ফাইল চিত্র।
রাজ্য সরকারের লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের ফলে ঘরে বসে হাতে টাকা পাওয়ায় ছোট ছোট হাতের কাজে আগ্রহ হারাচ্ছেন মহিলারা। যার জেরে কর্মীর অভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে জেলার বিভিন্ন এলাকার বিড়ি মালিকরা, সুপারি চাতালের মালিকরা এবং বাঁশের খাঁচা ও টুকরি ব্য বসায়ীরা। এমনকি লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প আরম্ভ হওয়ার পরে ঠোঙার জোগান কমে গিয়েছে বলে অভিযোগ আলিপুরদুয়ার শহরের বেশ কিছু ব্যবসায়ীর।
মহিলাদের একাংশ জানাচ্ছেন, বিড়ি বাধা বা বাঁশের জিনিস তৈরির মতো হাতের কাজে সময় ও পরিশ্রম দুটি’ই লাগে বেশি। কিন্তু আয় হয় নামমাত্র। সংসারেও সময় দিতে পারেন না তাঁরা। ঝুঁকি নিয়ে দা দিয়ে সুপারি কাটা বা খাঁচা ও টুকরি বোনার কাজে অনেক পরিশ্রম করেও সেভাবে রোজগার হয় না। একই অবস্থা বিড়ি শ্রমিকদেরও। এক হাজার বিড়ি বাধার পরে পাওয়া যায় ১০৫ টাকা। ফলে গোটা মাসে যা রোজগার হয়, এখন সেই সংখ্যার কাছাকাছি টাকা লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। অনেকেই চাতাল খুলে সুপারি তোলার কাজের মহিলার অভাবে চাতাল ছোট করতে বাধ্য হচ্ছেন। বাঁশের কাজের সঙ্গে যুক্ত দময়ন্তী রায় বলেছেন, ‘‘খাঁচা এবং টুকরি তৈরি করে কিছু রোজগার হত। এখন লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের ১০০০ টাকা পেয়ে সেই কাজ ছেড়ে দিয়েছি।’’ সুপারি তোলায় যুক্ত অলকা ঘোষের মুখেও এক কথা, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের টাকা পেয়ে আমি এবং আমার মত অনেক মহিলাই উপকৃত। পরিশ্রম অনেক কমেছে। আমি ধন্যবাদ জানাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।"
এ দিকে আবার কর্মীর অভাবে লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছে মালিকপক্ষ। যেমন, সুপারি ব্যবসায়ী সুশীল সাহার আক্ষেপ, ‘‘সুপারি তোলার কাজের মহিলার অভাবে চাতালের কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। এমনকি আগের তুলনায় মজুরি অনেকটা বাড়ানোর পরেও সেই কাজে আগ্রহ নেই মহিলাদের।’’ ব্যবসায়ীদের অনেকেই জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তে চাতাল ছেড়ে মহিলাদের বাড়িতে বাড়িতে সুপারি তোলার জন্য সুপারি পৌঁছে দেওয়ার পরেও পাওয়া তাঁরা কাজ করতে রাজি হচ্ছেন না। ফলে ব্যবসা মার খাচ্ছে।
একই সমস্যায় বিড়ি ব্যবসায়ীরাও। তালেশ্বরগুড়ি এলাকার ভজন সরকারের কথায়, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প আরম্ভ হওয়ার পরে মহিলাদের বিড়ি বাঁধার কাজে আগের মতো পাওয়া যাচ্ছে না। এই মুহূর্তে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী বিড়ির জোগান দিতে পারছি না, ফলে ব্য বসা লোকসানের মুখে।’’ বাঁশের খাঁচা এবং টুকরি ব্যবসায়ী বাবুল দেবনাথের গলাতেও এক সুর। তিনি বলেন, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প আরম্ভ হওয়ার পরে আগের তুলনায় অনেকটাই বাঁশের খাঁচা, টুকরি কম তৈরি হচ্ছে গ্রাম্য এলাকায়। লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের পাঁচশো এবং এক হাজার টাকা পেয়ে মহিলারা কাজে আগ্রহ হারিয়েছেন। ফলে ব্যবসা লোকসানের মুখে।’’