হিমঘর থেকে ফেলে দেওয়া আলু খাচ্ছে ছাগল। ছবি: সন্দীপ পাল।
আলু এবং পেয়াঁজের দাম নিয়ন্ত্রণে খুচরো এবং পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে সরকারি নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। যদিও, সেই নির্দেশ মেনে বিক্রি চলছে কি না তা দেখার কোনও সরকারি পদক্ষেপ নেই। মঙ্গলবারে শিলিগুড়ির কোনও বাজারেই দাম কমার লক্ষণ দেখা যায়নি। এ দিনও গড়পরতা আলু ৩২ টাকা এবং পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে শিলিগুড়ির বিভিন্ন বাজারে। একেক বাজারকে একেক দরে বিক্রি হয়েছে আলু এবং পেঁয়াজ। দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রশাসন থেকে ব্যবসায়ীদের উপরে দায় চাপানো হলেও, ব্যবসায়ীরা পাল্টা দুষেছেন প্রশাসনকে। ফলে আলু এবং পেঁয়াজ দুইয়ের দাম নিয়েই সাধারণ বাসিন্দাদের ভোগান্তি কমেনি।
অভিযোগ উঠেছে, সরকারি নির্দেশ মানছেন না শিলিগুড়ির একাংশ সব্জি বিক্রেতারা। ব্যবসায়ীদের একাংশের পাল্টা দাবি, প্রশাসনের এমন নির্দেশিকা রুটিন ঘটনা। খুচরো বাবসায়ীদের অভিযোগ, নির্দেশ দিয়েই প্রশাসন দায় সারে, পাইকারি বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে কোনও পদক্ষেপ করা হয় না। যদিও, এ দিন মহকুমা প্রশাসনের সূত্রে জানানো হয়েছে, নির্দেশিকার প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে সমস্ত ব্যবসায়ী সংগঠন এবং খুচরো ও পাইকারি বাজারগুলিতে। এমনকী দুর্নীতিদমন শাখাকেও অভিযানে নামানো হয়েছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। যদিও সরকারি অভিযানের কোনও ছবি এদিন চোখে পড়েনি।
শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক দীপাপ প্রিয়া বলেন, “নির্দেশ কোনও নতুন কিছু নয়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা মানছেন না বলে নতুন করে এই নির্দেশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে সোমবারই। মঙ্গলবারের মধ্যে সবার পেয়ে যাওয়ার কথা।”
কী রয়েছে এই নির্দেশে? পাইকারি বাজারে কোনও ব্যবসায়ী ২ হাজার কুইন্ট্যাল আলু এবং ৫ শো কুইন্ট্যাল পেঁয়াজের বেশি মজুত রাখতে পারবে না। খুচরো বাজারের ক্ষেত্রে সেই পরিমাণ আলুর ক্ষেত্রে ৫০ কেজি এবং পেঁয়াজের ক্ষেত্রে ২০ কেজিতে সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আলু পেঁয়াজের দামের তালিকা প্রতিটি দোকানে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। শিলিগুড়ি শান্তিনগর বাজার কমিটির সম্পাদক গণেশ দাস বলেন, “এমন কোনও নির্দেশের কথা আমাদের জানা নেই।” নির্দেশ না পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন বিধান মার্কেট, চম্পাসারি, হায়দরপাড়া বাজারের ব্যবসায়ীরাও। হায়দরপাড়ার ব্যবসায়ী তরুণ মালাকার বলেন, “আমরা এভাবেই ব্যবসা করে আসছি ১৫ বছর ধরে। এমন কোনও নির্দেশের কথা শুনিনি।”
শহরের কোনও খুচরো বাজারেই ঝোলেনি দামের নির্দিষ্ট তালিকা। ফলে একই বাজারের দুটো দোকানে পৃথক দামে বিক্রি হচ্ছে আলু-পেঁয়াজ থেকে শুরু করে সমস্ত শাক সব্জিই। বিধান মার্কেট সব্জি বাজারে পাহাড়ের আলু যেখানে বিক্রি হয়েছে ৩৪ টাকায়। সেখানে লাগোয়া মুরগিহাটি এলাকার সব্জির দোকানে একই আলু বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকায়। এক ব্যবসায়ী গৌরাঙ্গ সাহা বলেন, “আমরা কোনও তালিকা পাইনি। সব জায়গায় দাম বাড়ছে আমাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। কম দামে বিক্রি করব কেন?” শিলিগুড়ির ব্যবসায়ী সংগঠন ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিত দাস অবশ্য বলেন, “সোমবারই এই নির্দেশিকা আমাদের দফতরে পৌঁছেছে। তবে অন্যরা কেন পায়নি তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।” নির্দেশিকা কেন সব ব্যবসায়ীরা পায়নি তা খতিয়ে দেখছে প্রশাসন।
জলপাইগুড়িতেও আলুর দাম নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আলুর দাম নিয়ে সমস্যায় জেরবার ব্যবসায়ীরা আলুর ব্যবসাই ছেড়ে দিচ্ছেন। একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করা না হলে আর আলু বিক্রি করব না। শহরের তিয়াত্তর মোড় এলাকার বিপুল শীল জানান, হিমঘর থেকে ছাট আলু কিনে ঝাড়াই-বাছাই করে কম দামে বিক্রি করে যে লাভ হয় তা দিয়ে ছ’জনের সংসার চলে। বাজারে ১২ টাকা প্রতি কেজি দরে আলু বিক্রি হলে তিনি ৮ টাকায় বিক্রি করেন। আলুর দাম বাড়ায় ছাট আর মিলছে না। ফলে বাধ্য হয়ে লাউ বিক্রি শুরু করেছেন তিনি।
ব্যবসায়ীদের একজনের জিজ্ঞাসা, “দাম নিয়ে প্রতি বছর ঝামেলা হয়। তা সত্বেও সরকার কেন আলু কিনে মজুত করে রাখে না?” একই প্রশ্ন এদিন ঘুরপাক খেয়েছে শহরের দিনবাজার, স্টেশন বাজারে। আলু ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ সেন, নিমাই সরকার, রতন সাহার মতো ব্যবসায়ীরা বিশ্বনাথবাবুদের প্রশ্ন, “সরকার উদ্যোগ না নিলে আলুর সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়। এ নিয়ে কোনও জবাব দিতে চাননি কৃষি বিপণন বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর সুব্রত দে। তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমার পক্ষে কিছু জানানো সম্ভব নয়।”