ফোর-জি কেবল পাতা নিয়ে দুর্নীতির নালিশ

পুরসভার পূর্ত বিভাগের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সিপিএম এবং তৃণমূল একটি বেসরকারি সংস্থার ইন্টারনেট পরিষেবার (ফোর-জি পরিষেবা) কেবল পাতার কাজ বন্ধ করার দাবি তুলেছে। তাতে সামিল হয়েছে পুরবোর্ডে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের একটি গোষ্ঠীও। মঙ্গলবার দার্জিলিং লোকসভা যুব কংগ্রেস কমিটির তরফে মেয়র গঙ্গোত্রী দত্তকে ওই ব্যাপারে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। তাদের অভিযোগ, কয়েকজনের দুর্নীতির জন্য দলের এবং পুরসভার সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। যুব কংগ্রেসের দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের সভাপতি অভিজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, “কেবল পাতার কাজে দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত করে দেখা হোক। নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের কেউ পদে থাকলে সরানো হোক।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৪ ০১:৫৮
Share:

অবৈধ কেবল পাতার প্রতিবাদে মেয়র গঙ্গোত্রী দত্তকে স্মারকলিপি দিচ্ছেন যুব কংগ্রেস সদস্যরা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

পুরসভার পূর্ত বিভাগের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সিপিএম এবং তৃণমূল একটি বেসরকারি সংস্থার ইন্টারনেট পরিষেবার (ফোর-জি পরিষেবা) কেবল পাতার কাজ বন্ধ করার দাবি তুলেছে। তাতে সামিল হয়েছে পুরবোর্ডে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের একটি গোষ্ঠীও। মঙ্গলবার দার্জিলিং লোকসভা যুব কংগ্রেস কমিটির তরফে মেয়র গঙ্গোত্রী দত্তকে ওই ব্যাপারে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। তাদের অভিযোগ, কয়েকজনের দুর্নীতির জন্য দলের এবং পুরসভার সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। যুব কংগ্রেসের দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের সভাপতি অভিজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, “কেবল পাতার কাজে দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত করে দেখা হোক। নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের কেউ পদে থাকলে সরানো হোক।”

Advertisement

নাম না করলেও অভিযোগের তির পুরসভার পূর্ত দফতরের মেয়র পারিষদ সূজয় ঘটকের দিকে। এ দিন পুরসভায় নিজের দফতরে বসে সুজয়বাবু বলেন, “সরকারি নিয়ম মেনেই ওই সংস্থার কাছে নির্ধারিত টাকা চাওয়া হয়েছে। সেই টাকা জমা দিলে নির্বাচন প্রক্রিয়া মেটার পরেই তাদের অনুমোদনের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে জানানো হয়েছিল। তার নথিপত্রও রয়েছে। এর মধ্যে কোনও রকম আর্থিক দুর্নীতির প্রশ্নই নেই। তবে অনুমতি পাওয়ার আগে তারা কাজ শুরু করলে তা ঠিক হয়নি। সে কারণে বোর্ডে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে এফআইআর করার সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা সমর্থন করি।” তা ছাড়া ওই সংস্থা বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা খুঁড়ে কেবল বসানোর কাজ করেছে। তাতে পুরসভার ক্ষতি হয়েছে। বাস্তুকারদের সে সব খতিয়ে দেখে হিসাব দিতে বলা হয়েছে। ওই সমস্ত রাস্তা ঠিক করতে তাদের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করা হবে। সুজয়বাবু বলেন, “তার পরেও যদি পুরসভার কাউন্সিলররা সিদ্ধান্ত নেন, ওই কাজ করা যাবে না তা হলে আমার আপত্তি নেই। সংস্থাকে তা জানিয়ে আমরা টাকা ফেরত দিয়ে দেব।”

ইন্টারনেট পরিষেবা-দানকারী ওই সংস্থার উপদেষ্টা গৌতমমোহন চক্রবর্তী বলেন, “শিলিগুড়ি পুরসভার তরফেও ওই কাজের জন্য আগেও টাকা দেওয়া হয়েছে। তা সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি। পরে সরকার নির্ধারিত দরেই দেওয়া হয়। নির্বাচন প্রক্রিয়া মিটলে অনুমতি দেওয়ার কথা। একেকটা এলাকায় কেবল পাতা হয়ে গেলে পরের এলাকায় সেই কাজ চলে। তা নিয়ে সমস্যা হলে কাজের ক্ষতি হবে।” সুজয়বাবু জানান, শুরুতে কিছু এলাকায় কেবল লাইন পাতার জন্য ১৫৮০ টাকা প্রতি বর্গমিটার কেবল পাতার জন্য ধার্য করা হয়েছিল। পরে সংস্থার তরফে দাবি করা হয়, সরকার নির্ধারিত দর প্রতি বর্গ কিলোমিটার ১১৫০ টাকা। তাই এ ক্ষেত্রে সেই মতো টাকা নেওয়ার বিষয়টি ঠিক হয়েছে। প্রথম কাজের জন্য সরকারি দরের থেকে যে বাড়তি টাকা নেওয়া হয়েছিল তা এই কাজের জন্য ধার্য করা টাকার হিসাব থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সুজয়বাবুর দাবি, “গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম বার যখন টাকা নেওয়া হয় তখন সরকারি দর ছিল না। সেই জন্য পুরসভার নিজস্ব আয় বাড়াতে ১৫৮০ টাকা ধার্য করা হয়।”

Advertisement

যুব কংগ্রেসের দাবি, ঘটনার সঙ্গে পুরসভার আধিকারিকদের একাংশও যুক্ত। গত ২৯ এপ্রিল বোর্ড মিটিংয়ে অবশ্য বাম এবং তৃণমূলের তরফে মেয়র এবং পূর্ত বিভাগের মেয়র পারিষদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ তোলেন বাম এবং তৃণমূল কাউন্সিলররা। প্রথমে মেয়র কিছু জানেন না বললে তার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। কেন না পুরসভার তরফে সংস্থার কাছে টাকা চেয়ে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে সেখানে মেয়রের অনুমোদনসাপেক্ষে হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ফাইল বার করে সেই চিঠি আনা হলে মেয়র জানান চিঠি পাঠানো হলে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। মেয়রের দাবি, “ওই কাজ অনেকটাই তাঁকে অন্ধকারে রেখে করা হয়েছে।”

পুরসভার বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, “মঙ্গলবার পর্যন্ত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তাতেই পরিষ্কার এতে স্বচ্ছতা নেই। অনুমতি না দেওয়া হলে কাজ বন্ধ করা হচ্ছে না কেন? মঙ্গলবার আমার ওয়ার্ডে কাজ হচ্ছিল। মেয়রকে অভিযোগ জানিয়ে কাজ বন্ধ করতে বলা হয়েছে।” তৃণমূল কাউন্সিলর কৃষ্ণ পালের অভিযোগ, “মেয়রের জ্ঞাত সারেই কাজ হচ্ছে। অথচ তিনি জানেন না বলছেন। বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত ছাড়া কী ভাবে কাজ দেওয়া হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement