গণধর্ষণ চাপা দিতে সালিশি, ধৃত বাম নেতা

টাকার বিনিময়ে পরিচিত দুই ব্যক্তিই তাকে ১০-১২ জন অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের হাতে তুলে দিয়েছিল বলে অভিযোগ করল গণধর্ষণের শিকার এক কিশোরী। অজ্ঞাতপরিচয় যুবকদের দু’জন তাকে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ। শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে ভক্তিনগর থানার আশিঘর এলাকা লাগোয়া জঙ্গলে ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় এই ঘটনার পরে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের এক সিপিএম সদস্য সালিশির মাধ্যমে বিষয়টি মেটানোর জন্য ওই কিশোরীর পরিবারের উপরে চাপ দেয় বলেও অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৫ ০২:৪৪
Share:

টাকার বিনিময়ে পরিচিত দুই ব্যক্তিই তাকে ১০-১২ জন অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের হাতে তুলে দিয়েছিল বলে অভিযোগ করল গণধর্ষণের শিকার এক কিশোরী। অজ্ঞাতপরিচয় যুবকদের দু’জন তাকে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ। শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে ভক্তিনগর থানার আশিঘর এলাকা লাগোয়া জঙ্গলে ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় এই ঘটনার পরে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের এক সিপিএম সদস্য সালিশির মাধ্যমে বিষয়টি মেটানোর জন্য ওই কিশোরীর পরিবারের উপরে চাপ দেয় বলেও অভিযোগ।

Advertisement

তবে ওই কিশোরীর বাবা সালিশির চাপ মেনে নেননি। বুধবার পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়। ওই কিশোরী যে দুই পরিচিতর সঙ্গে সে দিন বিকেলে বেরিয়েছিল, তাদের সেই রাতেই পুলিশ গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হয়েছে পঞ্চায়েতের ওই সিপিএম সদস্য জগন্নাথ দাসকেও। পুলিশ জানিয়েছে, জগন্নাথবাবুর বিরুদ্ধে গণধর্ষণের ঘটনা চাপা দেওয়ার ষড়যন্ত্র ও তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, জেরার মুখে জগন্নাথবাবুও সালিশির মাধ্যমে বিষয়টি মেটাতে চেষ্টা করেছিলেন বলে কবুল করেন। ওই কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে এ দিন।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, স্কুল ছুট ওই কিশোরী তার পরিচিত দুই যুবকের সঙ্গে ঘটনার দিন বিকেলে জঙ্গল লাগোয়া সাহু নদীর ধারে গিয়েছিল। সে পুলিশকে জানিয়েছে, নদীর ধারে গিয়ে তারা বসেছিল। আচমকা ১০-১২ জন অজ্ঞাতপরিচয় যুবক সেখানে চড়াও হয়। সে সময়ে তার পরিচিত দু’জনকে ওই যুবকেরা কিছু টাকাও দেয় বলে কিশোরীর অভিযোগ। কিন্তু কত টাকা দেওয়া হয়েছিল, তা সে দেখতে পায়নি। এর পরে ওই দুই যুবককে মারধর করে তাড়িয়েও দেওয়া হয়। তারপরে ওই কিশোরীকে দু’জন অপরিচিত যুবক ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। সেই সময়ে অন্তত ১০ জন আশেপাশে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছিল বলে কিশোরীর দাবি।

Advertisement

সেই রাতে কোনও মতে বাড়িতে ফিরে কিশোরীটি কান্নায় ভেঙে পড়ে। কেন তার দুই পরিচিত তাকে অন্যদের হাতে ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছিল, তা নিয়ে গ্রামে প্রশ্ন ওঠে। অভিযোগ, সেই সময়ে আসরে নামেন সিপিএমের পঞ্চাশোর্ধ্ব নেতা জগন্নাথবাবু। তিনি প্রস্তাব দেন, যে দুই পরিচিতের সঙ্গে ওই কিশোরী সে দিন বিকেলে বেরিয়েছিল, তাদের কোনও একজনের সঙ্গে তার বিয়ে দিয়ে দেওয়া হোক। অভিযোগ, নরমে-গরমে তিনি প্রায় ১২ দিন ধরে কয়েক দফায় সালিশি চালান।

বুধবার সকালে ঘটনাটি জানতে পারেন এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের সুধা সিংহ চট্টোপাধ্যায়। তিনিই জগন্নাথবাবু ও ওই কিশোরীর বাবাকে নিয়ে আশিঘর ফাঁড়িতে যান। কিশোরীর বাবা মেয়ের বয়ানে অভিযোগ দায়ের করেন। সুধাদেবী বলেন, “জগন্নাথবাবুকে ডেকে কী হয়েছে জানতে চাইলে তিনি সব স্বীকার করে নেন। পুলিশকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিই।” জগন্নাথবাবুকে প্রথমে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। সিপিএম সূত্রের খবর, জগন্নাথবাবু গতবারই প্রথম দলের টিকিটে দাঁড়িয়ে ভোটে জেতেন। ওই এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “সালিশি করে ধর্ষণের ঘটনা চাপা দেওয়ার চেষ্টা খুবই বড় অপরাধ।” বিরক্ত প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অশোক ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, “অপরাধ প্রমাণিত হলে দল জগন্নাথের পাশে দাঁড়াবে না।”

ধৃতদের ৭ দিনের পুলিশ হেফাজত দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের বাড়ির লোকজনের দাবি, অভিযুক্তরা তাঁদের ছেলেদের মারধর করে তাড়িয়ে দিয়ে গণধর্ষণ করেছে। তদন্তকারীদের দাবি, ধৃতরা কিশোরীকে অন্যদের হাতে তুলে দিতে মারের নাটক সাজিয়েছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement