জেলাশাসকের সঙ্গে তৃণমূলের একাধিক সংগঠনের সদস্যদের তর্কাতর্কিতে ভেস্তে গেল মিটার ট্যাক্সি নিয়ে দার্জিলিং জেলা পরিবহণ দফতরের প্রথম বৈঠক। মঙ্গলবার কার্শিয়াংয়ে সার্কিট হাউসে পরিবহণ দফতরের বৈঠকে জেলাশাসককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। ঘন্টাখানেক ধরে উভয় তরফে বচসা হয়। শেষ পর্যন্ত বৈঠক বাতিল বলে ঘোষণা করেন জেলাশাসক পুনীত যাদব। শীঘ্রই ফের একটি বৈঠক ডেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে তিনি এদিন জানিয়েছেন। সংগঠনগুলির দাবি, তাঁদের মিটিংয়ে যাওয়ার চিঠি পাঠানো হয়েছিল। ত সত্বেও এদিন বৈঠকে পৌঁছানোর পর তাঁদের অপমান করে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন জেলাশাসক। যদিও জেলাশাসক অপমান করা হয়নি বলে মনে করছেন। তাঁর দাবি, এতগুলি সংগঠনকে ডাকাই হয়নি। কোথা থেকে তাঁরা চিঠি পেয়েছেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জেলাশাসক বলেন, “শুধু ১০ টি সংগঠন ও একজন প্রতিনিধি মিলিয়ে ২১ জনকে বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। সিটি অটোর কোনও সংগঠনকে ডাকা হয়নি। বৈঠকের যে আলোচ্য সূচি চিঠিতে রয়েছে, তাতেও সিটি অটো সংক্রান্ত কোনও বিষয় নেই। তাই আমি তাঁদের বাইরে যেতে অনুরোধ করি। কিন্তু অটো মালিক ও চালকরা বাইরে বের হতে রাজি না হয়ে মেজাজ হারান। ফলে বৈঠক করা সম্ভব হয়নি।” যদিও জেলাশাসকের যুক্তি মানতে নারাজ অটো মালিকরা। তাঁদের দাবি, তাঁদের চিঠি দেওয়া হয়েছে, সুতরাং তাঁদের বৈঠকে থাকতে দিতে হবে। দার্জিলিং জেলা সিটি অটো ড্রাইভার্স অ্যান্ড ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যসোসিয়েশন সম্পাদক উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, “চিঠি কে দিল, তা খুঁজে বের করা না করা দফতরের ব্যপার। আমাদের যে ভাবে অপমান করা হয়েছে তার জবাবদিহি করতে হবে।” ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দাজির্লিং জেলা সিটি অটো ওয়ার্কার্স অ্যান্ড সম্পাদক নির্মল সরকারও। তিনি বলেন, “যানজট সমস্যা সহ দূষণ সমস্যা দূর করার আগেই এই ভাবে নতুন হাজার ট্যাক্সি চালু করলে যানজট সমস্যা আরও বাড়বে। সেটার সমাধান না করে কীভাবে ট্যক্সির পরিকল্পনা হচ্ছে, বুঝতে পারছি না।”
দার্জিলিং-ওয়েস্ট দিনাজপুর এন্টায়ার রিজিওনাল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশন -এর নাম জেলাশাসকের আমন্ত্রিতের তালিকায় নেই। ক্ষুব্ধ সংগঠনের সম্পাদক কালু সাহাও। এ দিন এই রকম প্রায় ১০টিরও বেশি সংগঠনের সদস্যরা এদিন জেলাশাসক এবং জেলা পরিবহণ বোর্ডের সদস্য মদন ভট্টাচার্যের উপরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যদিও এ নিয়ে কারও আপত্তি শোনা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন মদনবাবু। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণামত এক হাজার মিটার ট্যাক্সি নামানো হবে। কারও কোনও আপত্তি শোনা হবে না। তৃণমূলে থেকেই যাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। তাঁদের চিহ্নিত করে মুখ্যমন্ত্রী ও পরিবহণ মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাঁরাই নেবেন।”
পরিবহণ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, পুজোর আগেই প্রথম দফায় ৫০০ ট্যাক্সি নামানো হবে। বাকিটা পরের দফায় নামানো হবে। এই ট্যক্সিগুলি চলবে মিটারে। সুতরাং পর্যটনের মরসুমে ইচ্ছেমতো ভাড়া চাইতে পারবেন না কোনও চালক। মিটারে ভাড়া নির্ধারিত হবে। এগুলি নিয়ে শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং বা ডুয়ার্সের যে কোনও জায়গায় যাওয়া যাবে। মূলত এই বিষয় ও তার ভাড়া নির্ধারণ নিয়ে এ দিনের বৈঠক ছিল। এই রুটের অনেকটা অংশই জিটিএ এলাকার মধ্যে পড়ছে। জিটিএ সদস্যদেরও বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। উপস্থিত ছিলেন তিন জিটিএ সদস্য বিমল দোরজি, রামজঙ্গ গোলে এবং নরদেন লামা। বৈঠক ভেস্তে যাওয়ায় তাঁরাও হতাশ। বিমলবাবু বলেন, “বৈঠকে অনেক আশা নিয়ে এসেছিলাম। তা ভেস্তে যাওয়ায় আমরা হতাশ। পরের বৈঠকের জন্য অপেক্ষা করব।”