অপেক্ষা: দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে শ্রমিকরা। নিজস্ব চিত্র
লকডাউনের শুরু থেকেই নেপালের ইটভাটাগুলিতে আটকে পড়েছিলেন রাজ্যের কয়েক হাজার শ্রমিক। এতদিনে তাঁদের দেশে ফেরানো শুরু হল। বুধবার মেদিনীপুর এবং কোচবিহারের ৩০০ জন বাসিন্দাকে ফেরানো শুরু হয়। সরকারি সূত্রের খবর, বিভিন্ন সূত্রে দার্জিলিং জেলা পুলিশ-প্রশাসন জানতে পেরেছে অন্তত ১৫ হাজার শ্রমিক নেপালে আটকে রয়েছেন। এদের মধ্যে ৯০ শতাংশই কোচবিহারের বাসিন্দা। বাকিরা মালদহ, উত্তর দিনাজপুর এবং মেদিনীপুরের বাসিন্দা। দীর্ঘ দিন ওই পরিযায়ী শ্রমিকেরা নেপালের ইটভাটাগুলিতে কাজ করেন।
আপাতত নেপালে লকডাউনের মেয়াদ রয়েছে ১৪ জুন পর্যন্ত। মার্চ থেকেই সে দেশে এই অবস্থা চলছে। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন সেখানে আটকে থাকা রাজ্যের শ্রমিকরা। জমানো টাকা শেষ হয়ে গিয়েছিল, খাবার পেতেও সমস্যা হচ্ছিল তাঁদের। কিন্তু অন্য দেশ হওয়ায় ঘরে ফেরানোর প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লাগে বলে সূত্রের খবর। গত তিনদিন ধরে শ্রমিকদের একাংশ অস্থির হয়ে পড়েন। মেদিনীপুরের একটা দল কাঁকরভিটা সীমান্তে মেচি নদী, সেতুর কাছে হেঁটে চলে আসেন। তখন তাঁদের বোঝানো হয় যে দু’দেশের প্রোটোকল অনুসারে তাঁরা অনুমতি ছাড়া সীমান্ত টপকে আসতে পারবেন না।
মঙ্গলবার দিল্লি, কলকাতা, কাঠমান্ডু হয়ে সমস্যার জট খোলার পর বুধবার সকাল থেকে শ্রমিকদের এ পারে আসা শুরু হয়েছে। দার্জিলিঙের জেলাশাসক এস পুন্নমবল্লম বলেন, ‘‘আজ থেকে ধীরে ধীরে শ্রমিকেরা এ পারে আসবেন। শারীরিক পরীক্ষার পর বাড়ি পাঠানো হবে।’’
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, নেপালের কাঁকরভিটায় জড়ো হচ্ছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। সেখান থেকে হেঁটে সীমান্ত টপকে এ পারের পানিট্যাঙ্কি আসছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। তারপরে লাইন দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে তাঁদের বসানো হচ্ছে নির্দিষ্ট বাসে। জেলায় ফিরে আর এক দফা পরীক্ষার পর তাঁদের যেতে হবে কোয়রান্টিনে। প্রয়োজনে নেওয়া হবে আইসোলেশন বা সারি হাসপাতালে। আবার সীমান্তেই শারীরিক পরীক্ষার সময় করোনার উপসর্গ দেখা দিলেও পাঠানো হবে সারি হাসপাতালে। সীমান্তের নিয়মে সকাল থেকে সন্ধ্যার আগে অবধি বাড়ি ফেরানোর প্রক্রিয়া চলবে। নথিপত্র তৈরি, শারীরিক পরীক্ষা সব মিলিয়ে যা সময় লাগছে তাতে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০-এর বেশি শ্রমিক এ পারে আসতে পারবেন না।
দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা ছাড়াও জেলা পুলিশের ডিএসপি অচ্যিন্ত গুপ্ত, এসএসবি এবং স্বাস্থ্য দফতরের অফিসারেরা বুধবার সকাল থেকে সীমান্তে ছিলেন। এ দিন রাত অবধি সীমান্তের ওপারে কয়েক হাজার শ্রমিক জড়ো হয়েছেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, নেপালের ইটভাটার মালিকেরা ভারত থেকে দক্ষ শ্রমিক নেন। অনেকে টানা ৭-৮ বছর কাজ করছেন। মার্চের পর থেকে মজুরি বন্ধ হতেই সমস্যা শুরু হয়।