরফে জানানো হয়েছে, জেলাশাসকের পরামর্শে প্রায় এক সপ্তাহ আগে মঞ্চের তরফে রায়গঞ্জে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য ইমেল ও চিঠি পাঠানো হয়। মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর কুন্ডু বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে আমরা কোনও সাড়া পাইনি। সোমবার প্রশাসনের তরফে পরে জানানো হয় মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে আমাদের সাক্ষাত করার অনুমতি দেননি। তাঁর অভিযোগ, আসলে মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
সরকারি সূত্রের খবর, প্রায় দুমাস আগে রাজ্য সরকারের তরফে জমি দিতে চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে নদিয়ার কল্যাণীতে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কেন্দ্র ওই প্রস্তাবে সম্মতিও দিয়েছে। তাই রায়গঞ্জের বদলে কল্যাণীতেই যে রাজ্য সরকার ওই হাসপাতাল তৈরির সিদ্ধান্তে অনড় তা মুখ্যমন্ত্রীর এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন বলে অনেকে মনে করছেন। যদিও অমলবাবুর দাবি, চাষিরা জেলাশাসকের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিতভাবে স্বেচ্ছায় জমি দেওয়ার আবেদন জানালে মুখ্যমন্ত্রী উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন। পশ্চিম দিনাজপুর চেম্বার অফ কমার্সের উদ্যোগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে নিয়ে গঠিত রায়গঞ্জ এইমস নাগরিক রুপায়ণ মঞ্চ গত দেড় মাস ধরে রায়গঞ্জে টানা পথসভা, বিক্ষোভ মিছিল ও বিক্ষোভ করছে।
রায়গঞ্জের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সি এদিন বলেন, “এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির জন্য তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে কেন্দ্রকে রায়গঞ্জের বদলে কল্যাণীতে জমি দিতে চেয়েছে। তাই মুখ্যমন্ত্রীর গণমঞ্চের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার সাহস হয়নি। তবে রায়গঞ্জের বদলে কল্যাণীতে হাসপাতাল তৈরির কাজ শুরু করলে কংগ্রেস জেলাজুড়ে ফের টানা আন্দোলনে নামবে।” রায়গঞ্জের সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমের মতে, “উত্তরবঙ্গের উন্নত চিকিত্সা পরিষেবার স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রীর গণমঞ্চের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করা উচিত ছিল। আসলে রাজ্যে পালাবদলের পর কংগ্রেস ও তৃণমূলের রেষারেষির জেরেই হাসপাতাল তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেননি মুখ্যমন্ত্রী।” বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর চক্রবর্তী জানান, রাজ্য সরকার কেন্দ্রকে কল্যাণীতে জমি দিতে চাওয়ায় রায়গঞ্জে হাসপাতাল তৈরির কাজ আটকে গিয়েছে।