রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজ

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিল পাশ

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার এক বছরের মাথায় অবশেষে সরকারিভাবে রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার বিল পাশ হল মঙ্গলবার। এদিন দুপুরে বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে রাজ্য সরকারের তরফে ‘দ্য রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি বিল-২০১৪’ পেশ করা হয়। সরকারি সূত্রের খবর, উত্তর দিনাজপুর জেলা সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার শাসক ও বিরোধী দল মিলিয়ে মোট ১৩ জন বিধায়ক বিলের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেও কেউ বিরোধিতা না করায় বিলটি সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়ে যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৪৯
Share:

বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়ার খবর শোনার পরে মিষ্টিমুখ।—নিজস্ব চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার এক বছরের মাথায় অবশেষে সরকারিভাবে রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার বিল পাশ হল মঙ্গলবার। এদিন দুপুরে বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে রাজ্য সরকারের তরফে ‘দ্য রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি বিল-২০১৪’ পেশ করা হয়। সরকারি সূত্রের খবর, উত্তর দিনাজপুর জেলা সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার শাসক ও বিরোধী দল মিলিয়ে মোট ১৩ জন বিধায়ক বিলের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেও কেউ বিরোধিতা না করায় বিলটি সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়ে যায়।

Advertisement

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, এই প্রথম কোনও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা হল। এর আগে সব কয়টি ক্ষেত্রেই সরকারি কলেজকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়েছে। এর জন্য রাজ্য সরকার এখনই ৭ কোটি টাকা মঞ্জুর করছে। এর পর প্রতি বছর রাজ্য সরকার ওই বিশ্ববিদ্যালয়কে ৩৪ কোটি টাকা করে দেবে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য। তিনি জানান, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠন শুরু হবে। এই দিন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে কংগ্রেস দলনেতা মহম্মদ সোহরাব, সিপিএম বিধায়ক রঞ্জিতকুমার মণ্ডল, সিপিআইয়ের আনন্দময় মণ্ডল, এসইউসি-র তরুণ নস্কর সহ বিরোধীরা বলেন, নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার সঙ্গে ইতিমধ্যেই নতুন করে তৈরি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামো গড়তে হবে। উত্তরে পার্থবাবু বলেন, বামফ্রন্টের ৩৪ বছরে সেই পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। এই সরকার প্রাথমিক থেকে কলেজস্তর পর্যন্ত পরিসংখ্যানের দিকে নজর রাখছে। সেই সঙ্গে নতুন করে গড়েতোলা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামোও তৈরি করা হচ্ছে।

বিলে বলা রয়েছে, এই বিশ্ববিদ্যালয় নতুন কলেজ, গ্রন্থাগার, গবেষণাগার, সংগ্রহালয় এবং শিক্ষা ও গবেষণাকেন্দ্র তৈরি এবং পরিচালনা করতে পারবে। বিভিন্ন কলেজকে অনুমোদন দিতেও পারবে।

Advertisement

বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ সেই খবর কলেজে এসে পৌঁছতেই ছাত্র পরিষদ সমর্থকেরা কলেজ চত্বরে পটকা ফাটিয়ে ও মিষ্টি বিলি করে আনন্দে মেতে ওঠেন। তৃণমূলের শতাধিক কর্মী সমর্থক মুখ্যমন্ত্রীকে জেলাবাসীর তরফে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে কলেজমোড় থেকে শিলিগুড়ি মোড় পর্যন্ত একটি মিছিল করেন। জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা ইটাহারের বিধায়ক অমল আচার্য বলেন, “পিছিয়ে পড়া উত্তর দিনাজপুর জেলার পড়ুয়াদের উন্নত শিক্ষার স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রী রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তিনি সেই প্রতিশ্রূতি রক্ষা করায় জেলাবাসীর তরফে তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।”

জেলার বিরোধী দলের বিধায়করা এদিন বিধানসভায় বিলটিকে সমর্থন করলেও বিধানসভায় আলোচনার সময়ে বিলটি নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলেন। জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত জানান, পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়ার পর রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজে কোন কোন বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ানো হবে সেই বিষয়ে বিলে কোনও উল্লেখ নেই। পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় উন্নীত হওয়ার পর রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজটি স্বতন্ত্র ইউনিভার্সিটি নাকি সেটির অধীনে অন্য কোনও কলেজকে অর্ন্তর্ভূক্ত করা হবে, সেই বিষয়েও বিলে কোনও উল্লেখ নেই। করণদিঘির ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক গোকুল রায়ের মতে, “সার্বিক পরিকাঠামো তৈরি না করে রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন শুরু হলে পড়ুয়াদের হয়রানি বাড়বে। সঠিক সময়ে স্নাতকোত্তর স্তরে পরীক্ষা নেওয়া ও ফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, বিল পাশের আগে বিধানসভার আলোচনায় বিষয়গুলি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।”

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলীপ দে সরকার জানিয়েছেন, সরকারি নির্দেশে গত জুন মাসে কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন চালুর ক্ষেত্রে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী নিয়োগ সহ কী কী পরিকাঠামোর উন্নয়ন প্রয়োজন সেই প্রস্তাব শিক্ষা দফতরে পাঠানো হয়েছে। ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় একটি সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস চালু করার কথা ঘোষণা করেন। বিধায়ক অমলবাবুর দাবি, “শীঘ্রই রাজ্য সরকার কলেজ কর্তৃপক্ষের পাঠানো প্রস্তাব অনুযায়ী রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের সার্বিক পরিকাঠামোর উন্নয়নের কাজ শেষ করে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে কলা, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর স্তরের ১৫টিরও বেশি বিষয়ে পঠনপাঠন চালু করবে।”

অন্যদিকে, তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে কলেজের শিক্ষক শিক্ষিকাদের একাংশ কেনও মিছিলে সামিল হলেন, সেই প্রশ্ন তুলে এদিন বিকালে কলেজ চত্বরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলীপবাবুকে প্রায় আধঘন্টা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ছাত্র সংসদের সদস্যরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement