কখনও পোকার আক্রমণে খেতের সব্জি খেতেই নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে। কখনও খরা বা অতিবৃষ্টির কারণে সব্জি চাষে লোকসানের মুখে পড়তে হয়। কৃষকদের তার হাত থেকে বাঁচাতেই সব্জি চাষিদের বিমার আওতায় আনল সরকার। শুধু সব্জি নয়, ফুল ও ফল চাষিদেরও এই বিমার আওতায় আনা হয়েছে। কিসান ক্রেডিট থাকলে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে চাষ করলে ওই বিমার আওতায় পড়বেন। ঋণ না নিয়ে চাষ করলেও ওই বিমার সুবিধে মিলবে।
উদ্যানপালন দফতর সূত্রের খবর, গত বছর থেকেই ওই বিমা চালু করা হয়েছে। কিন্তু প্রচার না থাকায় সে ভাবে কৃষকরা কেউ সাড়া দেননি। এ বার জুন মাসে বিশেষ অভিযান শুরু করে কৃষকদের ওই বিমার আওতায় আনার কাজ শুরু করেছে। উদ্যানপালন দফতর গ্রামে গ্রামে গিয়ে দফতরের আধিকারিকরা কৃষকদের নিয়ে বৈঠক করে বিমা করার পরামর্শ দিয়েছেন। কৃষকরাও ওই বিমা নিয়ে আগ্রহী।
উদ্যানপালন দফতরের কোচবিহার জেলা আধিকারিক খুরশিদ আলম বলেন, “কয়েক দিন পরে বর্ষাকালীন সব্জির চাষ শুরু হবে। এ বারে বিমা নিয়ে যেভাবে প্রচার চালানো হয়েছে তাতে উত্সাহী সকলেই। সব্জি, ফুল ও ফল চাষিদের অধিকাংশই এ বার বিমার সুবিধে নেবেন আশা করছি।” দিনহাটার পুঁটিমারির কোইয়ালিদহের এক কৃষক জাহাঙ্গির আলম জানান, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে শসা চাষে লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। ১৩ হাজার টাকা খরচ করে দেড় বিঘা জমিতে শসা চাষ করেছিলেন তিনি। তিনি বলেন, “এখনও অবধি চার হাজার টাকা উঠেছে। আর কত উঠে আসবে বুঝতে পারছি না। এখন থেকে বিমা করেই চাষে নামব।” উদ্যান পালন দফতর সূত্রের খবর, কোচবিহার জেলায় শীতকালীন সব্জি চাষ হয় প্রায় ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে। বর্ষাকালীন সব্জি চাষ হয় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে। হলদিবাড়িতে টোমাটো, লঙ্কা প্রচুর চাষ হয়। এ ছাড়া কোচবিহার সদর, দিনহাটা, মাথাভাঙ্গা, তুফানগঞ্জে বেশ কিছু এলাকায় প্রচুর পরিমাণ সব্জি চাষ হয়। প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে ফল-ফুল চাষ হয়। আবহাওয়ার তারতম্যজনিত কারণে ওই অঞ্চলের চাষিদের সব সময়ই চাষে নেমে চিন্তিত হয়ে থাকতে হয়। খাদ্যশস্যের ক্ষেত্রে বিমা দীর্ঘ দিন ধরেই চালু হয়েছে। সব্জির ক্ষেত্রে বিমা চালু করার দাবি দীর্ঘ দিন ধরেই করে আসছেন চাষিরা। চাষিরা গত বছর বিষয়টি নিয়ে অবহিত না থাকার জন্য শুধুমাত্র ২০ জন কৃষক বিমার সুবিধে নিয়েছিলেন বলে ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। এ বারে অন্তত ৬০০ জন কৃষক বিমার সুবিধে নেবেন বলে আশা করছেন উদ্যান পালন দফতরের কর্তারা। দফতর সূত্রের খবর, ভারত সরকার, পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং এগ্রিকালচার ইনসিওরেন্স কোম্পানি অফ লিমিটেডের উদ্যোগে ওই বিমা চালু করা হয়েছে।
আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে ফসল ফলন কম হলে বা নষ্ট হলে চাষিরা ওই বিমার সুবিধে পাবেন। সে ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, উচ্চ কিংবা নিম্ন তাপমাত্রা, আপেক্ষিক আর্দ্রতা, রোগ সৃষ্টিকারী আবহাওয়া, তীব্র বায়ুপ্রবাহ, বে-মরসুমি বৃষ্টির কারণে ফসল নষ্ট হলে বিমা সুরক্ষা দেওয়া হবে কৃষককে। বিমা করা অর্থের ৬ শতাংশ হারে প্রিমিয়াম দিতে হবে। বাকি টাকা দেবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। ওই আধিকারিক বলেন, সরকারি আবহাওয়া কেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।