এটিএমের কাছে উদ্ধার রক্তাক্ত ব্যক্তি

রক্ষীবিহীন এটিএম কাউণ্টার লাগোয়া এলাকা থেকে এক রক্তাক্ত ব্যক্তিকে উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে ময়নাগুড়ি বাস টার্মিনাসের ভিতরে এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টারের পাশে ওই ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৪ ০৭:৫৭
Share:

জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ছবিটি তুলেছেন সন্দীপ পাল।

রক্ষীবিহীন এটিএম কাউণ্টার লাগোয়া এলাকা থেকে এক রক্তাক্ত ব্যক্তিকে উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে ময়নাগুড়ি বাস টার্মিনাসের ভিতরে এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টারের পাশে ওই ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে ময়নাগুড়ি হাসপাতালে পরে সেখান থেকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দুপুর নাগাদ তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই ব্যক্তির কাছ থেকে উদ্ধার করা ভোটার পরিচয়পত্র ও কিছু টুকরো কাগজ থেকে জানা গিয়েছে, জখমের নাম মঙ্গলচাঁদ মণ্ডল। তাঁর বাড়ি কোচবিহার জেলার মাথাভাঙার জোর পাটকি। তিনি পেশায় কল মিস্ত্রি।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, যে এটিএম কাউন্টারের পাশে ৫৪ বছর বয়সের মঙ্গলচাঁদবাবুকে অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে, সেখানকার কাঁচের গেট ভাঙা এবং কাউন্টারের মেঝেয় রক্ত মাখা ছিল। সেখানে পাওয়া একটি বড় ব্যাগকে ঘিরে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। পুলিশ কর্তারা ঘটনাস্থলে পৌছনোর পরে আনা হয় পুলিশ-কুকুর এবং বম্ব স্কোয়াডের কর্মীদের। পরীক্ষার পরে ব্যাগ খোলা হলে জখম ব্যক্তির জামাকাপড় পাওয়া যায়। জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেমস কুজুর বলেন, “ঘটনাটি ভোর নাগাদ হয়েছে। কিন্তু টাকা ছিনতাই করার জন্য ওই ব্যক্তির উপরে হামলা হয়েছে কি না স্পষ্ট নয়। ব্যাঙ্কের কাছে সিসিটিভি’র ফুটেজ চাওয়া হয়েছে। তদন্ত চলছে।”

এই এটিএমের সামনে থেকে মঙ্গলকে উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার পরে পুলিশ-কুকুর দিয়ে তদন্ত। ছবিটি তুলেছেন দীপঙ্কর ঘটক।

Advertisement

নতুন বাজার সংলগ্ন বাস টার্মিনাসে ব্যবসায়ীরা জানান, প্রাতর্ভ্রমণে বার হয়ে এক ব্যক্তি প্রথম রক্তাক্ত অবস্থায় মঙ্গলচাঁদবাবুকে পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁরা ওই ব্যক্তির মাথা, নাক ও কপাল থেকে রক্ত বার হতে দেখে পুলিশকে খবর দিয়ে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, এটিএম কাউন্টারের কাঁচের গেট ভেঙে মেঝেয় তাজা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। কাউন্টারের সাদা দেওয়ালে রক্তের ছাপ দেখে পুলিশের সন্দেহ, ধস্তাধস্তির পরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে সম্ভবত কাঁচের গেট ভেঙেছে। ওই সময় জখম ব্যক্তির কপালে ও নাকে ভাঙা কাঁচে চোট লাগতে পারে। মঙ্গলচাঁদবাবু এটিএম কাউণ্টার থেকে ২৫ ফুট দূরে পড়েছিলেন। ঘটনাস্থলের পাশে নতুনবাজার হাট এলাকা পর্যন্ত রক্তের দাগ পাওয়া গিয়েছে।

তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের অনুমান যে দুষ্কৃতীরা ওই ব্যক্তির উপরে হামলা চালায়, তাদের কেউ ভাঙা কাঁচে জখম হতে পারে। নতুনবাজার হাট হয়ে শহিদগড়পাড়া দিয়ে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের দিকে পালানোর সময় ওই রক্তপাত হওয়ায় রাস্তা দাগ হয়। কিন্তু হামলাকারীরা কতজন ছিল এবং ঠিক কী হয়েছিল তা পুলিশের কাছে এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিশ সূত্রের খবর, এটা হামলা নাকি এই ঘটনায় মঙ্গলের কোনও সঙ্গী জড়িত, তাও দেখা হচ্ছে। জখম ব্যক্তির কাছে এটিএম কার্ড পাওয়া যায়নি। পকেট থেকে ২৯ টাকা মিলেছে। টাকা তুলতে গিয়ে ওই ঘটনা ঘটেছে না কাউন্টারে কিছু হয়েছে তা সিসিটিভির ফুটেজ দেখলেই স্পষ্ট হবে বলে এই দিন তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন। এ দিন জেলার ডিএসপি (ক্রাইম) অনিরুদ্ধ ঠাকুর বলেন, “সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জখম ব্যক্তি এখনও কথা বলতে পারছেন না। তাই সিসিটিভির ফুটেজ জরুরি হয়ে পড়েছে।” এটিএমটির নিরাপত্তী রক্ষী না থাকার বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বাসিন্দারা। এলাকার সিপিএম গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য প্রদ্যুত বিশ্বাস জানান, “কয়েকবার ব্যাঙ্ক কর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। লাভ হয়নি।“ ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ময়নাগুড়ি শাখার ম্যানেজার জয়ন্তনাথ সাহা বলেন, “ব্যাঙ্কের শাখা লাগোয়া এটিএম কাউণ্টারগুলিতে ব্যাঙ্ক থেকে নিরাপত্তারক্ষীর ব্যবস্থা করা হয়। বাইরের অন্য এটিএম কাউণ্টারগুলিতে নিরাপত্তারক্ষী রাখার দায়িত্ব এটিএমের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার বেসরকারি সংস্থার। কেন সেখানে রক্ষী দেওয়া হয়নি তা তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement