ইউনিভার্সিটি কলেজেই হবে বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: তরুণ দেবনাথ।
নতুন জেলা গঠনের পরে দু’দশক পেরোলেও চাহিদা পূরণ না হওয়ার ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। রায়গঞ্জ শহরে নেই কোনও মেডিক্যাল বা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। একটিমাত্র পলিটেকনিক ও আইটিআই কলেজ। তাই প্রতি বছর বহু পড়ুয়া ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। তবে শহরেরই ইউনিভার্সিটি কলেজ পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় রূপে উন্নীত হওয়ায় আশার আলো দেখছেন শহরবাসী।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গত ১১ নভেম্বর রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার জন্য রাজ্য বিধানসভায় বিল পাশ হয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকেই রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের পঠনপাঠন শুরু হওয়ার কথা। তবে পরিকাঠামো উন্নয়নের কোনও সিদ্ধান্ত ঘোষণা না করে কেন কলেজটিকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় করার ঘোষণা করা হল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে শহরে। তবে রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলীপ দে সরকার বলেন, “আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে কলেজে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে কলা, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান বিভাগে ১৫টিরও বেশি বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ানো হবে। তাই স্নাতক পাশ করার পর শহরের পড়ুয়াদের আর বাইরের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি হতে হবে না।” রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজে পড়ুয়া প্রায় ৮ হাজার। কিন্তু ৮ বছর ধরে কলেজে স্থায়ী অধ্যক্ষ নেই। কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবরেটরিতে যন্ত্রাংশের অভাব রয়েছে। ইন্টারনেট সংযোগ নেই।
দিলীপবাবু জানান, আরও অন্তত ১০টি অতিরিক্ত ক্লাসরুমের প্রয়োজন। ১৩ জন শিক্ষকের পদ শূন্য। ৮ জন শিক্ষাকর্মীর পদও পূরণ করা হয়নি। ক্লাসরুম ও বেঞ্চের অভাবে বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষার সময়ে একই বেঞ্চে একাধিক পরীক্ষার্থীকে বসাতে বাধ্য হন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
ছাত্র পরিষদ পরিচালিত কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক শুভাশিস সাহা ও সংগঠনের রায়গঞ্জ শহর কমিটির সভাপতি নব্যেন্দু ঘোষ জানান, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার সিদ্ধান্তে তাঁরা খুশি। তবে কেন কলেজটির সার্বিক পরিকাঠামোর উন্নয়নের কথা ঘোষণা না করে বিল পাশ করল তা বুঝতে পারছেন না। এসএফআইয়ের উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদক প্রাণেশ সরকারের দাবি, “সার্বিক পরিকাঠামোর উন্নয়ন না করে বিশ্ববিদ্যালয় হলে পড়ুয়াদের একদিকে যেমন হয়রানি বাড়বে, তেমনই কর্তৃপক্ষ সঠিক সময়ে স্নাতকোত্তর স্তরের ফল প্রকাশ করতে পারবেন না।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি অজয় সরকারের অবশ্য দাবি, “শিক্ষামন্ত্রী জানান, কোনও কলেজকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা হলে সরকারি নিয়মেই পরিকাঠামোর উন্নয়ন হয়।”
রায়গঞ্জ সুরেন্দ্রনাথ কলেজেও শিক্ষকের অভাবে পড়ুয়াদের পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে। কলেজের অধ্যক্ষ প্রবীর রায় জানান, সমস্ত বিষয়ের দু’জন করে শিক্ষকের পদের অনুমোদন রয়েছে। তাঁর মতে, “রায়গঞ্জ সুরেন্দ্রনাথ কলেজ ও রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজকে নিয়ে রাজ্য সরকার একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার সিদ্ধান্ত নিলে জেলার পড়ুয়ারা উপকৃত হতেন।”
তবে শহরে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় অনেক পড়ুয়ারই যে সুবিধা হবে তা মানছেন সকলেই। বড়বার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সৌরভ গুহ বলেন, “আর্থিক সমস্যায় বাইরের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তি হতে পারিনি। শহরে বিশ্ববিদ্যালয় হলে অনেকেরই এমন হবে না।” হাতিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌতম সিংহ রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে অঙ্কে স্নাতক হয়ে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। তাঁর কথায়, “বিশ্ববিদ্যালয় হলে আর্থিক কারণে অনেকেরই স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা আটকাবে না।”
কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু
বলার থাকলে আমাদের জানান। ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ।
Subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-শহরের নাম’।
অথবা চিঠি পাঠান, ‘আমার শহর-শহরের নাম’,
আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৩৬/৮৯ চার্চ রোড,
শিলিগুড়ি ৭৩৪০০১। প্রতিক্রিয়া জানান
এই ফেসবুক পেজেও: www.facebook.com/anandabazar.abp।