ভাঙচুর হয়েছে দফতর। রাজু সাহার তোলা ছবি।
তড়িদাহত হয়ে সব্জি ব্যবসায়ী এক তরুণের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল কুমারগ্রাম থানার কামাখ্যাগুড়ি এলাকা। পুলিশ জানয়, মৃত ব্যবসায়ীর নাম বিমল দাস (১৮) কামাখ্যাগুড়ি সুপার মার্কেটে তাঁর সব্জি দোকান রয়েছে। বাজারের পাশেই তাঁর বাড়ি। সকাল ৬টা নাগাদ বিমল দাস ও কার্তিক দাস নামে দুই সব্জি ব্যবসায়ী সরকারি নলকূপ থেকে জল আনতে গিয়ে তড়িদাহত হন। তাঁদের উদ্ধার করে কামাখ্যাগুড়ি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে বিমলবাবুকে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। আর এক জন সেখানে চিকিৎসাধীন।
এর পরেই ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে কামাখ্যাগুড়ি বাসস্ট্যান্ডে পথ অবরোধে শুরু করেন। ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের একাংশ কামাখ্যাগুড়িতে বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির দফতরেও হামলা করে ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ। এতে বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরের কর্মী প্রতীম চৌধুরী জখম হন। কামাখ্যাগুড়ি ফাঁড়ির পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পথ অবরোধের ফলে অসম, বারবিশা, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, কুমারগ্রাম তুফানগঞ্জ রুটে যাতায়াত করা কয়েকশ বাস ট্রাক, অটো আটকে নিত্যযাত্রী ও ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হন। দুপুর ১২টা থেকে দুই ঘন্টা অবরোধ চলার পর বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরের আধিকারিক ও পুলিশ গিয়ে মৃত, আহত ব্যবসায়ীর ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি ঠিক হয়। মহকুমা পুলিশ আধিকারিক বিশ্বচাঁদ ঠাকুর বলেন, “এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। পুলিশি টহল চলছে।”
সুপার মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী নিমাই দেবনাথ, ইন্দ্রজিৎ দাস, রঞ্জন সিংহদের অভিযোগ, বাজারের পাশ দিয়ে বিদ্যুতের ৩৩ হাজার ভোল্টের লাইন রয়েছে। তিনদিন ধরে বিদ্যুতের তারে আগুনের ফুলকি দেখা যাচ্ছিল। বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরে বারবার খবর দিলেও মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ কর্মীরা সেখানে আসেননি। সকালে একটি দোকানে শট সার্কিটে আগুন লেগে যায়। আগুন নেভানো হয়। এর পরেই এক নলকূপের ধারে তড়িদাহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিদ্যুতের কোনও তার কাছাকাছি ছিঁড়ে পড়েনি। তবুও কেমন ভাবে ওই নলকূপে বিদ্যুৎ পৌঁছাল তা বোঝা যাচ্ছে না। সুপার মার্কেটে বিমলবাবুর খুচরো সব্জির দোকান রয়েছে। দোকানের পাশেই বাড়িতে তাঁর বৃদ্ধ মা, বাবা ও ছোট ভাই বোনদের নিয়ে কষ্টের সংসার। দোকানের পাশেই একটি সরকারি নলকূপ রয়েছে। এলাকার ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে জল নেন। প্রতিদিনের মত এ দিন সকালে বিমলবাবু জল আনতে যান। পিছনেই ছিলেন কার্তিক দাস। দুই জনের আর্ত চিৎকার শুনে আশপাশের লোক ছুটে গিয়ে দেখেন দু’জনে মাটিতে পড়ে ছটফট করছেন।
এ দিন কামাখ্যাগুড়ি বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন ম্যানেজার বিমলেশ চক্রবর্তী জানান, ঘটনাস্থলের পাশ দিয়ে ৩৩ হাজার ভোল্টের লাইন গিয়েছে। ‘আর্থ ফল্টে’র জন্য ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। দফতরের নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে।