শীত আসতেই চড়ুইভাতির জন্য সাজছে ডুয়ার্স। রাত পেরোলেই বড় দিন। তার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যাচ্ছে চড়ুইভাতির মরসুমও। আর উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের জন্য চড়ুইভাতি করার একেবারে প্রথম সারিতে রয়েছে ডুয়ার্স। তার জন্য তত্পর হচ্ছে প্রশাসনও। শুধুমাত্র চড়ুইভাতির জন্যই পৃথক ভাবে প্রশাসনিক বৈঠক ডাকতে চলেছেন মালবাজারের মহকুমাশাসক।
মালবাজার মহকুমাতেই ছড়িয়ে রয়েছে ১৮ টিরও বেশি পিকনিকস্পট। এর বাইরে দার্জিলিং জেলার কালিম্পং মহকুমার গরুবাথান ব্লক জুড়ে আরও প্রায় ১০টি পিকনিকস্পট রয়েছে। পিকনিক স্পটগুলি নিয়ে আরও সুসংহক প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর দাবি দীর্ঘ দিনের। অনেক জায়গাতেই পুলিশি নজরদারি না থাকায় পিকনিক করতে এসে বচসা হাতাহাতির মতো ঘটনাও ঘটছে। কোথাও আবার রাস্তার বেহাল দশার কারণে ক্ষোভ রয়েছে দীর্ঘ দিনের। তবে চলতি বছরে চড়ুইভাতির মরসুম শুরু হওয়ার মুখে প্রশাসনিক বৈঠক ডাকার প্রস্তুতি শুরু হওয়ায় খুশি সব মহলই। মালবাজারের মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতি বলেন, “পিকনিক স্পটগুলির উপর নজরদারি বাড়ানো, নিয়ম শৃঙ্খলার সঙ্গে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রেখে চড়ুইভাতি করার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ এড়াতে দ্রুত বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” মালবাজারের মহকুমা পুলিশ আধিকারিককে সঙ্গে নিয়ে এই বৈঠক করা হবে।
কোথাও ঝর্না, কোথাও নদী, কোথাও বা জঙ্গল। সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে, ডিসেম্বরের শেষ থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতি দিন গড়ে ২০০টিরও বেশি দল চড়ুইভাতি করতে আসে ডুয়ার্সে। বিশেষ দিন বা ছুটির দিনে সেই সংখ্যাটা আরও বাড়ে। নজরদারির অভাবে দুর্ঘটনা, শ্লীলতাহানি এমনকি সংঘর্ষের জেরে মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। ২০১৩ সালের ২৬ জানুয়ারিই যেমন মালবাজারের গজলডোবায় দু’টি পিকনিক দলের মধ্যে সংঘর্ষে দু’জন মারা গিয়েছিলেন। কোথাও কোথাও আবার জঙ্গলের পাশে তারস্বরে মাইক বাজানো চললেও বাধা দেওয়ার কেউ থাকে না। নদী দূষণের অভিযোগও ওঠে।
যাঁরা পিকনিক করতে আসেন, তাঁরাও নানা সমস্যার মধ্যে পড়েন। পিকনিক স্পটগুলির উন্নয়ন বাবদ প্রবেশ টিকিট বা গাড়ি রাখা নিয়ে টিকিটের নাম করে স্থানীয় জনতাদের তৈরি কমিটিগুলির বিরুদ্ধে লাগামছাড়া টাকা আদায়ের মত অভিযোগ ওঠে। এমনকি পিকনিকের রান্না করা খাবারও কেড়ে নেয় অনেকে। এ ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনা কম করতেই পিকনিক কেন্দ্রগুলির উপর প্রশাসনিক রাশ টানতে এই প্রথম উদ্যোগী হচ্ছে মহকুমা প্রশাসন। বিশেষ করে যারা পিকনিক করতে যারা আসেন, তাঁরা যেহেতু অধিকাংশই দূর দূরান্তের তাই স্বাভাবিকভাবেই তাদের কাছে স্থানীয় থানা কিংবা প্রশাসনের ফোন নম্বর থাকে না। তাই সমস্যায় পড়লে পিকনিক কেন্দ্রের হাতের নাগালেই যাতে জরুরি ফোন নম্বর পাওয়া যায়, সে দিকটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। প্রশাসনিক উদ্যোগ সফল হলে ডুয়ার্সে পিকনিক পর্যটনের গুরুত্ব বাড়বে বলেই আশা করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।