বাগডোগরা, ২৩ জুলাই। বিহার মোড়ে একটি মৃতদেহকে ঘিরে রাতভর বিক্ষোভ উত্তেজিত জনতার। তার মধ্যে ছিলেন অন্তত জনা পঞ্চাশ মহিলা। রাতভর বিক্ষোভে কোনও মহিলা পুলিশ বা কনস্টেবল পাঠানো যায়নি। অথচ পুলিশের জিপ ও বাস ভাঙচুরে একাধিক মহিলা যুক্ত ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। যদিও একজন মহিলাকেও গ্রেফতার করা যায়নি।
১৫ অগস্ট, উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সদ্যোজাতের দেহ খুবলে খেয়েছে কুকুর। এই অভিযোগ তুলে রাতেই প্রসূতি বিভাগের ওয়ার্ডের সামনে বিক্ষোভ দেখায় জনা বিশেক পুরুষ ও মহিলা। রাতে ছুটি হয়ে যাওয়ায় সে ক্ষেত্রেও মহিলাদের সামলাতে পাঠানো হয়েছিল পুরুষ পুলিশকর্মীদের। যদিও সঙ্গে কোনও মহিলা কর্মী না থাকায় গ্রেফতারে রাস্তাতেই হাঁটেনি পুলিশ।
শিলিগুড়ি কমিশনারেটের একাধিক থানাতেই এখন এমন সমস্যা। পুলিশ সূত্রে খবর, বিভিন্ন থানায় মহিলা পুলিশ কর্মী থাকলেও পরিকাঠামোর অভাবে তাঁদের পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। পুলিশ কর্তারাই জানাচ্ছেন, কোনও স্পর্শকাতর এলাকায় মহিলাদের পাঠানোর ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তিনি জানান, স্পর্শকাতর এলাকায় রাত-বিরেতে নানা সমস্যার কথা মাথায় রেখেই পদক্ষেপ করতে হয়। সে জন্য মহিলাদের পাঠানোর ঝুঁকি অনেক সময়ে তাঁরা নেন না বলে ওই কর্তা জানান।
এ ছাড়া রয়েছে মহিলাদের থাকার বাস্তব সমস্যা। কোনও থানাতেই মহিলাদের থাকার জন্য ব্যারাক নেই। শিলিগুড়ি থানায় দু-একজনকে মহিলা থানার মেঝেতে রাত কাটাতে হয়। শিলিগুড়ির একাধিক থানার অফিসারদের একাংশ জানান, রাত ৯ টার পর মহিলা সহকর্মীদের আর থানায় থাকার জন্য অনুরোধ করেন না তাঁরা। কারণ, পরিকাঠামো নেই। শিলিগুড়ি থানার এক মহিলা কনস্টেবল জানালেন, “রাতে তাঁকে ডিউটি দিলেও পালন করা সম্ভব নয়। কারণ আলাদা থাকার জায়গা না থাকায় পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে থাকতে হয়।” প্রধাননগর থানার এক মহিলা কর্মী বলেন, “এলাকা ভাল নয়। রাতে ডিউটি দিলে করতে বাধ্য। কিন্তু থাকার জায়গা যেমন নেই, তেমনি এলাকা মহিলাদের জন্য, পুলিশ হলেও নিরাপদ নয়।”
কমিশনারেটের পাঁচটি থানায় বর্তমানে মোট মহিলা পুলিশ কর্মীর সংখ্যা ৬৫ জন। এর মধ্যে একমাত্র ভক্তিনগর থানাতে একজন সাব ইন্সপেক্টর রয়েছেন। বাকি থানাগুলোতে শুধুই কনস্টেবল। তবে পরিকাঠামো না তৈরি কর্মী এসেও যে লাভ নেই তা স্বীকার করছেন অফিসারেরাই। এক পুলিশ কর্তা বলেন, “প্রতিটি থানাতেই প্রচুর কর্মী ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু তা মহিলা কর্মী দিয়ে পূরণ করা হলে লাভ কিছু হবে না।” শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “সমস্ত কিছু কমিশনারের হাতে তো নেই। সরকার যেটা ভাল মনে করেছে, তাই করছে। তবে সমস্যা কমাতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” ভক্তিনগর থানা চত্বরে ব্যারাক তৈরি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শীঘ্রই তার কাজ হয়ে যাবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে তাতেও কতটা সমাধান হবে তা নিয়ে সন্দিহান কমিশনার নিজেই।