বদ্ধ জীবনই হোম-পালানোর কারণ, মত

চার দেওয়ালের বদ্ধ জীবন থেকে মুক্তির স্বাদ পেতে হোমের আবাসিকদের পালানোর ঝোঁক বাড়ছে। এ মত শুধু চিকিৎসক মহলের নয়, সমাজ কল্যাণ দফতরের তদন্তেও উঠে এসেছে একই সমস্যার কথা। শনিবার ভোর নাগাদ জলপাইগুড়ি শহরের একটি বেসরকারি হোম থেকে পালিয়ে যায় পাঁচ কিশোরী আবাসিক। সকালেই অবশ্য বেরুবাড়ি এলাকায় তাদের উদ্ধার করে পুলিশ। সোমবার সমাজ কল্যাণ দফতরের সহকারী অধিকর্তা মোশারফ হোসেন বেসরকারি হোমটি ঘুরে দেখেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৪ ০১:৫৬
Share:

চার দেওয়ালের বদ্ধ জীবন থেকে মুক্তির স্বাদ পেতে হোমের আবাসিকদের পালানোর ঝোঁক বাড়ছে। এ মত শুধু চিকিৎসক মহলের নয়, সমাজ কল্যাণ দফতরের তদন্তেও উঠে এসেছে একই সমস্যার কথা।

Advertisement

শনিবার ভোর নাগাদ জলপাইগুড়ি শহরের একটি বেসরকারি হোম থেকে পালিয়ে যায় পাঁচ কিশোরী আবাসিক। সকালেই অবশ্য বেরুবাড়ি এলাকায় তাদের উদ্ধার করে পুলিশ। সোমবার সমাজ কল্যাণ দফতরের সহকারী অধিকর্তা মোশারফ হোসেন বেসরকারি হোমটি ঘুরে দেখেন। ঘটনার তদন্তে নেমে দফতরের জেলা কর্তারা হোমের আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলেন। দফতর সূত্রে খবর, আবাসিকদের মানসিক সমস্যার বিষয়টি জোরাল ভাবে তাঁদের সামনে উঠে আসে। তদন্তের বিষয়ে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট সোমবার বিকেলের পরে নবান্নে পাঠানো হয়।

মোশারফ হোসেন বলেন, “কেন হোমের আবাসিকেরা পালানোর চেষ্টা করছে সেটা খুঁজে বার করার চেষ্টা চলছে। জেলা কর্তারা যেমন দেখছেন, একই ভাবে অধিকর্তার নির্দেশে আমিও পৃথকভাবে দেখছি। পরে একটি রিপোর্ট তৈরি করে পাঠাব।” জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক বিজয় রায় বলেন, “হোমের আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা বোঝার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা ওই বিষয়ে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করে পাঠিয়েছি।”

Advertisement

শনিবার পালিয়ে গিয়ে উদ্ধার হওয়া পাঁচ কিশোরীকে পুলিশ চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্যদের হাতে তুলে দিয়েছিল। পরে চারজনকে হোমে ও একজনকে বাড়িতে পাঠানো হয়। ২০১১ সালে ওই হোম থেকে একইভাবে কয়েকজন আবাসিক পালিয়ে যায়। শুধু বেসরকারি হোম থেকে নয়, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সরকারি কোরক হোম থেকেও ২২ জন আবাসিক পালিয়ে গিয়েছিল।

শনিবারের ঘটনার পরে চিকিৎসকেরা হোমের বদ্ধজীবন থেকে আবাসিকদের মানসিক সমস্যা হচ্ছে কি না তা গুরুত্ব দিয়ে দেখার উপরে জোর দিয়েছেন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ স্বস্তিশোভন চৌধুরী বলেন, “বয়ঃসন্ধি কালের কিছু সমস্যা থাকে। খোলামেলা পরিবেশ, মানসিক চাহিদা মেটানোর জায়গা দরকার হয়। হোমগুলিতে যদি সেটা না থাকে তবে আবাসিকদের পালানোর ঘটনা চলবে।” চিকিৎসক সুমন্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দীর্ঘদিন এক জায়গায় থাকার ফলে হোমের আবাসিকেরা বাইরে পা রেখে মানসিক চাহিদা মেটাতে চেষ্টা করেন।” জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল সুপার সুশান্ত রায় বলেন, “হোমের ছেলেমেয়েদের কাউন্সেলিং জরুরি। বেসরকারি হোমগুলিতে ওই সুযোগ নেই। কিন্তু এটা না করলে পালানোর সমস্যা বাড়বে।”

শনিবার বিকেল থেকে জেলা সমাজ কল্যাণ দফতরের ঘটনার তদন্তে চিকিসকদের আশঙ্কাই স্পষ্ট হয়েছে। দফতরের এক আধিকারিক জানান, যে হোম থেকে শনিবার পালানোর ঘটনা ঘটেছে সেখানে তেমন খোলামেলা পরিবেশ নেই। ভাড়া বাড়ির তিনটি ঘরে ৩১ জন থাকে। ফলে তাদের কঘেয়েমি আসছে। কিন্তু সমস্যা দ্রুত সমাধানের পথ মিলছে না। সমাজ কল্যাণ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “কোনও হোম বন্ধ করে সমস্যা মিটবে না। তাই পরিকাঠামোগত সমস্যা মেটাতে আলোচনা চলছে।” তিনি জানান, বেগুনটারি এলাকার হোম কর্তৃপক্ষ নিজস্ব বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement